মঙ্গলবার, ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৩:৩৩:৩৬

বিএনপিকে ছাড় দেবে না জামায়াত!

বিএনপিকে ছাড় দেবে না জামায়াত!

আনু মোস্তফা, রাজশাহী থেকে : উত্তরের ১০ পৌরসভায় জোট তথা বিএনপির অনুরোধে দলীয় প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবে না জামায়াত। দলের নির্ধারিত প্রতীক ছাড়াই জামায়াত এই চার পৌরসভায় স্বতন্ত্র নামে তবে দলীয়ভাবেই নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গোপনীয়তার স্বার্থে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একাধিক কর্মপরিষদ ও পৌর নির্বাচন সংক্রান্ত গঠিত কমিটির একাধিক সদস্য এ তথ্য জানিয়েছেন। জামায়াত নেতারা বলেছেন উত্তরাঞ্চলের ১৭টি পৌরসভায় তারা প্রার্থী দিয়েছেন এবার। এই ১৭ পৌরসভার মধ্যে ২০১১ সালের পৌরসভা নির্বাচনে ৪টিতে জামায়াতের মেয়র প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিল। এছাড়া অন্যগুলোতে জামায়াত প্রার্থীরা দ্বিতীয় স্থানে ছিল। সেসব পৌরসভায় এবারও জামায়াতের প্রার্থীরা জিতবে- এমন আশা থেকেই সংশ্লিষ্টরা এমন দাবি করেছেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, চলমান পৌরসভা নির্বাচনে দেশের ৪৪টি পৌরসভায় জামায়াত স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী দিয়েছে। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চলের ১৭টি পৌরসভা রয়েছে যেখানে জামায়াতের প্রার্থীরা দলীয় নির্দেশে স্বতন্ত্রভাবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এরই মধ্যে দলীয় নির্দেশে দলটির মেয়র প্রার্থীরা মাঠেও নেমে পড়েছে। পলাতক নেতাকর্মীরাও ভোটের অজুহাতে এলাকায় ঢুকেছে। ভোটের পাশাপাশি সাংগঠনিক কাজও করছে। সূত্র মতে, উত্তরাঞ্চলের যে ১৭টি পৌরসভায় জামায়াত প্রার্থীরা মেয়র পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করে ভোটের মাঠে নেমেছেন তার মধ্যে রাজশাহী জেলার ৪টি পৌরসভাও রয়েছে। এই ৪টির মধ্যে দুটিতে বর্তমানে জামায়াতের মেয়ররাই রয়েছেন। দলীয় সূত্র আরও জানায়, উত্তরাঞ্চলের যে ১৭টি পৌরসভায় জামায়াত প্রার্থী দিয়েছে সেগুলোতে বিএনপির চেয়ে তাদের দলীয় অবস্থান অনেক ভালো। গত পৌর নির্বাচনের ফলাফল বিবেচনা করেই তারা এসব পৌরসভায় নিজেদের প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে। জোটের সঙ্গে আলোচনা করে তারা এসব পৌরসভায় বিএনপির সমর্থন চাইবে। তবে জোটের অন্যতম শরিক বিএনপি যদি এসব পৌরসভায় জামায়াত প্রার্থী তুলে নিতে বলে সেটা তারা মানবে না। জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলে রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও কাটাখালী, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ পৌরসভায় বর্তমানে জামায়াতের মেয়র রয়েছে। যশোরের চৌগাছা পৌরসভায় জামায়াতের মেয়র থাকলেও উত্তরাঞ্চলকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে পৌর নির্বাচনে কৌশল নিয়েছে নিবন্ধন বাতিল হওয়া এই দলটি। জামায়াতের মজলিসে শুরার একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, গত পৌর নির্বাচনে গোদাগাড়ীতে আমিনুল ইসলাম, বীরগঞ্জে মোহাম্মদ হানিফ, কাটাখালীতে মাজেদুর রহমান ও রায়গঞ্জে মোশাররফ হোসেন আকন্দ বিপুল ভোটে জিতেছিলেন। এবারও তারা প্রার্থী হয়েছেন। গত পৌর নির্বাচনে এসব পৌরসভার দুটিতে জামায়াতের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল বিএনপি। উত্তরের এই চারটি পৌরসভা যে কোনো মূল্যে ধরে রাখতে নানান কৌশল নিয়েছে জামায়াত। দলীয় নেতাকর্মীরা যাতে এই চারটি পৌরসভা এলাকায় নির্বিঘ্নে ও কোনো প্রকার হয়রানি ছাড়াই ভোটের মাঠে থাকতে পারে সেজন্য প্রয়োজনে আইন-শৃংখলা বাহিনীকে ম্যানেজেরও চিন্তা রয়েছে জামায়াতের কৌশলের মধ্যে। ওই নেতা বলেন, এই চারটি পৌরসভায় জোট শরিক বিএনপিকে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রয়োজনে বিএনপির কাছে অনুরোধ জানানো হবে এই চার পৌরসভায় বিএনপি যেন তাদের প্রার্থী তুলে নেয়। এই চারটির বাইরে উত্তরাঞ্চলে আরও ৬ পৌরসভা- রাজশাহীর নওহাটা ও মুণ্ডুমালা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, শিবগঞ্জ, নীলফামারীর জলঢাকা ও সৈয়দপুর পৌরসভাতেও বিএনপির প্রার্থীদের ছাড় না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত। উত্তরাঞ্চলে বাড়ি ঢাকা মহানগর জামায়াত নেতা ও পৌর নির্বাচনী কমিটির সদস্য নাম প্রকাশ না করে যুগান্তরকে বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে আতাউর রহমান দু’বার জামায়াতের দলীয় প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি সম্প্রতি জামায়াত ছেড়ে বিএনপিতে গেছেন। এই পৌরসভায় তার চেয়েও যোগ্য প্রার্থী অধ্যাপক নজরুল ইসলামকে প্রার্থী করেছে জামায়াত। এছাড়া শিবগঞ্জে জাফর আলীও দলীয় প্রার্থী হিসেবে একবার মেয়র হয়েছিলেন। এবারও জামায়াত তাকেই প্রার্থী করেছে। শিবগঞ্জে বিএনপির মেয়র শামীম কবীর হেলিম এবার মনোনয়ন পাননি। বিএনপি শফিকুল ইসলাম নামের একজন অখ্যাত নেতাকে মেয়র প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ায় জামায়াত প্রার্থীর জিতে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে সর্বাধিক। ওই জামায়াত নেতার মতে, শিবগঞ্জে আওয়ামী লীগের মনোনীত মঈন খানও সার্বিক বিবেচনায় খুবই দুর্বল প্রার্থী। আওয়ামী লীগের শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় জামায়াতের জাফর আলীর জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়া এই উপজেলায় জামায়াতের উপজেলা চেয়ারম্যান রয়েছে। ওই নেতার মতে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জে বিএনপির প্রার্থীরা কোনোভাবেই জিততে পারবে না। ফলে জামায়াত এককভাবে ভোট করলেও জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি- জোর দিয়ে বলেন এই নেতা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জামায়াতের অন্যতম জোট অংশীদার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি জোটগতভাবেই আলোচনা হবে। সেক্ষেত্রে জামায়াতকে ছাড় দেয়া বা তাদের কাছ থেকে ছাড় নেয়া সেটা আলোচনার পরই সিদ্ধান্ত হবে। প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর এই আলোচনা আসবে। -যুগান্তর ০৮ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে