মঙ্গলবার, ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১০:৫৫:১০

হঠাৎ পাঁচ মিনিট স্তব্ধ নেত্রকোনা

হঠাৎ পাঁচ মিনিট স্তব্ধ নেত্রকোনা

নেত্রকোনা: আজ ৮ ডিসেম্বর, নেত্রকোনা ট্র্যাজেডি দিবস। সকাল ১০টা ৪০ মিনিট বাজার সঙ্গে সঙ্গেই সবাই কাজ ফেলে রাস্তায় নেমে আসে। ঠিক ১০টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত সবাই কাজ ফেলে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। এই পাঁচ মিনিটে শহরের রাস্তায় কোন যানবাহন চলেনি, পথচারীরাও হাঁটেনি। মূলত ২০০৫ সালের ৮ ডিসেম্বরের বোমা হামলায় নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ধর্মান্ধ জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রতি ঘৃণা জানাতেই এ কর্মসূচি। ২০০৫ সালে আজকের দিনে সকালবেলায় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী নেত্রকোনা জেলা সংসদ কার্যালয়ের সামনে চলছিল নেত্রকোনা হানাদারমুক্ত দিবস (৯ ডিসেম্বর) উপলক্ষে কর্মসূচির প্রস্তুতি। এ সময় সেখানে আত্মঘাতী হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন জেএমবি। এতে প্রাণ হারান নেত্রকোনা উদীচীর সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক খাজা হায়দার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সুদীপ্তা পাল শেলি, মোটরসাইকেল মেকানিক যাদব দাস, পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী রানী আক্তার, মাছবিক্রেতা আফতাব উদ্দিন, শ্রমিক রইছ মিয়া, ভিক্ষুক জয়নাল ও আত্মঘাতী হামলাকারী আল বাকি মো. কাফি। আহত হন অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। এ ঘটনা নিয়ে পরে চলে নানা নাটকীয়তা। নিহত যাদব দাসকে বানানো হয় ‘হিন্দু জঙ্গি’। এমনকি তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বলেছিলেন, ‘এটি একটি নিউ ডাইমেনশন। এটি হিন্দু জঙ্গি। উই আর লুকিং ফর শত্রুজ।’ বাবরের এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে চলে যাদবের পরিবারসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর নানা হয়রানি। তারপর গণমাধ্যমকর্মী ও সংস্কৃতিকর্মীরা প্রমাণ করেন, যাদব জঙ্গি নন। একপর্যায়ে বাবর তাঁর ভুল স্বীকার করেন। এদিকে ঘটনার ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও স্বজনহারা পরিবারগুলো এখনো অসহায়ভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এসব পরিবারের জন্য এখনো একবিন্দু সরকারি সাহায্যও মেলেনি। নিহত খাজা হায়দার হোসেনের স্ত্রী শাহনাজ বেগম বলেন, ‘আমার পরিবারে স্বামীই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। কৃষিজমি না থাকায় সন্তানদের লেখাপড়া ও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আজ পর্যন্ত সরকার বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাইনি।’ হামলার ঘটনার পরদিন পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করে। বোমা হামলার মামলায় জঙ্গিনেতা সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাইয়ের স্ত্রী ফাহিমা বেগম ফারজানাসহ তিনজন ও বিস্ফোরক মামলায় ফাহিমাসহ চারজনকে আসামি করা হয়। ফাহিমা হামলায় সম্পৃক্ততার কথা স্বীকারও করেছিলেন। তারপরও ২০০৮ সালে নেত্রকোনার আদালত তাঁকেসহ দুজনকে বোমা হামলার মামলায় খালাস দেন। অন্য দুজনের ফাঁসির রায় হয়। আরেক মামলায় ফাহিমাসহ তিনজনের বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড হয়। খালাস দেওয়া হয় অপরজনকে। বর্তমানে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলা দুটি বিচারাধীন। ৮ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/জুবায়ের/রাসেল

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে