শনিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯, ১২:৩৪:৩৫

নির্বাচনের সময় নমিনেশনকে বিএনপি অকশনে তুলেছিল : প্রধানমন্ত্রী

নির্বাচনের সময় নমিনেশনকে বিএনপি অকশনে তুলেছিল : প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক : নির্বাচনে বিএনপি মনোনয়ন বিক্রির নমুনা বর্ণনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনের সময় তারা প্রতি সিটে ২-৩ জনের কাছে নমিনেশন দিয়েছে।

তিনি বলেন, ৩০০ আসনে এই সংখ্যা প্রায় ৯০০ কাছাকাছি। যে টাকা বেশি দিয়েছে তাকেই নমিনেশন দেয়া হয়েছে। নমিনেশনকে তারা অকশনে তুলেছিল। বিদেশেও সিট অকশনে বিক্রি হয়েছে। নমিনেশন ফরম নিয়ে অনেকে অ্যাম্বাসিতেও গেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, অ্যাম্বাসিতে নমিনেশন পেপার গ্রহণ করবে কিভাবে? যারা নমিনেশন নিয়ে এই ধরনের বাণিজ্য করেছে তারা ক্ষমতার স্বপ্ন দেখে কিভাবে?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ একটু ভাল থাকলে কিছু মানুষ আছেন যারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। দেশে যদি কোনো ‘মার্শাল ল’ জারি হয়, অসাংবিধানিক শক্তি ক্ষমতা দখল করে, তখন এই গোষ্ঠী খুবই ফুর্তিতে থাকে; তাদের মূল্য বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, জনগণের মূল্য তাদের কাছে কিছু না। নিজের ক্ষমতায়ন একটু ক্ষমতার বাতাসের আশায় তারা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলায় ব্যস্ত থাকে।

শুক্রবার বিকালে রাজধানী ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী চকবাজারের চুড়ি হাট্টি অগ্নিকান্ডে নিহতদের প্রতি গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

আলোচনা সভায় শুরুতে অগ্নিকান্ডে নিহতদের স্মরণে দাড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সূচনা বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক, আবদুর রহমান, একুশে পদকপ্রাপ্ত উপন্যাসিক এমদাদুল হক মিলন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আক্তারুজ্জামান, মেরিনা জাহান কল্পনা, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি একে এম রহমত উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান প্রমূখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশ একটি ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, বাঙালী জাতি বিশ্বের মধ্যে মাতৃভাষার জন্য রক্ত দেয়া জাতি।

তিনি বলেন, আজকে এই বাংলা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমাদের সব থেকে গৌরবের ভাষার জন্য রক্ত দেয়া যে মাতৃভাষার ওপর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ। ভারত ভাগে বেশি অবদান ছিল এই পূর্ব পাকিস্তানের। অথচ তারা (পাকিস্তান) প্রথম আঘাতটি দিয়েছে বাংলা ভাষার উপর। বাংলা ভাষায় কথা বলা যাবে না, বাংলা ভাষায় চিন্তা করা যাবে না।

তিনি বলেন, ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ইস্ট পাকিস্তান মুসলিম স্টুডেন্ট লীগ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন জাতির পিতা শেখ মুজিব। সেই সংগঠনের মাধ্যমে বাংলা ভাষার আন্দোলন সংগ্রাম এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বঙ্গবন্ধু। সেই থেকে যাত্রা শুরু। ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র বাংলাদেশে। আন্দোলন বেগবানে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রতি জেলায় সফর করেন। আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধু বারবার গ্রেফতার হতে থাকেন।

সে সময় শাসকগোষ্ঠী আমাদের ওপর নতুন নতুন ফর্মুলা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে-উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, একবার বলা হলো আরবি হরফে বাংলা লিখতে হবে, আবার বলা হলো রোমান হরফে বাংলা লিখতে হবে। সেটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হয়েছে। প্রতিবারই ছাত্ররা এর প্রতিবাদ করেছে।

মাতৃভাষা বাংলা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পাওয়ার ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দুজন প্রবাসী বাঙালি রফিক এবং সালাম বাংলাকে ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা করার প্রথম উদ্যোগ নেয়। তারা কয়েকজন মিলে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার জন্য একটি সংগঠন গড়ে তোলে। 

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ঘোষণা করার জন্য তারা জাতিসংঘে একটি আবেদন করেছিল। কিন্তু কোন রাষ্ট্র আবেদন না করলে সেটিয়ে কোনও ঘোষণা অনুমেমাদন হয় না। এটি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমরা জাতিসংঘে প্রস্তাব উত্থাপন করি।

সেখান থেকে ঘোষণা দেয়া হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। তিনি বলেন, এখন অনেক দেশে আমাদের শহীদ মিনার নির্মাণ হয়েছে এবং একুশে ফেব্রুয়ারি মর্যাদার সঙ্গে পালন করা হচ্ছে। এটাই হচ্ছে আমাদের সব থেকে বড় পাওয়া।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে জাতিকে নিঃশেষ করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, এমনকি এ জাতির অস্তিত্বেই বিশ্বাস করত না। সেজন্য তারা যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন কোনো উন্নতি-অগ্রযাত্রা হয়নি এদেশের। আর যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারলো, তখনই দেশ ও জনগণের ভাগ্যোন্নয়ন হয়েছে। সে জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই জনগণের প্রতি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলা ভাষা একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

অনেক ঝড় ঝাপটা আমাদের উপর দিয়ে গেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৬ সালে আমরা সরকার গঠন করে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলাম। উন্নয়নের অগ্রযাত্রা শুরু করেছিলাম। কিন্তু সেই যাত্রা বেশিদিন যেতে পারেনি। ২০০১ সালে যে নির্বাচন হয়েছিল সেই নির্বাচন পরবর্তী বাংলাদেশের মানুষ ও আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর নির্মম অত্যাচার শুরু করে। ঠিক যেভাবে একাত্তরের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অত্যাচার করেছিল নিরীহ বাঙালিদের ওপর।

২০০৮ সালের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই নির্বাচনে জনগণ আমাদের ভোট দেয়, আমরা সরকার গঠন করি। সেই নির্বাচনে ৮৬ ভাগ ভোট পড়েছিল। বিএনপি-জামায়াত জোট সেই নির্বাচনে মাত্র ২৮টি সিট পেয়েছিল। এটা হয়তো অনেকেরই মনে নেই।

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে পরে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি সন্ত্রাসের বর্ণনা দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সে সময় তারা নির্বাচন ঠেকানোর নামে অগ্নি সন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করেছিল। ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে তাদের জঙ্গিবাদী আচরণ, মানুষ হত্যা এবং আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল। সে সময় ৩৮০০ মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়েছিল। পাঁচশোর মত মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছে।

তিনি বলেন, অনেকে এখনো আহত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের প্রতি কারো সহানুভূতি দেখি না। যারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ পুড়িয়েছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে শুরু করে বাস রেল ট্রাক পুড়িয়েছে, গাছ, রাস্তা কেটে ফেলেছে, যত রকমের ধ্বংসাত্মক কাজ করেছে। সেই ভয়াবহ স্মৃতি সবারই মনে আছে। জনগণ এজন্যই তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এজন্য জনগণ তাদের ভোট দেয়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার থেকে বড় কথা যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-যাদেরকে মানুষ ভোট দিত না তাদেরকেও নমিনেশন দেয়া হয়েছে। এতে জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, এদেশের মানুষ ভোট দেবে না এবং দেয়নি।

জনগণের যে আস্থা নিয়ে আমরা ক্ষমতায় এসেছি সেই মর্যাদা রাখতে হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই ধারা অব্যাহত রেখে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে। বাংলাদেশ যেন ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত এবং জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।

তিনি বলেন, একটানা ১০ বছর সরকারে থেকে দেশের উন্নয়ন করেছি বিধায় জনগণ আবার আমাদের ক্ষমতায় এনেছে। একটানা ক্ষমতায় থাকার কারণে বাংলাদেশ আজ বিশ্ববাসীর কাছে একটা মর্যাদা পেয়েছে এবং উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছে। তাদের ভোটের মর্যাদা আমাদের রাখতে হবে। আমরা বাংলার মানুষকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধা থেকে মুক্তি দিতে কাজ শুরু করেছি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দারিদ্র্য ও ক্ষুধা মুক্ত স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিটি গ্রামের মানুষ যেন উন্নত জীবন পায় সেভাবে আমরা দেশকে গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।

তিনি বলেন, দেশের মানুষের সহযোগিতা পেলে ২১ সালের মধ্য দারিদ্র্য ও ক্ষুধা মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব। ২০৪১ সালের মধ্য দক্ষিণ এশিয়া মহাদেশের মধ্যে উন্নত এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা উপহার দিব। এজন্য ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ আমরা প্রণয়ন করেছি এবং এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করেছি। ২০২০ সালের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ধুমধাম করে পালন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে