শুক্রবার, ০৪ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১১:১৩:৫০

বিদ্রোহের আগুনে জ্বলছে

বিদ্রোহের আগুনে জ্বলছে

নিউজ ডেস্ক : আসন্ন পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে কম বেশী সব দলই বিদ্রোহের আগুনে জ্বলছে।আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতা দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ‘বিদ্রোহী’ হিসেবে নির্বাচনের মাঠে নেমে পড়েছেন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এমন অন্তত ৭০ জন বিদ্রোহী প্রার্থীর কথা জানা গেছে। বিএনপিতে এই সংখ্যা ৫২। তবে বিএনপি বলছে, এরা বিদ্রোহী নয়, ডামি। কৌশলগত কারণেই তারা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২৩৪টি পৌরসভায় অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। দুই বড় দলের প্রার্থীরা শেষ সময়ে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা ৪৮ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের ৭০ জন বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকটি পৌরসভায় বিদ্রোহীদের তালিকায় স্থানীয় সংসদ সদস্যদের ভাইও রয়েছেন। বিদ্রোহ প্রতিবাদে রূপ নেওয়ায় বরগুনার বেতাগী পৌরসভার প্রার্থী শেষ মুহূর্তে বদল করেছে আওয়ামী লীগ। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য ও আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া ১৪ পৌরসভায় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের পরিবারের সদস্যরা মনোনয়ন পেয়ে প্রার্থী হয়েছেন। অবশ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, ১৩ ডিসেম্বরের পর আওয়ামী লীগের কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে না। ওই দিন প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। গতকাল দলীয় সভাপতির ধানমন্ডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছু স্থানে স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন কৌশলগত কারণে। কারণ, নির্বাচন কমিশনের যাচাই-বাছাইয়ে যদি কোনো স্থানে দলের মনোনীত প্রার্থী বাদ পড়েন, তাহলে শূন্যতা তৈরি হবে। এ জন্যই কিছু প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে আছেন। আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, বিএনপি শেষ মুহূর্তে নির্বাচন বর্জন করলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না। তখন বিদ্রোহী প্রার্থীরাই মাঠ গরমে কাজে লাগবে। চুয়াডাঙ্গার দর্শনাতে স্থানীয় সাংসদ আলী আজগারের ভাই পৌর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আলী মনসুর আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এই পৌরসভায় দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে দর্শনা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমানকে। আলী মনসুর বলেন, ৫৮ সদস্যের পৌর কমিটির ৩৮ সদস্য তার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। এ জন্য তিনি প্রার্থী হয়েছেন। নোয়াখালীর চৌমুহনী পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী দুজন। এখানে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বতর্মান মেয়র আক্তার হোসেন ওরফে ফয়সল। সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদের বড় ভাই খালেদ সাইফুল্লাহ স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আজিজুল বাসার। মাদারীপুরের কালকিনিতে তৃণমূলের পছন্দের প্রার্থীকে মনোনয়ন না দেওয়ায় গণপদত্যাগ করেছেন উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতারা। এই পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে এনায়েত হাওলাদারকে। তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের পছন্দের। তৃণমূল আওয়ামী লীগ উপজেলা সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদের নাম প্রস্তাব করেছিল। এনায়েতের নাম তৃণমূল থেকে পাঠানোই হয়নি। রাজবাড়ীর পাংশাতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী দুজন। বর্তমান মেয়র ওয়াজেদ আলী মন্ডল ও তার ভাই ইদ্রিস আলী মন্ডল দুজনই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ওয়াজেদ মন্ডল পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি। আর ইদ্রিস যুবলীগের নেতা ছিলেন। এই পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আবদুল আল মাসুদ। বিএনপিতে বিদ্রোহী যারা ৪০টি পৌরসভায় বিএনপির ৫২ জন ‘বিদ্রোহী’ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর বেশির ভাগই বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত। গতকাল শেষ মুহূর্তে ঢাকার সাভার পৌরসভায় দলীয় প্রার্থী বদল করেছে বিএনপি। বর্তমান মেয়র রেফাত উল্লাহ নির্বাচন করতে রাজি না হওয়ায় সেখানে বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামানকে প্রার্থী করা হয়েছে। রাজবাড়ী পৌরসভার বর্তমান মেয়র মো. তোফাজ্জেল হোসেন বিএনপির মনোনয়ন পাননি। পেয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপিত আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মের ছেলে অর্নব নেওয়াজ মাহমুদ। জানা গেছে, রাজবাড়ী উপজেলা ও পৌর বিএনপি মেয়র পদে তোফাজ্জেল হোসেনের নাম সুপারিশ করে কেন্দ্রে পাঠিয়েছিল। কেন্দ্র তার নাম চূড়ান্ত করে প্রত্যয়নপত্রও প্রস্তুত করে। কিন্তু বুধবার মধ্যরাতে তা পাল্টে যায়। এ তৎপরতা টের পেয়ে বুধবার দুপুরে বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে আলী নেওয়াজ খৈয়মের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও করে দলের একটি অংশ। রাজশাহীর আড়ানী পৌরসভায় তৃণমূলের সুপারিশ ছিল পৌর বিএনপির আহ্বায়ক ও বর্তমান মেয়র নজরুল ইসলামের জন্য। কিন্তু কেন্দ্র মনোনয়ন দিয়েছে সাবেক সভাপতি তোজাম্মেল হোসেনকে। গুলশান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি বুঝতে পেরে প্রত্যয়নপত্র সংশোধনের কথা বলে তোজাম্মেলকে আবার চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ডাকা হয়। কিন্তু বিষয়টির আঁচ পেয়ে তোজাম্মেল আর আসেননি। কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভায় প্রার্থী করা হয় যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান কে এম আই খলিলকে। কিন্তু দলের স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার পছন্দ ছিল পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল আমিন সরকার। তাকে মনোনয়ন দিতে ওই নেতা গুলশান কার্যালয়ে একটি চিরকুটও পাঠান। কিন্তু ততক্ষণে খলিল প্রত্যয়নপত্র নিয়ে গেছেন। এ অবস্থায় প্রত্যয়নপত্র বিলির দায়িত্বে থাকা নেতারা নুরুল আমিনকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নেন। এ খবর জেনে খলিলকে মুঠোফোন বন্ধ করে বাসায় না থাকার পরামর্শ দেন আরেক নেতা। এ যাত্রায় রক্ষা পান খলিল। বিদ্রোহীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী পার্বত্য জেলার রাঙামাটি পৌরসভায় বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সাইফুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে লড়তে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র কিনেছেন রবিউল ইসলাম। বীরগঞ্জে দলীয় প্রার্থী আমিরুল বাহারের বিরুদ্ধে লড়ছেন উপজেলা যুবদলের সভাপতি মো. আসাদুল ইসলাম। ভোলা সদরে হারুন অর রশিদের বিপক্ষে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি খন্দকার আল আমিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় মো. মন্তাজ মিয়ার বিপক্ষে উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি জয়নাল আবেদীন, কুমিল্লার হোমনায় আবদুল লতিফের বিরুদ্ধে উত্তর জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হানিফ মিয়া ও উপজেলার সহসভাপতি মো. আলমগীর সরকার, কুষ্টিয়া সদরে কুতুব উদ্দিন আহমদের বিপক্ষে উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি বশিরুল আলম ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শামীম উল হাসান, মিরপুরে আবদুল আজিজ খানের বিরুদ্ধে উপজেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম ফারুক চৌধুরী, তার স্ত্রী নাসরিন ফেরদৌস ও ওয়ার্ড সভাপতি মিজানুর রহমান, ভেড়ামারায় জোট প্রার্থী (জাতীয় পার্টি, কাজী জাফর) মহিউদ্দিন বানাতের বিপক্ষে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ও যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম রেজা, খোকসায় রাজু আহমদের সঙ্গে আনিসুজ্জামান, চুয়াডাঙ্গা সদরে খন্দকার আবদুল জব্বারের বিরুদ্ধে জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক মজিবুল হক মানিক, দর্শনায় মহিদুল ইসলামের সঙ্গে পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নাহারুল ইসলাম। কুড়িগ্রামের উলিপুরে তারিক আবুল আলা চৌধুরীর বিপক্ষে আবদুর রাজ্জাক, বগুড়ার শিবগঞ্জে মতিয়ার রহমানের বিপক্ষে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম, হবিগঞ্জ সদরে জি কে গউছের বিরুদ্ধে পৌর বিএনপির সভাপতি আমিনুর রশীদ ও জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি এম ইসলাম তরফদার, চাঁপাইনবাবগঞ্জে আবদুল মতিনের বিরুদ্ধে পৌর বিএনপির সহসভাপতি শাহনেওয়াজ খান, টাঙ্গাইল সদরে মাহমুদুল হকের বিরুদ্ধে জাফর আহমেদ, ভূয়াপুরে আবদুল খালেক মন্ডলের বিপক্ষে জাহাঙ্গীর হোসেন, সখীপুরে নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে ছানোয়ার হোসেন, যশোরের অভয়নগরে রবিউল হোসেনের বিপক্ষে জেলা বিএনপির সদস্য মশিয়ার রহমান, কেশবপুরে আবদুস সামাদ বিশ্বাসের বিপক্ষে আলমগীর কবির, বাঘারপাড়ায় আবদুল হাইয়ের বিপক্ষে আবু তাহের সিদ্দিকী। নাটোরের গুরুদাসপুরে মো. মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে সাবেক মেয়র ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আমজাদ হোসেন, জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে বর্তমান মেয়র আলমগীর হোসেন চৌধুরী, পাবনা সদরে নূর মোহাম্মদের বিপক্ষে বর্তমান মেয়র কামরুল হাসান, সুজানগরে আজম আলী বিশ্বাসের বিপক্ষে কামল হোসেন বিশ্বাস, চাটমোহরে আবদুর রহিমের বিপক্ষে উপজেলা সহসভাপতি আবদুল মান্নান, সাঁথিয়ায় সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে ছাত্রদলের আশিক ইকবাল, মেহেরপুরের গাংনীতে ইনসারুল ইসলামের বিরুদ্ধে আসাদুজ্জামান বাবলু। রাজবাড়ীর পাংশায় চাঁদ আলী বিশ্বাসের বিপক্ষে বাহারাম হোসেন, ফরিদপুরে এনামুল কবিরের বিরুদ্ধে এমদাদুল হক, জয়পুরহাটের কালাইয়ে সাজ্জাদুর রহমানের বিরুদ্ধে পৌর বিএনপির সহসভাপতি আনিসুর রহমান তালুকদার, রাজশাহীর মুন্ডুমালায় ফিরোজ কবিরের বিরুদ্ধে মোজাম্মেল হোসেন, পুঠিয়ায় বাবুল হোসেনের বিরুদ্ধে হাসিবুল ইসলাম ও সাইফুল ইসলাম গতকাল মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তানোরে মিজানুর রহমানের বিপক্ষে বর্তমান মেয়র ফিরোজ সরকার, নওহাটায় রফিকুল ইসলাম বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। চারঘাটে জাকিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে পৌর বিএনপির সভাপতি কাইউম উদ্দিন ও গোদাগাড়ীতে আনোয়ারুল ইসলামের বিরুদ্ধে গোলাম কিবরিয়া বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। চট্টগ্রামের পটিয়ায় তৌহিদুল আলমের বিপক্ষে মোহাম্মদ ইব্রাহিম, রাঙ্গুনিয়ায় হেলালউদ্দিনের বিরুদ্ধে নুরুল আমিন ও রাঙামাটিতে সাইফুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে রবিউল আলম প্রার্থী হয়েছেন। ৪ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে