বুধবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৪:৪৬:০০

গ্রেপ্তারের ভয়ে বিএনপি প্রার্থী ঘরবন্দী!

গ্রেপ্তারের ভয়ে বিএনপি প্রার্থী ঘরবন্দী!

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার থেকে : পৌর নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু না হলেও সাভারে প্রার্থীরা বসে নেই। ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা-মহল্লায় চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যক্তিগতভাবে জনসংযোগের কাজ। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম সাভার পৌর নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ বদিউজ্জামান। তিনি এলাকায় বের হচ্ছেন না। গ্রেপ্তারের ভয়ে গা ঢাকা দিয়ে আছেন। প্রত্যেক প্রার্থী উপস্থিত হয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ বদিউজ্জামানের পক্ষ হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন তার চাচা আমিনুর রহমান। দলীয় নেতারা অভিযোগ করেন বদিউজ্জামানের পক্ষ হয়ে তারা জনসংযোগে বের হলে তাঁরাও গ্রেপ্তার হয়ে যেতে পারেন। এই আশঙ্কায় তারাও বের হতে পারছেন না। তাঁরা বলেন, বদিউজ্জামানের অবর্তমানে তার নির্বাচনসংক্রান্ত সব দায়িত্ব বা সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছিলেন তাঁর চাচাতো ভাই অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন। নাজিমকে গত ৫ ডিসেম্বর রাতে সাভার থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। দলীয় নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বদিউজ্জামানের মনোনয়নপত্রটি বাতিলেরও যথেষ্ট চেষ্টা চালিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। গত ৫ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় রিটার্নিং অফিসার সবার সামনে তাঁর সব ধরনের কাগজপত্র ঠিক আছে বলে উলে­খ করেন। তার বিরুদ্ধে কারও কোনো অভিযোগ আছে কি না সবার কাছে রিটার্নিং অফিসার জানতে চাইলে মো. রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি মোহাম্মদ বদিউজ্জামানের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করেছেন বলে মৌখিকভাবে অভিযোগ দায়ের করেন। রিটার্নিং অফিসার তখন জানতে চান কী ধরনের তথ্য গোপন করেছেন তিনি। উত্তরে রফিকুল ইসলাম জানান, সাভার ও কেরানীগঞ্জ মিলে তার বিরুদ্ধে অন্তত ১৩টি মামলা আছে। কিন্তু বদিউজ্জামান মনোনয়নপত্রে মাত্র চারটি মামলা আছে বলে উলে­খ করেছেন। এ সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা তার কাছে কোনো ডকুমেন্ট আছে কি না জানতে চাইলে তিনি কোনো ডকুমেন্ট দিতে পারেননি। এ সময় তিনি একটু সময় চেয়ে লিখিত ডকুমেন্ট নিয়ে আসার কথা জানান। এ অবস্থায় তাকে সময় দেন রিটার্নিং অফিসার। পরে ওই অফিসার সবশেষে বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে রফিকুল ইসলামের মৌখিক অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করেন। পরে কোনো ডকুমেন্টরি অভিযোগ রিটার্নিং অফিসারের হাতে না আসায় এবং সাভার থানার পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না করায় বদিউজ্জামানের মনোনয়নপত্রটি বৈধ্য বলে ঘোষণা করেন। বিএনপি নেতারা বলেন, বর্তমান সাভার পৌরসভার মেয়র ও পৌর বিএনপির সভাপতি রেফাতউল্লাহ প্রথমে দল থেকে কারাগার থেকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নানাবিধ চাপের কারণে তিনি সরে যেতে বাধ্য হন। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ বদিউজ্জামানের হলফনামা থেকে জানা যায়, তাঁর বিরুদ্ধে বর্তমানে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অস্ত্র আইনে সাভার মডেল থানায় মামলা তদন্তাধীন। একই আদালতে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন সাভার থানায় দায়ের করা মামলা তদন্তাধীন। একই আদালতে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের ধারায় সাভার মডেল থানায় মামলা তদন্তাধীন। অতীতে ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দণ্ডবিধিতে কেরানীগঞ্জ থানার মামলাটি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। এদিকে সাভার মডেল থানার ওসি এস এম কামরুজ্জামান বলেন, নাশকতার পরিকল্পনাকালে গত ২৪ অক্টোবর সাভার পৌর এলাকার শাহীবাগ থেকে অস্ত্র, গুলিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গত ৫ ডিসেম্বর রাতে নাজিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। নাজিমের স্ত্রী ফারজানা বেগম বলেন, তার স্বামীকে আটকের কারণ জানতে চাইলে পুলিশ তাঁদের জানিয়েছে, ওপর মহলের চাপ রয়েছে। কিন্তু তাকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা একটি মামলার আসামি করা হয়েছে। অথচ ওই মামলায় আসামি হিসেবে তার নাম ছিল না। এ ছাড়া সাভারসহ অন্য কোনো থানায়ও তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তিনি অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনে ফেল করানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে তার স্বামীকে আটক করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা বলেন, মামলা ও পুলিশি হয়রানির কারণে নির্বাচনে জনসংযোগ করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। এলাকার সাবেক বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বাবু, বর্তমান পৌর মেয়র রেফাতউল্লাহসহ বিএনপির প্রায় সব নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন আবার মামলার ভয়ে অনেকে পলাতক রয়েছেন। জনসংযোগ না করতে পারায় বিএনপির প্রার্থী পিছিয়ে পড়ছেন বলে তিনি উলে­খ করেন।- কালেরকণ্ঠ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে