বুধবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৯, ১০:২১:৫৭

মৃত্যুর আগে শেষ চিঠিতে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সম্পর্কে বান্ধবীদের যা বলেছিলেন নুসরাত

মৃত্যুর আগে শেষ চিঠিতে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সম্পর্কে বান্ধবীদের যা বলেছিলেন নুসরাত

নিউজ ডেস্ক : ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রের আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি আর নেই। তার লাইফ সাপোর্ট তেমন কাজ করছেন না বলে সন্ধ্যায় জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে চলেই গেলেন ফেনীর সোনাগাজীর অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে বুধবার রাতে মারা গেছেন তিনি। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রকল্প পরিচালক ও মেডিকেল বোর্ডের প্রধান প্রফেসর ডা. আবুল কালাম সন্ধ্যায় বলেছিলেন, নুসরাতের লাইফ সাপোর্ট তেমন কোনো কাজ করছে না। আমরা মেডিকেল বোর্ডের সব সদস্য আইসিইউয়ের ভেতর।

এদিকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার হাতে যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার পর সহপাঠি বান্ধবীদের উদ্দেশে নুসরাত জাহান রাফির লেখা একটি চিঠি উদ্ধার করা হয়েছে। মৃত্যুর আগে এটিই ছিল নুসরাতের শেষ চিঠি।

মঙ্গলবার নুসরাতের বাড়ি থেকে এ চিঠি উদ্ধার করেছে সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশ। চিঠিতে দিন-তারিখ লেখা না থাকলেও বিষয়বস্তু বিবেচনায় এটি কয়েকদিন আগের লেখা বলে মনে করছে তদন্তকারী সূত্র।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সোনাগাজী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) কামাল হোসেন জানান, তার পড়ার টেবিলে খাতায় দুই পাতার ওই চিঠি তামান্না ও সাথী নামের দুই বান্ধবীকে সম্বোধন করে লেখা হয়েছে।

গত ২৭ মার্চ ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনাও দিয়েছে নুসরাত। ওই চিঠিতে নুসরাত আত্মহত্যা করবে না বলেও উল্লেখ করে। তবে যৌন হয়রানির ঘটনার পর সিরাজ উদদৌলা গ্রেপ্তার হলে তার মুক্তির দাবিতে বান্ধবীদের অংশগ্রহণে ক্ষোভ প্রকাশ করে নুসরাত।

তাকে নিয়ে বান্ধবীদের বিভিন্ন কটুক্তিতেও তার মর্মাহত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয় চিঠিতে। চিঠিতে নুসরাত জাহান রাফি লিখেছে... 

‘তামান্না, সাথী। তোরা আমার বোনের মতো এবং বোনই। ওই দিন তামান্না আমায় বলেছিল, আমি নাকি নাটক করতেছি। তোর সামনেই বললো। আরো কি কি বললো, আর তুই নাকি নিশাতকে বলেছিস আমরা খারাপ মেয়ে। বোন প্রেম করলে কি সে খারাপ? তোরা সিরাজ উদদৌলা সম্পর্কে সব জানার পরও কীভাবে তার মুক্তি চাইতেছিস। তোরা জানিস না, ওইদিন রুমে কি হইছে? 

উনি আমার কোন জায়গায় হাত দিয়েছে এবং আরো কোন জায়গায় হাত দেওয়ার চেষ্টা করেছে, উনি আমায় বলতেছে- নুসরাত ডং করিস না। তুই প্রেম করিস না। ছেলেদের সাথে প্রেম করতে ভালো লাগে। ওরা তোরে কি দিতে পারবে? আমি তোকে পরীক্ষার সময় প্রশ্ন দেবো। আমি শুধু আমার শরীর দিতাম ওরে।

বোন এই জবাবে উত্তর দিলাম। আমি একটা ছেলে না হাজারটা ছেলে। আমি লড়বো শেষ নি:শ্বাস পর্যন্ত। আমি প্রথমে যে ভুলটা করেছি আত্মহত্যা করতে গিয়ে। সেই ভুলটা দ্বিতীয়বার করবো না। মরে যাওয়া মানে তো হেরে যাওয়া। আমি মরবো না, আমি বাঁচবো। আমি তাকে শাস্তি দেবো। যে আমায় কষ্ট দিয়েছে। আমি তাকে এমন শাস্তি দেবো যে তাকে দেখে অন্যরা শিক্ষা নিবে। আমি তাকে কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দেবো। ইনশাআল্লাহ।’

উল্লেখ্য, গত শনিবার আলিম পরীক্ষায় অংশ নিতে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসাকেন্দ্রে গেলে দুর্বৃত্তরা ওই ছাত্রীকে ছাদে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তার দেয়া শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলে নিতে বলে। তিনি তাতে রাজি না হওয়ায় দুর্বৃত্তরা তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় বর্তমানে নুসরাত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বর্তমানে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে