বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৮:২৮:৫২

ক্ল্যারিক্যাল মিসটেক

ক্ল্যারিক্যাল মিসটেক

ঢাকা : আইনের দোহাই দিয়ে দলগুলোর অনুরোধ রাখেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পৌর নির্বাচনের বিধিমলায় কাটাছেড়ার সুযোগ নেই জানিয়ে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে ক্ষমতাসীনদের মন্ত্রী-এমপিদের নির্বাচনী প্রচারণায় সুযোগ রাখার প্রস্তাব। বিএনপি এবং জাপার নির্বাচন পেছানোর প্রস্তাবও করা হয়েছে নাকচ। অথচ নিজেদের করা ভুল সংশোধনে এবার সংরক্ষিত করে রাখা সেই বিধিমালাতেই ছুরি চালাবে ইসি। আগামী ১৪ ডিসেম্বরের আগে ভুলগুলো সংশোধন করলে তবেই প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেবেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। নির্বাচন কমিশন অবশ্য এটি নিয়ে খুব একটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত নয়। নির্ধারিত তারিখের আগেই বিধিমালায় থাকা ছোট ছোট ভুলগুলো সংশোধন করে নেয়া যাবে বলে মনে করছেন কমিশন সংশ্লিষ্টরা। এরই মধ্যে সে ঘোষণাও দিয়েছেন ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম। এটিকে ক্ল্যারিক্যাল মিসটেক (করনিক ভুল) হিসেবে অভিহিত করে শিগগিরই তা সংশোধন করা হবে বলে জানান তিনি। তবে বিধিতে কাটাছেড়ায় আইন লঙ্ঘনের বিষয়ে মুখ খুলছেন না কেউই। এর আগে পৌরনির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দেশের প্রধান তিনটি দল একই দিনে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে পৃথকভাবে তাদের প্রস্তাবগুলো জমা দেয়। তারা নিজেদের অবস্থানে থেকে ইসিকে প্রস্তাবগুলো বিবেচনার অনুরোধও করে। সে সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, প্রস্তাব বিবেচনার কোনো সুযোগ এই মুহূর্তে ইসির নেই। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলে বিধিমালায় হাত চালানোর কোনো সুযোগই থাকে না। ইসির বক্তব্য মেনে নিয়ে দলগুলো তাদের অবস্থান থেকে সরে এসে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। এরই মধ্যে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা ও যাচাই-বাছাইয়ের কার্যক্রম শেষ হয়েছে। চলছে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ও আপিল কার্যক্রম। এর মাঝে বুধবার কমিশন থেকে বিধিমালা সংশোধনের ঘোষণা দেয়া হলে দলগুলোর মাঝে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবারই প্রথমবারের মতো মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। এক্ষেত্রে চার ধরনের প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ দিতে হবে। এগুলো হলো- দলীয় মেয়র, স্বতন্ত্র মেয়র, সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও সাধারণ কাউন্সিলর। প্রতীক বরাদ্দের বিধানটি ২০১০ সালের ০৬ অক্টোবর গেজেটে প্রকাশিত নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার ১৯ এর (১) উপ-বিধিতে উল্লেখ করা হয়েছিলো। সেখানে বিধি ১৯ এর উপবিধি (১) এর (ক) দফায় ‘তফিসিল-২’ অনুযায়ী মেয়র পদের প্রতীক, বিধি ১৯ এর উপবিধি (১) এর (খ) দফায় ‘তফসিল-৩’ সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের প্রতীক এবং বিধি ১৯ এর উপবিধি (১) এর (গ) দফায় ‘তফসিল-৪’ অনুযায়ী সাধারণ কাউন্সিলর পদের প্রতীক বরাদ্দের বিধান রাখা হয়। এরপর বর্তমান কমিশন চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি সেই বিধি সংশোধন করে। এক্ষেত্রে মেয়র পদের জন্য ‘তফসিল-২’ প্রতিস্থাপন করে ১২টি প্রতীক সংরক্ষণ করা হয়। একইসঙ্গে সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের জন্য ‘তফসিল-৩’ প্রতিস্থাপন করে ১০টি প্রতীক এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদের জন্য ‘তফসিল-৪’ প্রতিস্থাপন করে ১২টি প্রতীক সংরক্ষণ করা হয়। এর আট মাস পরেই পৌরসভার নির্বাচন আইন সংশোধন করে সরকার। এতে মেয়র পদে দলীয়ভাবে ভোটগ্রহণের বিধান আনা হলে সে মোতাবেক নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধন করা হয়। যা গত ২৩ নভেম্বর গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। ভুলটি হয়েছে সর্বশেষ এই সংশোধনীতেই। এখানে মেয়র পদের জন্য ৪০টি দলের ৪০টি প্রতীক সংরক্ষণ করা হয়েছে ‘তফসিল-২’ প্রতিস্থাপন করে, যেখানে ‘বিধি ১৯ এর উপবিধি (১) দ্রষ্টব্য’ বলা হয়েছে। কিন্তু এটি হবে বিধি ১৯ এর উপবিধি (১) এর (ক) দফা। কারণ, ২০১০ সালের মূল বিধিমালায় ‘তফসিল-২’ এই দফাতেই উল্লেখ করা হয়েছে। আবার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর ক্ষেত্রে ১২টি প্রতীক সংরক্ষণ করে ‘তফসিল-৩’ প্রতিস্থাপনের কথা বলা হয়েছে। যেখানে ‘বিধি ১৯ এর উপবিধি ২ এর দফা (ক) দ্রষ্টব্য’ বলা হয়েছে। অথচ বিধিমালায় উপবিধি (২) এ প্রতীক নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনের উপায় বলে দেয়া রয়েছে। আর উপবিধি (২) এর (ক) দফা বলতে কোনো দফাই নেই। একই ভুল করা হয়েছে সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের প্রতীক সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও। এ পদের জন্য ১০টি প্রতীক সংরক্ষণ করে ‘তফসিল-৪’ প্রতিস্থাপনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দ্রষ্টব্য বলা হয়েছে বিধি ১৯ এর উপবিধি ২ এর দফা (খ)। যে দফার কোনো অস্তিত্ব নেই। অন্যদিকে, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১২টি প্রতীক সংরক্ষণ করে ‘তফসিল-৫’ প্রতিস্থাপনের কথা বলা হয়েছে। অথচ এটা হওয়া উচিত ছিলো সংযোজন। এছাড়া ‘তফসিল-৫’ এর দ্রষ্টব্য বলা হয়েছে বিধি ১৯ এর উপবিধি (২) এর দফা (গ)। এ দফারও কোনো অস্তিত্ব নেই মূল বিধিমালায়। এসব ভুল ছাড়াও আরও ছোটখাটো বেশকিছু ভুল রয়েছে। সেগুলোও সংশোধন করতে হবে। তা না হলে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হবে না। এ বিষয়ে ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, সংশোধিত নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় প্রতীক বরাদ্দের একটি বিধির- এক উপবিধি ও কয়েকটি দফায় ভুল করা হয়েছে। যা ক্ল্যারিক্যাল মিসটেক। তিনি বলেন, একটি বিধিতে কিছু দফায় পরিবর্তন আনতে হবে। এটি বড় কোনো ভুল নয়। যা পরিবর্তন করতেও কোনো সমস্যা নেই। এটি পরিবর্তন করেই নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। ১০ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে