শনিবার, ০৫ জানুয়ারী, ২০১৯, ০২:২০:৪৮

'বইয়ের সঙ্গে খাতা বিতরণ হোক সরকারের নতুন পদক্ষেপ'

'বইয়ের সঙ্গে খাতা বিতরণ হোক সরকারের নতুন পদক্ষেপ'

নিউজ ডেস্ক: সরকার প্রতিবছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনা মূল্যে প্রায় ৩৫ কোটি বই বিতরণ করছে। এটি একটি মাইলফলক। এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বই উৎসবে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ৩৫ কোটি বই যদি একটার সঙ্গে আরেকটা লাগানো যায়, তাহলে তা দিয়ে পুরো পৃথিবী তিনবার প্রদিক্ষণ করা যাবে। এই অর্জন শুধু বাংলাদেশের পক্ষেই সম্ভব। সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, বিনা মূল্যের বইয়ের সঙ্গে যদি খাতা যোগ হয় তাহলে তা হবে সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপের আরেকটি মাইলফলক।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে জানা যায়, এবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরে চার কোটি ২৬ লাখ ১৯ হাজার ৮৬৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৫ কোটি ২১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮২ কপি বই বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে মোট ২৯৬ কোটি ৭ লাখ ৮৯ হাজার ১৭২টি বই।

আজিমপুর সরকারি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বই উৎসবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘গত ১০ বছর ধরে বছরের প্রথম দিন আমরা বই দিয়ে আসছি, এর কোনো ব্যত্যয় হয়নি। বাংলাদেশ দুনিয়ার একমাত্র দেশ, যেখানে সকল বই বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। জগতে পাঠ্যপুস্তক বিতরণের এমন উদাহরণ আর নেই। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সফল হয়েছে।’

জানা যায়, সরকার প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় করে প্রস্তুত করেছে ‘আমার বই’ এবং লেখার জন্য ‘অনুশীলন খাতা’। ফলে প্রাক-প্রাথমিকে শিক্ষার্থী সন্তোষজনক হারে বেড়েছে। কিন্তু পরের শ্রেণিগুলোয় বিনা মূল্যে খাতা মিলছে না। প্রাথমিক স্তরে ভর্তির হার শতভাগ হলেও পঞ্চম শ্রেণি শেষ করার আগেই ঝরে যায় প্রায় ২০.৮ শতাংশ। অনেক দরিদ্র অভিভাবক খাতাসহ প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ কিনতে না পারায় সন্তানের পড়ালেখা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী ঝরেও যাচ্ছে। একাধিক শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, সরকারের পক্ষ থেকে প্রাক-প্রাথমিক পরবর্তী পর্যায়ে বিনা মূল্যে খাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলে বড় ধরনের ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, বিনা মূল্যে ৩৫ কোটি বই বিতরণ সারা বিশ্বে ভূয়সী প্রশংসিত হয়েছে। ব্যাপক এই অর্জন আরো পরিপূর্ণতা পাবে যদি শিক্ষার্থীদের একই সঙ্গে পড়া এবং লেখার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া যায়। তাঁদের মতে, বই কেবল পঠন, অনুধাবন ও উপলব্ধির বাহন। শিক্ষার্থীদের উপলব্ধি ও অনুধাবন প্রকাশ করতে প্রয়োজন খাতা। লেখাপড়ার মতো ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলোর সঙ্গে প্রত্যাশিতভাবে একাত্ম হলো বই-খাতা। তাই সরকারের শিক্ষা খাতের এই সর্ববৃহৎ অর্জনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে খাতা প্রদান বর্তমান সময়ে খুবই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগামী বছর থেকেই সোয়া চার কোটি শিক্ষার্থীকে প্রতিটি বিষয়ে না হলেও প্রধান কয়েকটি বিষয়ের খাতা প্রদান করা যেতে পারে। পরবর্তী বছর থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে প্রকল্পের আওতায় এনে বিনা মূল্যের খাতা বিতরণ করা যেতে পারে।

এনসিটিবি সূত্রে জানা যায়, খাতা বিতরণের পদক্ষেপ নেওয়া হলেও আর্থিক বিষয় নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। কারণ বর্তমানে বইগুলোয় ব্যবহৃত ২৩০ জিএসএমের বিদেশি আর্টকার্ডের পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত কম জিএসএমের দেশি আর্টকার্ড ব্যবহার করলে সরকারের বিপুল পরিমাণ টাকা বেঁচে যাবে। আর এই খাত থেকেই খাতার জন্য আর্থিক বরাদ্দ সৃষ্টি করা যাবে। এ ছাড়া এনসিটিবির প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান ও দক্ষতার কারণে প্রতিবছর বইয়ের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের একটা অংশ সাশ্রয় হয়। সেই অর্থও খাতা বিতরণে ব্যয় করা যেতে পারে। এ ছাড়া খাতায় ব্যবহৃত প্রচ্ছদের অংশগুলোকে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির কাজেও লাগানো যাবে। ইতিহাস, ঐতিহ্য, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের দ্রুত প্রচারের জন্য খাতার মলাটগুলোকে সহজেই ব্যবহার করা যায়। খাতার মলাটগুলোকে বিশাল ক্যানভাস বানিয়ে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের বিলবোর্ড হিসেবে সহজেই উপস্থাপন করা সম্ভব।

জানা যায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন কাগজের মিলগুলো অত্যন্ত আকর্ষণীয় দামে ও মানে খাতা উৎপাদন ও বিপণন করে থাকে। তাই সরকার যদি বইয়ের সঙ্গে বিনা মূল্যে খাতা বিতরণের পরিকল্পনা করে তাহলে সহজেই তা সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ নানা দেশে অবৈতনিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষা উপকরণও বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়। সরকারের পরবর্তী উন্নয়ন পরিকল্পনায় শিক্ষা বাজেটে এ বিষয়ে নজর দেওয়া যেতে পারে। এর আর্থিক মূল্য অপেক্ষা সরকারের সামগ্রিক অর্জন হবে অনেক বেশি।

শিক্ষাবিদদের মতে, বই উৎসব সত্যিকার অর্থে অর্থবহ করতে হলে ঝরে পড়া থামাতে হবে। আওয়ামী লীগ এবার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রাথমিকে ঝরে পড়া শূন্যে এবং অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ঝরে পড়া পাঁচ শতাংশে নামিয়ে আনার অঙ্গীকার করেছে। এই লক্ষ্য অর্জনে বইয়ের পাশাপশি খাতা বিতরণের বিকল্প নেই। শিক্ষা বিকাশ ও শিক্ষা সম্প্রসারণে নতুন উদ্যোগ বিশ্বব্যাপী নিঃসন্দেহে প্রশংসিত হবে। সরকারও অর্জন করবে নতুন মাইলফলক।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে