মঙ্গলবার, ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৩:২৩:৩৯

চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা

চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা

মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নু : পৌরসভা নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ঘিরে থাকবে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে তিন স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। র‌্যাব, পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে। ভোট গ্রহণের দু’দিন আগে থেকেই নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পৌর নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর অংশ হিসেবে ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৩৫টি নির্বাচনী এলাকায় অস্ত্রধারী ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে শুরু হচ্ছে পুলিশের বিশেষ অভিযান। এসব এলাকায় ২০ ডিসেম্বর থেকে যৌথ অভিযানে নামবে সংশ্লিষ্ট বাহিনী। জঙ্গি ও জামায়াত-শিবিরের নাশকতার আশংকায় খুলনা, রাজশাহী, রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের বেশকিছু জেলায় কঠোরভাবে এ অভিযান চালানো হবে। এরই মধ্যে সারা দেশে সন্ত্রাসী ও অবৈধ অস্ত্রবাজদের তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকা তৈরির জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দফতর ও ইসি’র কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইজিপি একেএম শহীদুল হক সোমবার বলেন, পৌর নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও পেশিশক্তিমুক্ত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যে কোনো ধরনের সহিংসতা মোকাবেলায় নির্বাচন কমিশনের চাহিদা ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। যাদের কারণে নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্নিত হতে পারে পুলিশ এমন পেশাদার ও চিহ্নিত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনবে। জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা বাড়ানো হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নির্বাচনের সময় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিপুল সংখ্যক বিজিবি এবং উপকূলীয় এলাকাগুলোতে কোস্টগার্ড মোতায়েন করা হবে। পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের ছুটি (বিশেষ কারণ ছাড়া) বাতিল করা হচ্ছে। ভীতিমুক্ত নির্বাচন করতে এক সপ্তাহ আগে সংশ্লিষ্ট এলাকার বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র থানায় জমা দেয়ার নির্দেশনা আসতে পারে। রীতি অনুযায়ী এক সপ্তাহ আগে অর্থাৎ ২৩ ডিসেম্বর বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র জমা নেয়ার কথা। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, আসন্ন পৌর নির্বাচনে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেয়ার পরিবর্তে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রদর্শনের নিষেধাজ্ঞাসহ বেশ কিছু শর্ত আরোপের চিন্তা-ভাবনা চলছে। তবে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৯ ডিসেম্বর ইসির সঙ্গে আইন-শৃংখলা বাহিনীর আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগেই সদর দফতর থেকে পুলিশের প্রত্যেক রেঞ্জ ডিআইজি ও সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশ সুপারদের (এসপি) কাছে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এর পরপরই সংশ্লিষ্ট এলাকায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। জানা গেছে, পৌর নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশন সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণ করেছে প্রায় একশ’ কোটি টাকা। এর মধ্যে নির্বাচনী কাজে ৪৪ কোটি ৯২ লাখ ৪১ হাজার ৫০০ টাকা এবং আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য ৫৫ কোটি ৭ লাখ ৫৮ হাজার ৫০০ টাকা। নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার, এপিবিএন, কোস্টগার্ড, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এ টাকা পাবেন। তবে পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বরাদ্দকৃত এ টাকা অপ্রতুল বলে দাবি করেছেন। ওই কর্মকর্তার ভাষায়, এত কম বাজেটে বিপুল সংখ্যক আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যয় মেটানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। আগামী ১৯ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বরাদ্দকৃত টাকা বৃদ্ধির বিষয়টি উত্থাপন করা হবে বলে ওই কর্মকর্তা জানান। ইসি সূত্র বলেছে, এবার পৌর নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে না- এমন ইঙ্গিত থেকে এবার বাজেটে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব করেনি নির্বাচন কমিশন। দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে পৌরসভার মেয়র নির্বাচন হবে ৩০ ডিসেম্বর। একই দিন নির্দলীয়ভাবে কাউন্সিলরও নির্বাচিত হবে। সারা দেশে ২৩৪টি পৌরসভার মোট ৩ হাজার ৫৮২টি কেন্দ্রে একযোগে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগের দিন থেকে কেন্দ্র ছাড়াও সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত থাকবে। নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক বলেন, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আগামী ১৯ ডিসেম্বর আইন-শৃংখলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসারদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে ইসি। তিনি জানান, নির্বিঘ্নে পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বৈঠকে আলোচনার জন্য ৬টি এজেন্ডা নির্ধারণ করা হয়েছে। এজেন্ডাগুলো হচ্ছে প্রাক নির্বাচনী আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা। নির্বাচনপূর্ব শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে করণীয় নির্ধারণ। সন্ত্রাসী, মাস্তান ও চাঁদাবাজদের গ্রেফতার এবং তাদের দৌরাত্ম্য রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ। নির্বাচনী কার্যক্রম গ্রহণ এবং নির্বাচনী দ্রব্যাদি পরিবহন ও সংরক্ষণে নিরাপত্তা বিধান। নির্বাচনী আইন এবং আচরণবিধিসহ বিভিন্ন নির্দেশনা সুষ্ঠুভাবে পরিপালনের পরিবেশ সুগম করা এবং ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা-বিষয়ক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ। ওই সভায় সব রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, পুলিশ, বিজিবি, আনসার, এনএসআই, ডিজিএফআই, ডিবি ও কোস্টগার্ডসহ সব বাহিনীর প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, পৌরসভা নির্বাচন সামনে রেখে মঙ্গলবার পদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে পুলিশ সদর দফতরে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আইজিপি একেএম শহীদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে একাধিক অতিরিক্ত আইজিপি, কয়েকজন রেঞ্জ ডিআইজি, অনেক জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) ছাড়াও র‌্যাবসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের পদস্থ কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে জঙ্গিবাদ দমনের পাশাপাশি আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়। এ সময় নির্বাচনের পূর্বাপর বিষয়ে ডিআইজি ও এসপিদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন আইজিপি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন কর্মকর্তা বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিলে ৯ ডিসেম্বর থেকে প্রচারণা শুরুর কথা থাকলে মূলত ১৩ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর থেকেই নির্বাচন পুরোদমে জমে উঠবে। অনেক প্রার্থী তাদের পক্ষে কাজ করাতে সন্ত্রাসী ও অস্ত্রবাজদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা চালাবে। এ কারণে ১৫ ডিসেম্বর থেকে একযোগে সারা দেশে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে অভিযান শুরুর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। দল-মত নির্বিশেষে এ অভিযান চালানো হবে বলে দাবি করেন ওই কর্মকর্তা। এরই ধারাবাহিকতায় প্রত্যেকটি নির্বাচনী এলাকার সন্ত্রাসী ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রধারীদের তালিকা হালনাগাদ করতে সংশ্লিষ্ট রেঞ্জের ডিআইজি ও এসপিদের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া পৌর নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করার জন্য থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও পুলিশের বিশেষ শাখাকে (এসবি) নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নও (র‌্যাব) সারা দেশে তাদের তৎপরতা বাড়িয়েছে। তালিকাভুক্ত ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা যাতে নাশকতা চালিয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করতে না পারে সেজন্য র‌্যাবের গোয়েন্দা ইউনিটও কাজ করছে। নির্বাচনী এলাকার প্রত্যেকটি থানা ও জেলায় তারা খোঁজখবর নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান যুগান্তরকে বলেন, এ মুহূর্তে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে পেশাদার অপরাধী, নাশকতাকারী, অবৈধ অস্ত্রধারীদের গ্রেফতারের বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ভোটার ও প্রার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আইন-শৃংখলা বাহিনীর অন্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান। -যুগান্তর ০৮ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে