বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৪:২৭:০৭

ফেসবুক না খুলতে অভিভাবকদের অনুরোধ!

ফেসবুক না খুলতে অভিভাবকদের অনুরোধ!

ওমর ফারুক : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, তারা ফেসবুক খুলে দিতে আন্তরিক। কিন্তু অভিভাবকরা বলছেন, ফেসবুক বন্ধ হওয়ায় তাদের ছেলেমেয়েরা সুশৃঙ্খল জীবন যাপনে ফিরে এসেছে। তারা পড়াশোনায়ও আগের চেয়ে বেশি মনোযোগী হয়েছে। এ অবস্থায় ফেসবুক না খোলার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চাপ দিচ্ছেন স্কুল-কলেজে পড়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। যদিও ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি হলেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের কোন সংস্থা ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তথ্য বিনিময় করবে, এখন তা-ই ঠিক করা হচ্ছে। গত ১৮ নভেম্বর ফেসবুকসহ আরো কয়েকটি যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেয় সরকার। এরপর গতকাল বুধবার পর্যন্ত তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। এত দিনেও ফেসবুক চালু না করায় অনেকে, বিশেষ করে তরুণরা ক্ষোভ প্রকাশ করছে। এ অবস্থায় গত ৬ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফেসবুকের দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিনিধি বিক্রম লাং এবং দিপালী লিবারহেনের সঙ্গে বৈঠক হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এতে অংশ নেন। এ সময় বিটিআরসি, এনটিএমসিসহ আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা গতকাল জানান, সেদিন বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফেসবুকে অনেকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলে। সেটি ফেসবুকের জানার কথা। এর পরও তারা কেন ভুয়া অ্যাকউন্ট বন্ধ করছে না? কারো কারো ছবি বিকৃত করে আপলোড করা হয় ফেসবুকে, যা সামাজিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব অভিযোগের জবাবে ফেসবুক কর্মকর্তারা জানান, চুক্তি হওয়ার পর তারা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন এবং কোনো অপরাধ যাতে না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখবেন। যে অপরাধ করবে তাকে ধরিয়ে দেওয়ার বিষয়েও তারা সহযোগিতা করবেন। বাংলাদেশের কোন সংস্থা ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে তাদের সঙ্গে কাজ করবে তা জানানোর জন্য বলেন তারা। যে সংস্থা এ দায়িত্বে থাকবে তার সঙ্গে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ রাখবে, তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবে। অন্যদিকে যারা ফেসবুক অপরাধের শিকার হবে তারাও প্রতিকার চেয়ে এ দেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে আবেদন করতে পারবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কয়েক দিন আগে বৈঠকের প্রস্তাব দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ফেসবুকের কর্মকর্তাদের চিঠি দেওয়া হয়। বৈঠকের পর এখন আনুষ্ঠানিক চুক্তি করার প্রস্তাব দেওয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, চুক্তিটি সরকারের সঙ্গে হবে, নাকি কোনো সংস্থার সঙ্গে হবে, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কোন সংস্থাকে সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হবে তা নিয়ে এখন বৈঠক হচ্ছে। সিদ্ধান্ত হওয়ার পরই ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে। ১৫ দিনের মধ্যে চুক্তি হতে পারে বলে আমরা আশাবাদী। চুক্তির পরই ফেসবুক খুলে দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। এখন অভিভাকদের চাপ ও ফেসবুক ব্যবহারকারীদের বিষয়টি চিন্তা করে দেখা হচ্ছে।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফেসবুক খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে আন্তরিক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে অভিভাবকদের চাপের কারণে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে তাদের। রাফিজা রহমান, শাহেলা আক্তার, রাহাত আজিম স্বপ্না সরকার, রাখী গোমেজ, অনিন্দিতা সেন নামের কয়েকজন অভিভাবক সম্প্রতি প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের কাছে চিঠি লেখেন। তাতে তারা লিখেছেন, ‘আমরা মনে করি সরকার ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যম সাময়িক বন্ধের মাধ্যমে বর্তমান সময়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে।’ এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ লোকজনকে আটকে তারা বিকল্প পথে মোবাইল ফোনে ফেসবুক ব্যবহার করছে কি না খতিয়ে দেখছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ ধরনের কোনো নির্দেশ পুলিশকে দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে ডিএমপির (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘কাউকে আটকে মোবাইল ফোনে বিকল্প পথে ফেসবুক চালাচ্ছে কি না তা দেখার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়নি। পুলিশ এমন কাউকে আটকে হয়রানিও করছে না। এগুলো অপপ্রচার।’ -কালেরকণ্ঠ ১০ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে