বুধবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৮:২৬:৪২

ফেসবুকে ‘তল্লাশি’ চালিয়ে ভয়ঙ্কর নাশকতার তথ্য উদ্ধার

ফেসবুকে ‘তল্লাশি’ চালিয়ে ভয়ঙ্কর নাশকতার তথ্য উদ্ধার

নিউজ ডেস্ক : সাইবার নিরাপত্তা টিমের সদস্য ও গোয়েন্দারা দাবি করেছেন, তারা বন্ধ থাকা ফেসবুকে তল্লাশি চালিয়ে আগামী ২৫ ডিসেম্বর খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের বড়দিন ও থার্টিফার্স্ট নাইটের অনুষ্ঠানে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনার কথা জেনেছেন। নাশকতার লক্ষ্যে অনলাইনে উগ্রপন্থিদের মধ্যে আলাপ-আলোচনাও চলছিল। এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতীয় দৈনিক সমকাল। এ ধরনের নাশকতা পরিকল্পনায় জড়িত ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপসহ কয়েকটি সামাজিক মাধ্যমের ১০৩টি আইডিও শনাক্ত করা হয়েছে। এসব আইডি থেকে দেশের বিমানবন্দরগুলোতে বোমা হামলার পরিকল্পনা, চট্টগ্রাম ও পার্বত্যাঞ্চলে সংখ্যালঘু স্থাপনায় বোমা বিস্ফোরণের পরিকল্পনার তথ্য আদান-প্রদান চলছিল। পরিকল্পনার ছকটা চলছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মেসেঞ্জারে। বন্ধ থাকা ফেসবুকসহ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সন্দেহজনক আইডিগুলো ট্রাকিং করে এসব তথ্য পেয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ওই আইডি ব্যবহারকারীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টাও চালাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সাইবার নিরাপত্তা টিমের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, শনাক্ত হওয়া ১০৩টি আইডির মধ্যে বেশির ভাগই চট্টগ্রাম, সিলেট ও ঢাকা জেলার বিভিন্ন এলাকা, বিশেষ করে সাভার ও আশুলিয়া থেকে ব্যবহার করা হয়। অবশ্য এসব আইডির বেশির ভাগই ভুয়া নাম-ঠিকানায় পরিচালিত হয়ে আসছে। তবে তাদের আইনের আওতায় নেওয়ার স্বার্থে এদের নাম প্রকাশ করতে চাননি ওই কর্মকর্তা। এসব আইডি থেকে বিনিময় হওয়া তথ্যগুলো বিশ্লেষণ এবং কয়েকটি ঘটনার আগে ও পরের সময় বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এসব আইডি ব্যবহারকারী ধর্মীয় উগ্রপন্থি গ্রুপের সদস্য। এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যেও একটি গ্রুপ নানা পরামর্শ এবং তা বাস্তবায়ন করতে বিভিন্ন আইডিতে নির্দেশনামূলক তথ্য প্রেরণ করার বিষয়টিও নজরে পড়েছে কর্মকর্তাদের। সাইবার নিরাপত্তা টিম ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী নানা পরিকল্পনায় ১০৩টি আইডি সক্রিয় ছিল। যারা প্রতিনিয়ত নিজেদের মধ্যে দেশে বড় ধরনের নাশকতা চালানোর চিন্তাভাবনা ও পরিকল্পনার তথ্যবিনিময় করত। কয়েকটি পেজের মাধ্যমে সরাসরি নানা গুজব ছড়াত, সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ভুল তথ্য ছড়িয়ে উস্কে দিত, যা রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। সাইবার ক্রাইম ইউনিট এসব তথ্য ও আইডি বিশ্লেষণ করে দেখেছে, দেশের বড় কয়েকটি নাশকতার ঘটনার আগে ও পরে বিশেষ একটি গ্রুপ একই কায়দায় তথ্য আদান-প্রদান করেছে। গাবতলী ও আশুলিয়ায় পুলিশ হত্যা, হোসেনী দালানে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিতে বোমা হামলা, বগুড়ায় শিয়া মসজিদে গুলিবর্ষণসহ এ ধরনের ঘটনাগুলোর আগে ও পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাশকতাকারীরা নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করেছে। শনাক্ত হওয়া আইডিগুলোর মধ্য থেকেই বড় কয়েকটি নাশকতার পর দায়েশ ও আল কায়দার নামে দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল বলেও বন্ধ থাকা ফেসবুক আইডি ফিল্টারিং করে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সাইবার নিরাপত্তা প্রকল্পের প্রধান তানভীর হাসান জোহা বলেন, শনাক্ত হওয়া আইডিগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, একটি আইডি থেকে নির্দিষ্ট একটি স্থানে কাউকে থাকতে বলা হচ্ছে। পরের ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ওই স্থানেই নাশকতা হয়েছে। তবে এরা সরাসরি কোনো তথ্য আদান-প্রদান না করে অনেকটা কোড ব্যবহারের মতো তথ্যবিনিময় করে থাকে। জোহা বলেন, সাময়িকভাবে ফেসবুক বন্ধ করে দেওয়ার পর বেশির ভাগ নাশকতাকারী ভিপিএনসহ নানা বিকল্প উপায়ে ফেসবুক ব্যবহার করছে। বিকল্প উপায়ে তা ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে তথ্যবিনিময়ের চেয়ে এই সময়টায় তারা আগের তথ্যগুলো মুছতেই ব্যস্ত ছিল বেশি। যদিও আইডিগুলোতে সাইবার ট্র্যাকিং করে আগের সব তথ্যই সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। এতে পুরনো নাশকতাকারীদের যেমন শনাক্ত করা সহজ হবে, তেমনি আগাম কিছু তথ্য পেয়ে নতুন কয়েকটি নাশকতা পরিকল্পনাও ভেস্তে দিতে পেরেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে ফেসবুকসহ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাময়িক বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে নানা নাশকতায় ক্রিমিনালরা এসব মাধ্যমে মেসেজ আদান-প্রদান করত। যদিও তাদের খুঁজে পাওয়া কষ্টকর ছিল। এসব মাধ্যম সাময়িক বন্ধ করে এ ধরনের ক্রিমিনালদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের যুবসমাজ ফেসবুক ব্যবহার করে ভাবের আদান-প্রদান করলেও এখানে অপরাধীরা এটি সহজেই ব্যবহার করত। ফলে নিরাপত্তার স্বার্থে সামাজিক মাধ্যমগুলো সাময়িক বন্ধ রয়েছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে পুরো বিষয়টি অবহিত করে ক্রিমিনাল শনাক্তে তাদের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। ৯ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে