বুধবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০১:৩৫:২৪

‘বিশ্বে একটি দৃষ্টান্ত’

‘বিশ্বে একটি দৃষ্টান্ত’

ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের নারীদের মুক্তির পথ দেখিয়েছেন বেগম রোকেয়া। পর্দার আড়ালে থেকে তিনি শিক্ষাগ্রহণ করেছেন। সেসময় নারীদের পড়ালেখাকে অপরাধের মতো দেখা হতো তখন তিনি নারী শিক্ষা বিস্তারে এগিয়ে এসেছিলেন। স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি বলেন, রোকেয়া স্বপ্ন দেখেছিলেন মেয়েরা জজ, ব্যারিস্টার হবেন। আজ তার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। বুধবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বেগম রোকেয়া দিবস উদযাপন ও রোকেয়া পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ বাংলাদেশ বিশ্বে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সফল হয়েছে। আজ নারীরা তাদের অবস্থান করে নিতে পেরেছে। যা ছিল বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন।’ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘তৃণমূল থেকে নারী নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্য প্রথমে আমি কাজ শুরু করেছিলাম। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মেয়েদের অংশগ্রহণ শুরু করেছিলাম ৯৬ সালে। তখন অনেকে এটার বিরোধিতা করেছিল।’ তিনি বলেন, ‘৯৬ সালের আগে কোনো মেয়ে সচিব, এসপি, ইউএনও ছিল না। তখন আমি মেয়ে প্রথম সচিব নিয়োগ দিই, প্রথম এসপি বানাই, প্রথম ইউএনও বানাই। বুয়েটে প্রথম নারী ভিসি বানাই আমি। এ কাজটা করা খুব সহজ ছিল না। আমাদের ভিতর থেকে অনেকে এটার বিপক্ষে ছিল। আমিও জিদ ধরে বসে ছিলাম, কীভাবে প্রথম মেয়ে ভিসি দেয়া যায়। শেষ পর্যন্ত মেয়ে ভিসি দিয়েছিলাম আমি। আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন সময়ে নারী উন্নয়নে যেসব কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে আওয়ামী লীগ সরকার অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। প্রায় ২৫টি ক্ষেত্রে সরকার পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে নারীদের ব্যাপক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালাচ্ছে। এতে নারীরা আত্মকর্মসংস্থান প্রক্রিয়ায় স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। ৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পরে নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সরকার জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১ বাস্তবায়ন করছে। পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে তাতে কিছু পরিবর্তন আনে। এরপর আমরা আবার ক্ষমতায় এসে যৌক্তিক দাবিগুলো রেখে নতুন করে পরিবর্তন আনি। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কেবল নারীদের অবস্থানই শক্ত করিনি, মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ পূর্ণ গড় বেতনে ৪ মাস থেকে ৬ মাসে বর্ধিত করা হয়েছে। সন্তানের পরিচয়ের ক্ষেত্রে পিতার নামের পাশাপাশি মায়ের নাম লেখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যের আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে ৫০ এ উন্নীত করা হয়েছে। নারীর প্রতি পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ এবং নারীকে সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। ‘নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে যুগব্যাপী জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (২০১৩-২০২৫) প্রণয়ন করা হয়েছে।’ ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৪ এর খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়েছে। যৌতুক নিরোধ আইন-১৯৮০ সংশোধন করে যৌতুক নিরোধ আইন-২০১৫ প্রণীত হচ্ছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৪০ লাখ নারী শ্রমিক গার্মেন্টসে কাজ করে। দু’দফায় তাদের বেতন সর্বসাকূল্যে শতকরা ২১৯ ভাগ বাড়িয়ে ১৬৬২ টাকা থেকে ৫,৩০০ টাকা করেছি। মহিলা উদ্যোক্তারা পুরুষ উদ্যোক্তাদের থেকে ৫ থেকে ৬ শতাংশ কম সুদে ঋণ পাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ৪০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জেন্ডার বাজেটিং রিপোর্ট প্রণয়ন করা হয়। সরকার ৮টি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল পরিচালনা করছে। ‘দেশের ৬৪টি জেলায় ৪৮৯টি উপজেলার ৪,৫৪৭টি ইউনিয়নে দুঃস্থ মহিলা উন্নয়ন (ভিজিডি) কর্মসূচি চালু রয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) সেপ্টেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত ২৩ হাজার ৮৮৮ জন নারীকে সেবা প্রদান করেছে। ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেল জানুয়ারি ২০১৩ সাল হতে সেপ্টেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত ১৬,১৭৯ জন নির্যাতনের শিকার নারীকে সহায়তা প্রদান করেছে। তিনি বলেন, ন্যাশনাল হেল্পলাইন সেন্টার ১০৯২১ জন যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও বাল্য বিবাহ বন্ধে কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। জাতীয় মহিলা সংস্থার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেল’র কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ন্যাশনাল সেন্টার অন জেন্ডার বেইজড ভায়োলেন্স প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কেন পিছিয়ে থাকবো, বাংলাদেশের মানুষকে উন্নত করে তুলতে চাই। গ্রামের মানুষও যেন উন্নত জীবন পেতে পারে, নাগরিক সুবিধা পেতে পারে, আমরা সেই চেষ্টা করছি। আশা করি, আমাদের মা-বোনরা সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হবে। একই অনুষ্ঠানে দুই বিশিষ্ট নারীকে বেগম রোকেয়া পদক প্রদান করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা ড. তাইবুন নাহার রশীদ এবং ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল এবার বেগম রোকেয়া পুরস্কার পেয়েছেন। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ‘বেগম রোকেয়া পদক ২০১৫’ প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। ৯ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে