বুধবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৯, ০৯:১৮:৪৯

গ্রিন লাইনের মালিক ও পা হারানো রাসেল হাইকোর্টে যা বললেন

গ্রিন লাইনের মালিক ও পা হারানো রাসেল হাইকোর্টে যা বললেন

নিউজ ডেস্ক : গ্রিন লাইন বাসের মালিক হাজি মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ও তার কোম্পানির বাসের চাপায় পা হারানো রাসেল বুধবার হাইকোর্টে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এসময় তাদের পক্ষের আইনজীবীরা তাদের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।

বুধবার দুপুর ৩ টার পর প্রথমে ক্র্যাচে ভর করে ডায়াসের সামনে এলে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক জানতে চান তার ব্যাংক এ্যাকাউন্ট আছে কিনা। জবাবে রাসেল জানায় ডাচবাংলা ব্যাংকে এ্যাকাউন্ট আছে। তখন গ্রিন লাইনের আইনজীবী রাসেলের হাতে ৫ লাখ টাকার চেক ধরিয়ে দেন। এরপর আদালত এই চেককে ক্যাশ করে ব্যাংক স্টেটমেন্ট আদালতে জেমা দিতে বলেন।

একপর্যায়ে গ্রিন লাইনের আইনজীবী অজিউল্লাহ বলেন, রাসেল অসুস্থ হওয়ার পর থেকে গ্রিন লাইনের লোক গিয়েছে, দেখা করেছে, কথা বলেছে। এবং একটি এনজিও তার চিকিৎসার দায়ভার নিয়েছে বলে সে জানিয়েছে। এসময় রাসেল সরকার কিছু বলতে আদালতের অনুমতি চাইলে আদালত তাকে কথা বলার অনুমতি দেয়।

রাসেল বললেন, আমার সঙ্গে এখন পর্যন্ত গ্রিন লাইন পরিবহন কোনো যোগাযোগ করেনি। আমার বাবা-ভাই গিয়েছিল। গ্রিন লাইনের যিনি মালিক তিনি বলেছিলেন যে, আমি হজে যাচ্ছি। রাসেল আমার ছেলের মত। আমার ছোট ছেলে অ্যাকসিডেন্ট করেছে তার জন্য ওমরাহ করতে যাচ্ছি, রাসেলের জন্য আমি দোয়া করব।

তিনি বলেন, রাসেলের জন্য আমি ভাল কিছু করে দিব। ওমরাহ থাকাকালীন আমার অফিসের স্টাফরা যোগাযোগ করবে। এর পরের দিন হসপিটালে দুইজন লোক গিয়েছিল। তারা নাম্বার নিল যে আমার খোঁজ-খবর রাখবে। কিন্তু চিকিৎসা বা টাকার বিষয়ে কোনো কিছু করা হয়নি।

এরপর আদালত ডায়াসে কথা বলতে ডাকেন গ্রিন লাইন পরিবহনের মালিক মো. আলাউদ্দিনকে। তিনি ডায়াসের সামনে এগিয়ে আসলে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, আপনি এত বড় একজন পরিবহন ব্যবসায়ী। একটি পরিবহন চালান। এই পরিবহনের বেশ সুনাম আছে। আমরাও চড়েছি আপনার বাসে।

জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, ‘এই যে আপনার এত বড় কোম্পানি কিন্তু রাসেলের ঘটনাটার পর এতদিন হল ছেলেটার কোনো খোঁজ-খবর নিলেন না। আপনারা তো কত যাকাত দেন। মানুষকে সাহায্য করেন বিভিন্নভাবে। আপনার কি কোনো দায়িত্ব ছিল না?’

একপর্যায়ে মালিক আলাউদ্দিন বলেন, আপনি অনুমতি দিলে আমি কিছু কথা বলতে চাই। বেয়াদবি হলে মাফ করে দিয়েন। আপনারা যেখানে বসে আছেন সেই জায়গাটাকে আমি শ্রদ্ধা করি। এই ছেলেটার যখন অ্যাকসিডেন্ট হইল তারপর পর আমার পরিবারে তিনটা অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে।

আলাউদ্দিন বলেন, আমার ওয়াইফের পা ভেঙে গেছে ও কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে একটা। আমার বড় ছেলে চির অন্ধ হয়ে গেছে। এবং আমি অসুস্থ হয়ে প্রায় এক মাস দেশের বাইরে ছিলাম। আর আমার ব্যবসাতে লস হচ্ছে। পৈত্রিক সম্পদ বিক্রি করে এখন ব্যবসা করছি। প্রায় একশ কোটি টাকা দেনা হয়ে গেছি।

এরপর গ্রিন লাইনের মালিক বলেন, রাস্তায় গাড়ি চললে দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। গত সপ্তাহে খুলনাতে একটি দুর্ঘটনা হয়েছে। আজকে আপনাদের সম্মান জানিয়ে ৫ লাখ টাকা দিয়ে গেলাম।

তখন আদালত বলেন, দেখেন আপনারা ব্যবসা-বাণিজ্য করবেন। মানুষের যাতে কোন অসুবিধা না হয় সেটাও তো দেখতে হবে। মনেরও একটা প্রশান্তি আসবে, শান্তি পাবেন।

গ্রিন লাইন পরিবহনের মালিক তখন বলেন, আমি উনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে যতটুকু আমার সাধ্যে কুলায় আমি করব।

এরপর আদালত বলেন, এই যে ঘটনাটা ঘটেছে তা কিন্তু দুর্ঘটনার পর্যায় পড়ে না। সে গাড়ি থামাতে গেল, অথচ আপনার চালক তার উপর দিয়ে চালিয়ে দিল। তবে যেহেতু মামলাটি পেন্ডিং আছে সেহেতু আমরা আর মন্তব্য করলাম না। কিন্তু এই যে বিষয়গুলা এটি বিবেচনা করে দেখা উচিত। আর আপনারা, আমরা সবাই কিন্তু এদেশের মানুষ। এদেশেরই সন্তান। 

আদালত বলেন, একটি ছেলে মারা গেলে শুধুমাত্র তার বাপ-মারই ছেলে যায় না। দেশের সম্পদ চলে যায়। আর আমরা এ জায়গায় বসেছি শুধু আমার বাপের টাকায় না। এখানে জনগণের ট্যাক্সের টাকা আছে। এই রিটে কিন্তু এক কোটি চাওয়া হয়েছিল আমরা কিন্তু তা দেইনি। আমরা সেটি কমিয়ে ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।

তখন গ্রিন লাইনের মালিক বলেন: এটি আপনাদের বিবেচনার মধ্যে রইল। আমার সাধ্যে যা কুলায় রাসেলকে সবই করব।

তখন আদালত বলেন: এই মামলায় এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা তা দিইনি। আমরা ৫০ লাখের নির্দেশ দিয়েছি।

তখন মো. আলাউদ্দিন বলেন, তাহলে আদেশ দিয়ে আমার ব্যবসা বন্ধ করে দিন। আমার আর কিছু করার নেই।

এরপর এ বিষয়ে আদালতে আজকের কার্যক্রম শেষ হয়।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে