বুধবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৫:১৮:৪৪

‘বোনেরা তোমরা জেগে উঠো’

‘বোনেরা তোমরা জেগে উঠো’

কেয়া চৌধুরী : বাঙালি মুসলিম নারীকে মানুষ হিসেবে নিজেকে চিনবার, জানবার আহ্বান জানিয়ে যে বিপ্লবী-কলম যোদ্ধা, প্রথমবারের মতো ডাক দিয়ে বলেছিলেন, ‘বোনেরা তোমরা জেগে উঠ’। নারী সমাজকে তার মেধা, প্রজ্ঞা ও অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য দিয়ে বেড়ে ওঠার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, তিনিই তো ... আমাদের আলোকবর্তিকা, পথপ্রদর্শক ‘বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত’। বিদুষী রোকেয়া আঠারো-বিশ শতকের রক্ষণশীল সমাজে, নারীকে যখন গৃহকোণের বস্তু হিসেবে ভাবা হতো। পর্দাপ্রথা নামে নারীকে সমস্ত অধিকার থেকে, পৃথিবীর সকল সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত করা হতো। জড়জীবের মতো গৃহস্থালি কাজে নিয়োজিত রাখা হতো। ঠিক সেই সময় বেগম রোকেয়া দু’নয়ন মেলে, পৃথিবীর সকল সৌন্দর্যকে দেখবার আহ্বান জানিয়ে, গৃহকোণের বাইরেও যে নারীর কর্মক্ষেত্রের একটা বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে, সে চিন্তার দুয়ার খুলে দিয়েছেন। দৃঢ়চেতা রোকেয়া বাঙালি নারী সমাজের শিক্ষাবিস্তার, মুসলিম নারীর ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি, নারীর প্রতি সকল বৈষম্য প্রতিহত করার শক্ত একটি স্তর প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন। তৎকালীন বাঙালি নারী সমাজে বেগম রোকেয়া ছিলেন ব্যতিক্রমী। তার মননশীল ব্যক্তিত্ব মুক্ত চিন্তা প্রকাশ ভঙ্গি তার সময়ের সকলের মাঝে সহজে রোকেয়াকে আলাদা করা যেতো। যদিও তিনি প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন না। ছিল না বড় বড় কোন ডিগ্রি। জমিদার জহির উদ্দিন আবু আলীর ২য় কন্যা, (বর্তমান রংপুরের মিঠাপুকুর থানার পায়রাবন গ্রামের) বেগম রোকেয়া অ-প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন বড় ভাই ইব্রাহীম ছাবের ও বড় বোন করিমুননেছার কাছ থেকে। কতটা মানসিক শক্তি থাকলে, সম্পূর্ণ বিপরীত পরিবেশে স-শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া যায়, রোকেয়াই তার অন্যতম উদাহরণ। বেগম রোকেয়ার সময়ে তিনি ছিলেন, অগ্রগামী চিন্তা ও কর্মউদ্দীপক বিদুষী নারী। তার সমস্ত জীবন দিয়ে সত্য ও সুন্দরকে তিনি আহ্বান জানিয়েছেন। যে কারণে রোকেয়ার সকল সাহিত্য ও কর্মপ্রয়াস নারীজাগরণ ও সমাজ পরিবর্তনের উদ্দীপক হিসেবে কাজ করেছে এবং করছে। অথচ রোকেয়ার সম-সাময়িক সময়ে তার কর্মপন্থাকে বিশেষ করে, পর্দাপ্রথার বিপরীতে আধুনিক সাহিত্য চর্চার প্রতিটি ক্ষেত্রকে তার সময়ের অচল, অনগ্রসর সমাজ ভাল চোখে দেখেনি। হাত বাড়ায়নি সহায়তার। বরং সমালোচনায় মুখর হয়েছে। অসহযোগিতার বেড়াজালে আবৃত করতে চেয়েছে বিপ্লবী নারী রোকেয়াকে। কিন্তু রোকেয়া এতে থেমে যাননি, বরং মানসিক শক্তি নিয়েই বেগম রোকেয়া ‘স্ত্রীশিক্ষা বাধ্যতামূলক আইন’ পাস, নারীর সমঅধিকার, নারীর ভোটাধিকার, বাল্যবিবাহ রোধ ইত্যাদি বিষয়ে জোরালো যুক্তিবাদী মনোভাব পোষণ করে লিখেছেন এবং বক্তব্য প্রদান করেছেন। যা আজ কেবল ইতিহাস। যে ইতিহাস শক্তির উৎস হয়ে আজকের নারীকে, নারীর ক্ষমতায়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। রোকেয়া সাখাওয়াত শিক্ষাকে নারীর ক্ষমতায়নের হাতিয়ার হিসেবে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। স্বদেশী চিন্তার ক্ষেত্র থেকে বিপ্লবী রোকেয়া জাতিগত উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে, সকল কুসংস্কার, অবরুদ্ধ জীবন থেকে বের হয়ে ‘চিন্তার মুক্তির’ আহ্বান জানিয়েছেন। নারীর বৈষম্যের ক্ষেত্রে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার পাশাপাশি নারীর আলস্য ও হীনম্মন্যতাকে দায়ী করেছেন, রোকেয়া। সেই ক্ষেত্রে শুধু অধিকারের সুযোগ থাকলেই হবে না। অধিকার গ্রহণের সাহস থাকতে হবে। এই ক্ষেত্রে দৃঢ় মানসিকতার প্রয়োজনীয়তার তাগিদ দিয়ে রোকেয়া বলেন, ‘মানুষ মুক্তি পেতে পারে শুধু মানুষ হয়ে। আমি চাই প্রতিটি নারী সু-শিক্ষা গ্রহণ করে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে তার অধিকার আদায়ের মধ্য দিয়ে সমাজে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকুক। এই ক্ষেত্রে নারী কারো দয়ায় বা করুণা নিয়ে নয়, নিজের যোগ্যতা-কর্মনিষ্ঠায় শক্ত হয়ে দাঁড়াক’। লেখক: সমাজকর্মী ও সংসদ সদস্য সূত্র : মানবজমিন ০৯ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে