নিশাতের আরেকটি জয়
ঢাকা : নিশাত মজুমদার গত অক্টোবরের শেষ দিকে পিসাং জয় করার জন্য নেপালে পাড়ি জমান। পরে ২ নভেম্বর নেপালের অন্নপূর্ণা হিমালে ৬ হাজার ফুটের পিসাং পর্বতশৃঙ্গ জয় করেন। সম্পূর্ণ নিজ খরচে তিনি এ পর্বত আরোহণ করেন।
প্রথম নারী এভারেস্টজয়ী নিশাতের শৈশবে স্বপ্ন ছিল বৈমানিক হওয়ার, কখনো ইচ্ছা জাগেনি পর্বতারোহী হওয়ার। তবে প্রথম পাহাড় দেখেই পাহাড়ের প্রেমে পড়েন নিশাত। সেই থেকে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন পর্বত আরোহণের। এরপর বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্র্যাকিং কাবের (বিএমটিসি) প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হকের মাধ্যমে পর্বত আরোহণের সুযোগ পান নিশাত মজুমদার। অ্যাডভেঞ্চারের সঙ্গে নিশাতের পরিচয় অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের এক সংগঠন দলছুটের আয়োজনে নিশাতের পরিচালিত রেক্সোনা চ্যালেঞ্জ অনুষ্ঠানে। স্বেচ্ছাসেবকের কাজের পাশাপাশি কাইম্বিং শিখেছেন তখনই। সে সময় বাংলাদেশের একমাত্র পর্বতারোহণ কাব বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং কাব। ২০০৫ সালের ১১ ডিসেম্বরে প্রথমবারের মতো এ দেশে পালিত বিশ^ পর্বত দিবসে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় খেলার মাঠে জুমার কাইম্বিং করা একমাত্র তরুণী হওয়ার মধ্য দিয়েই নিশাতের সঙ্গে এই কাবের পরিচয়। পরের বছর থেকে বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড কাবের সব আয়োজনের নিয়মিত ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশে প্রথম নারী এভারেস্টজয়ী নিশাত মজুমদার ২০০৩ সালে এভারেস্ট বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়া (৩ হাজার ১৭২ ফুট) কেওক্রাডং জয় করেন। ২০০৬ সালের মার্চে বিশ^ নারী দিবস উপলক্ষে বিএমটিসি আয়োজিত বাংলাদেশের নারী অভিযাত্রী দলের সঙ্গে আবার কেওক্রাডং চূড়ায় ওঠেন তিনি। ২০০৭ সালের মে মাসে বিএমটিসির অর্থায়নে দার্জিলিংয়ের হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে মৌলিক পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে হিমালয়ের মেরা পর্বতশৃঙ্গ (২১ হাজার ৮৩০ ফুট) জয় করেন। একই বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি ভারতের উত্তর কাশীর গঙ্গোত্রী হিমালয়ের গঙ্গোত্রী-১ পর্বতশৃঙ্গে (২১ হজার ফুট) বাংলাদেশ-ভারত যৌথ অভিযানে অংশ নেন। ২০০৯ সালের এপ্রিলে পৃথিবীর পঞ্চম উচ্চতম শৃঙ্গ মাকালুতে (২৭ হাজার ৮৬৫ ফুট) ভারত-বাংলাদেশ যৌথ অভিযানে অংশ নেন। ২০১১ সালের অক্টোবরে বিএমটিসি আয়োজিত হিমালয়ের চেকিগো নামক একটি শৃঙ্গের সফল অভিযানে যান তিনি। ২০১২ সালের ১৯ মে প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে নিশাত এভারেস্ট জয় করেন।
ব্যবসায়ী বাবা আবদুল মান্নান মজুমদার ও গৃহিণী মা আশুরা মজুমদারের চার সন্তানের মধ্যে নিশাত দ্বিতীয়। নিশাত মজুমদারের পুরো নাম নিশাত মজুমদার নিশু। ১৯৮১ সালে ৫ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুরে নিশাতের জন্ম। জন্ম লক্ষ্মীপুরে হলেও নিশাতের বেড়ে ওঠা ঢাকায়। নিশাত ফার্মগেটের বটমূলী হোম উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, শহীদ আনোয়ার গার্লস কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা সিটি কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। নিশাত মজুমদার বর্তমানে ঢাকা ওয়াসায় হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।
৫ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ