কুড়িয়ে শখ পূরণ
নিউজ ডেস্ক : চিরিরবন্দর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে ঝরেপড়া ধান কুড়ানো ও ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান বের করার কাজে ব্যস্ততায় দিন অতিবাহিত করছেন হতদরিদ্র পরিবারের নানা বয়েসী মানুষ। যাদের নিজস্ব জমি নেই কিংবা কোনো জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেননি তারাই এসব ধান কুড়িয়ে তাদের শখ বা আশা পূরণ করে থাকেন।
দিনাজপুরের বিভিন্ন উপজেলায় আমন ধান কাটা মৌসুমে এরকম দৃশ্য চোখে পড়ে। স্কুল ছেড়ে গ্রামের গরীব ছেলেমেয়েরা ধান কুড়িয়ে তাদের শখ মিটায়।
চলতি আমন মৌসুমে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হওয়ায় তাদেরও উৎসব শুরু হয়েছে। কোথাও কৃষক ক্ষেত থেকে তার ধান কেটে নেয়ার পর ফসলের মাঠ জুড়ে পড়ে রয়েছে ধান গাছের গোড়ালি যা স্থানীয় ভাষায় নাড়া বলা হয়। গোড়ালির ফাঁক দিয়ে রয়েছে ঝড়ে পড়া সোনালি ধান, অথবা শীষ। কীটপতঙ্গের আক্রমণে অনেক ক্ষেতে ধানের শীষের শাখা-প্রশাখা ভেঙে মাটিতে পড়েছে। গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের বউ-ঝি এবং ছেলেমেয়েরা দল বেঁধে সেই ধান কুঁড়িয়ে নিচ্ছেন।
কেউ হাতে ডালি, চাইলন/চালুন, কারো হাতে বাশিলা, ঝাঁটা আবার কেউ হাতে ব্যাগ নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন। অনেকের কাঁধে কোদাল আর কারো হাতে শাবল রয়েছে। তাদের অনুসন্ধানী দৃষ্টি কেবল ধানক্ষেতের নাড়ার ফাঁক দিয়ে মাটির দিকে ইঁদুরের কেটে নিয়ে যাওয়া ধান। ইঁদুরের গর্ত কিংবা ঝড়ে পড়া ধান দেখলেই ওদের চোখে-মুখে সোনালি হাসি ফুটে ওঠে। ইঁদুর কৃষকের ক্ষেত থেকে ধানের শীষ কেটে নিয়ে আপদকালীন খাদ্য হিসেবে মাটির নিচে গর্তে মজুদ করে রাখে। ধান কুড়ানিরা সেই গর্ত খুঁড়ে ইঁদুরের খাদ্য বের করে নেয়।
এছাড়া মাটি থেকে একটি একটি করে ধান কুঁড়িয়ে মুঠোয় করে ডালায় ভরে। মৌসুমের পুরো সময়টায় তারা এভাবেই ধান কুড়াচ্ছে। এ কাজের সঙ্গে গ্রামের অভাবী-হতদরিদ্র পরিবারের লোকজন জড়িয়ে পড়েছেন। তারা প্রত্যেকে দৈনিক ২/৫ কেজি করে ধান সংগ্রহ করছেন।
উপজেলার মাহাদানী গ্রামের মুন্নিবালা (৫৫) ও তার স্বামী হরিপদ রায় (৬২) বলেন, তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে আমাদের পরিবার। পুরো বছরে চাল কিনে ভাত খাই। আমরা গরীব মানুষ। আমরা খাস জমিতে বাড়ি করে বসবাস করছি। এ মৌসুমে প্রতিদিন দু’জনে মিলে ১০/১২ সের ধান পাই। এ দিয়েই আমাদের সারা বছর চলতে হয়। এরপরেও এখন পিঠা খাবার শখ হয়, ধান পামো কোনঠে। তাই এই সময় আসলে ধান খুঁটি।
তারাই শুধু ধান খোঁটেন তা নয়, তার মতো অন্য ধান কুড়ানি, ছোট-ছোট ছেলেমেয়েরা একই কথা জানান। আবার অনেক ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করার জন্যও ধান খুঁটে থাকেন।
৭ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ