বৃহস্পতিবার, ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৫:৩২:১৩

সংকটের সমাধান খুঁজছে বিএনপি!

সংকটের সমাধান খুঁজছে বিএনপি!

নিউজ ডেস্ক : ভোটের ময়দানেই রাজনৈতিক সংকটের সমাধান খুঁজে পেতে চাইছে বিএনপি। তাই তিক্ত অভিজ্ঞতা থাকার পরও রাজনৈতিক নানা সমীকরণে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আবারো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ৬৬ দিন পর দেশে ফিরে দল ও জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে দলীয় প্রতীকেই আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দল পুনর্গঠন, সারাদেশে ঝিমিয়েপড়া নেতাকর্মীদের চাঙ্গাসহ রুদ্ধশ্বাস বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নির্বাচনের মাধ্যমেই বেরিয়ে আসতে চাইছে বিএনপি। যদিও বিএনপি পৌরসভা নির্বাচনে শেষপর্যন্ত ভোটের ময়দানে থাকতে পারবে কি-না তা নিয়ে খোদ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেই সংশয় রয়েছে। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে বিএনপির নির্বাচন পেছানোর দাবি নাকচ করে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি বন্ধসহ নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টিতেও নির্বাচন কমিশনের পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না বিএনপি। বিএনপির একাধিক নীতি নির্ধারক জানান, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাদের প্রধান দাবি নতুন জাতীয় নির্বাচন আদায়ে রাজপথের কর্মসূচিতে ফেরা সম্ভব নয়। গ্রেপ্তার, মামলা ও নির্যাতনে দলের সাংগঠনিক কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই অবস্থায় ভবিষ্যৎ আন্দোলন নিয়ে ধীরে চলাই ভালো। রাজনৈতিক এসব সমীকরণ বিবেচনায় নিয়েই পৌরসভার নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেই তারা দলের পনুর্গঠন, নতুন নির্বাচন আদায়ের কর্মকৌশলকে এগিয়ে নিতে চান। শেষপর্যন্ত তারা ভোটের ময়দানেও থাকতে চান। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের আচরণের ওপর। আগামী ৩০ ডিসেম্বর সারাদেশের ২৩৬টি পৌরসভায় একযোগে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আর প্রথমবারের মতো এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে নতুন আইনে দলীয় প্রতীকে। মেয়র পদে প্রার্থীরা তাদের দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। দলীয়ভাবে মেয়র পদে মনোনয়ন দিতে হবে। গত ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি ও তার জোটের শরিকরা। প্রথমে নির্বাচন প্রতিহত ও পরবর্তীতে নতুন নির্বাচন আদায়ের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সহিংস আন্দোলন শুরু করে। লাগাতার হরতাল-অবরোধের কর্মসূচির ডাক দেয়। আন্দোলন চলাকালীন গত মার্চে সরকারবিরোধী লাগাতার হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি স্থগিত করে বিএনপি ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি করপোরেশনে অংশগ্রহণ করে। যদিও ভোটের দিন ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে দলটি নির্বাচন বয়কট করে প্রায় টানা দুই মাসের সহিংস আন্দোলনেও দলটি তাদের দাবি আদায় করতে পারেনি। উল্টো মামলার জালে বন্দি হয়ে পড়েছেন দলের শীর্ষ নেতারা। মামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ঘরছাড়া। এই অবস্থার মধ্যেই চিকিৎসার জন্য ব্যক্তিগত সফরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গত ১৬ সেপ্টেম্বর লন্ডনে যান। এরপর থেকে তার দেশে ফেরা নিয়ে সৃষ্টি হয় নানা গুঞ্জন। নানা গুঞ্জনের মধ্যেই গত ২১ নভেম্বর দেশে ফিরে আসেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এরমধ্যেই সরকার আইন সংশোধন করে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন করার উদ্যোগ নেয়। ২৩৬টি পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। দেশে ফিরে দুইদিন বিশ্রামে থেকে খালেদা জিয়া দলের সর্বশেষ পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ করতে দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক ডাকেন। গত বুধবার তার গুলশান কার্যালয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। সেখানে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনসহ ভবিষ্যত রাজনীতির করণীয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়। দলের প্রায় সব নেতাই পৌরসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার পক্ষে মতামত দেন। এরপর দিন খালেদা জিয়া ২০ দলীয় জোটের শরিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেই পৌরসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। জোটগতভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টিও চূড়ান্ত হয়। বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে দলের মেয়র প্রার্থীদের প্রত্যয়নপত্র দেয়ার ক্ষমতা দলের যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহানকে দেয়া হয়। একটি সূত্র জানায়, বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যেই নির্বাচনী এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। ভোটের ময়দানেই সরকারকে আরেকবার মোকাবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একইসঙ্গে ২৩৬টি পৌরসভায় ২০ দলীয় জোটের মেয়র প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করেছেন। জানা গেছে, সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা, সাবেক সংসদ সদস্য, পৌর মেয়র এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতাদের মতামতের ভিত্তিতেই কেন্দ্রীয় নেতারা সারাদেশে দলের মেয়র প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করেন। খসড়া তালিকা প্রণয়নে বিএনপির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা কাজ করেছেন। তাদের প্রস্তুতকৃত তালিকা থেকে চূড়ান্তভাবে ২৩৬টি পৌরসভায় দলীয় মেয়র প্রার্থীদের মনোনয়ন দেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে সব সময় নির্বাচনে বিশ্বাসী। কিন্তু নির্বাচনী পরিবেশ ও পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি তাদের। সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন আদায়ের লক্ষেই তারা সংগ্রাম করছেন। তিনি জানান, দল পুনর্গঠন, নতুন নির্বাচন আদায়ের দাবি সব কিছুকে সামনে নিয়েই তারা পৌরসভা নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, দলীয় মেয়রপ্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। তবে বর্তমানে যেভাবে সারাদেশে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, এই পক্রিয়া অব্যাহত থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। সত্যিকারের ভোট চাইলে নির্বাচন কমিশনকে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। অতীত নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ভালো না থাকার পরও গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। খবর পূর্ব-পশ্চিম ডটকম। ০৩ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে