বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০২:৪৩:৫১

আওয়ামী লীগে ৩০ প্রার্থী ও বিএনপিতে ২০ প্রার্থী

আওয়ামী লীগে ৩০ প্রার্থী ও বিএনপিতে ২০ প্রার্থী

উৎপল রায় ও কাজী সুমন : পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থী। সারাদেশের ২২৮টি পৌরসভায় মেয়র পদে প্রার্থিতায় অন্তত ৩০টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের জয়-পরাজয় নির্ধারণে ফ্যাক্টর হবে বিদ্রোহী প্রার্থীরাই। একই চিত্র বিএনপির ক্ষেত্রেও। বিএনপির ২২১টিতে মেয়র পদে প্রার্থিতায় ২০ পৌরসভায় দলের বিদ্রোহীদের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে প্রার্থীদের। ৩০ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের জন্য ফ্যাক্টর বিদ্রোহী প্রার্থী: ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের কারণে অন্তত ৩০টি পৌরসভায় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগের জন্য। সারা দেশের সাতটি বিভাগের ২২৮টি পৌরসভায় (সাতটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত) আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন এমন পৌরসভায় খোঁজ নিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে। মনোনয়ন প্রত্যাহারের আলটিমেটাম, কেন্দ্রীয় নেতাদের হুমকি-ধামকি, বহিষ্কারের ঘোষণার পরও আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বাইরে অন্তত ৬০ থেকে ৭০ জন বিদ্রোহী প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ৩০টি পৌরসভায় বিদ্রোহীরা শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। এরাই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের জয়ের ক্ষেত্রে ফ্যাক্টর হবেন বলে মনে করে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। মাঠ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন পৌরসভায় সর্বোচ্চ বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। সবচেয়ে কম বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন বরিশাল বিভাগে। কিশোরগঞ্জের ৩টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে একপ্রকার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন দলের বিদ্রোহীরা। তাদের কারণে জেলার বাজিতপুর, করিমগঞ্জ, হোসেনপুর পৌরসভায় দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ভোট যুদ্ধে জয়লাভ করা কঠিন বলে মনে করছেন কিশোরগঞ্জের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে হোসেনপুর পৌরসভায় একজন বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলেও রয়ে গেছেন অন্য দুই বিদ্রোহী যথাক্রমে সৈয়দ হোসেন হাছু ও আবদুল কাদির স্বপন। হোসেনপুর পৌরসভার নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল কাইয়ুম খোকন। এই পৌরসভায় আওয়ামী লীগের দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী খোকনকে ইতিমধ্যেই বেকায়দায় ফেলেছেন। এ ছাড়া করিমগঞ্জ পৌরসভায় বর্তমান মেয়র উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক হাজী আবদুল কাইয়ুম এবং বাজিতপুর পৌরসভায় পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শওকত আকবর বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। মাদারীপুরের কালকিনিতে দলের মনোনয়ন পেয়েছে এনায়েত হোসেন। কিন্তু এখানে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন একই দলের আবুল কালাম আজাদ ও মশিউর রহমান। এই পৌরসভায় কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আশঙ্কা করছেন এখানে বিদ্রোহী প্রার্থীরা দল মনোনীত প্রার্থীর নির্বাচনে জয়লাভের ব্যাপারে ফ্যাক্টর হতে পারেন। এদিকে যশোরের ৫টি পৌরসভায় ৫জন বিদ্রাহী প্রার্থী দল থেকে আজীবন বহিষ্কারের হুমকির পরেও নিজেদের নাম প্রত্যাহার করেননি। জানা গেছে, নির্বাচনী মাঠে সদর্পেই তারা রয়ে গেছেন। জোরেশোরে চালাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তারা দল মনোনীত প্রার্থীদের যথেষ্টই বেকায়দায় ফেলবেন বলে আশঙ্কা করছেন যশোর আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। যশোর সদরে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জহিরুল ইসলাম চাকলাদার। তার বিপরীতে বিদ্রোহী হিসেবে স্বতন্ত্র পরিচয়ে নির্বাচন করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এসএম কামরুজ্জামান চুন্নু। জেলার চৌগাছা পৌরসভায় সরকারদলীয় প্রার্থীর বিপরীতে বিদ্রোহী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম সাইফুর রহমান নির্বাচনে লড়ছেন। বাঘারপাড়া পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসেবে সাবেক মেয়র খলিলুর রহমান বিশ্বাস নির্বাচনী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। অভয়নগরে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে একই দলের বিরুদ্ধে নির্বাচন করছেন পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাবেক কমিশনার ফারুখ হোসেন। মনিরামপুরে সরকারদলীয় প্রার্থীর বিপরীতে বিদ্রোহী হিসেবে স্বতন্ত্র পরিচয়ে নির্বাচন করছেন দলের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক আবদুল মজিদ। যশোরের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ধারণা ৫টি পৌরসভার প্রায় সবগুলোতে বিদ্রোহীরা শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে আভির্ভূত হয়েছেন। তাই ভোটের মাঠে ফ্যাক্টর হবেন বিদ্রোহীরা। বগুড়ার ধুনটে আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচনে লড়ছেন শরীফুল ইসলাম খান শরীফ। কিন্তু দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে এই পৌরসভায় বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সদস্য এজিএম বাদশা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ধীরে ধীরে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছেন এই বিদ্রোহী প্রার্থী। বরগুনা পৌরসভায় সরকারদলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র শাহাদাত হোসেন। এই পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কামরুল আহসান। তবে, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. শাহাজাহানও স্বতন্ত্র হিসেবে এই পৌরসভায় ভোটের মাঠে নেমেছেন। দলের মনোনয়ন না চাইলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও ভোটাররা তাকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসেবেই আখ্যায়িত করছেন। এদিকে বরগুনা পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ভোটের মাঠে শাহাদাত হোসেনকে ঠেকাতে তার কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলা করছেন কামরুল আহসানের সমর্থকরা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলছেন, নির্বাচনী মাঠে দল মনোনীত প্রার্থীকে শক্ত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন শাহাদাত হোসেন। তাদের আশঙ্কা, দল মনোনীত প্রার্থীর জয়লাভের ক্ষেত্রে বড় ফ্যাক্টর হবেন বিদ্রোহী প্রার্থী শাহাদাত হোসেন। নড়াইলের কালিয়া পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ওয়াহিদুজ্জামান হীরার বিপরীতে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও বর্তমান মেয়র এমদাদুল হক টুলু। দল মনোনীত প্রার্থীকে হারিয়ে নির্বাচনে জয়লাভের ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। মুন্সীগঞ্জ সদরে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ ফয়সালের বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়ছেন বিদ্রোহী প্রার্থী রেজাউল ইসলাম সংগ্রাম। এদিকে একই জেলার মীরকাদিমে শহীদুল ইসলাম শাহীনের বিরুদ্ধে নির্বাচনে নেমেছেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মনসুর আহমেদ কালাম। স্থানীয় নেতাকর্মীরা আশঙ্কা করছেন ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ভোটের লড়াইয়ে দুজনই দল মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে জমাট প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলবেন। শরীয়তপুর জেলার ৫টি পৌরসভায় অন্তত ৩টিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের জয়লাভের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হবেন বিদ্রোহীরা। শরীয়তপুর পৌরসভায় দল মনোনীত প্রার্থীর বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও পরিবহন নেতা ফারুখ আহমেদ তালুকদার ইতিমধ্যে নিজেকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, ভোটের মাঠে তিনি ফ্যাক্টর হবেন। এদিকে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা পৌরসভায় ৪ জন বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। তবে, এদের মধ্যে অন্তত দুজন দল মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলবেন বলে মনে করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। নড়িয়া পৌরসভাতেও দল মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে ফ্যাক্টর হতে পারেন বিদ্রোহী প্রার্থী। এদিকে রাঙ্গামাটি পৌরসভায় দল মনোনীত প্রার্থী জেলা যুবলীগের সভাপতি আকবর হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী ভোটের মাঠে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আভির্ভূত হয়েছেন। সাবেক মেয়র হাবিবুর রহমান ও জেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক অমর কুমার দে উভয়েই জয়লাভের বিষয়ে আশাবাদী বলে জানা গেছে। লালমনিরহাট সদর পৌর সভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র রিয়াজুল ইসলাম রিন্টু। কিন্তু এ পৌরসভায় বিএনপি প্রার্থীর পাশাপাশি দলের বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াজেদুল ইসলাম সেনার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন রিয়াজুল ইসলাম রিন্টু। জেলার পাটগ্রাম পৌরসভায় প্রার্থী শমসের আলীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি ওয়াজেদুল ইসলাম শাহীন। গোপালগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন কাজী লিয়াকত আলী লেকু। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মুশফিকুর রহমান লিটন ইতিমধ্যেই নির্বাচনী মাঠ সরগরম করে ফেলেছেন। জানা গেছে, তার পক্ষে গোপনে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশ। নরসিংদী পৌরসভায় দলের মনোনয়ন পেয়েছেন শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল। তবে, তাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছেন সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা এস এম কাইয়ুম। জানা গেছে, ইতিমধ্যে নির্বাচনী মাঠে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন আওয়ামী লীগের এই বিদ্রোহী প্রার্থী। মেহেরপুরের গাংনীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আহমেদ আলী। এখানে ধীরে ধীরে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করছেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আশরাফুল ইসলাম ভেণ্ডার। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে সরকার দলীয় প্রার্থীর জয়লাভ কঠিন হতে পারে। নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসবে বিদ্রোহী প্রার্থী আশরাফুল ইসলামের অবস্থান আরও পাকাপোক্ত হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটাররা। বাগেরহাট পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে ইতিমধ্যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মিনা হাসিবুল হাসান শান্ত। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্রোহী হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কারণে ইতিমধ্যে কেন্দ্র থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে তাকে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্বতন্ত্র হিসেবে সদর্পেই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশের সমর্থন ও ভোটারদের একটি অংশকে ইতিমধ্যে বাগে আনতে পেরেছেন আওয়ামী লীগের এই বিদ্রোহী প্রার্থী। ফলে এই পৌরসভায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেন মিনা হাসিবুল হাসান শান্ত। চট্টগ্রামের রাউজানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দেবাশীষ পালিত। কিন্তু এ পৌরসভায় বিদ্রোহী হিসেবে স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন উপজেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে ইতিমধ্যে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছেন সাইফুল ইসলাম চৌধুরী। এদিকে সীতাকুন্ড পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নায়েক শফিউল্লাহ দলের মনোনীত প্রার্থী বদিউল আলমের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। ইতিমধ্যে এর আভাসও পাওয়া যাচ্ছে। ফলে, চট্টগ্রামের এই পৌরসভায় ভোটের মাঠে সরকারদলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারেন এই বিদ্রোহী প্রার্থী। ময়মনসিংহের গৌরিপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মেয়র শফিকুল ইসলাম হবি। জেলার মুক্তাগাছা পৌরসভায় বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নিজ দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ ঘোষ বাপ্পি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে হারিয়ে দেয়ার মতো যথেষ্টই সামর্থ্য রয়েছে দলের এই বিদ্রোহী প্রার্থীর। ত্রিশালে দল মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়ছেন যুবলীগ নেতা ও বর্তমান মেয়র এবিএম আনিসুজ্জামান আনিস। তিনি ও দল সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে একজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আভির্ভূত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া জেলার ঈশ্বরগঞ্জ, ফুলপুরেও বিদ্রোহী প্রার্থীরা দল মনোনীত প্রার্থীর জয়ের পথে বাধা হতে পারেন। ২০ বিদ্রোহী চ্যালেঞ্জ বিএনপি প্রার্থীর সামনে: ২৩৩ পৌরসভার মধ্যে ২২১টিতে মেয়র পদে ধানের শীষ প্রতীকে লড়ছেন বিএনপির প্রার্থীরা। দুটি পৌরসভায় জোটের শরিক দলকে ছাড় দিয়েছে দলটি। তবে অন্তত ২৮ পৌরসভায় এখনও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। কোনো কোনো পৌরসভায় রয়েছে দলের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী। এর মধ্যে অন্তত ২০ পৌরসভায় নিজ দলের বিদ্রোহীদের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বিএনপি প্রার্থীদের। ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থান থাকায় জয়-পরাজয়ে ব্যবধান তৈরি করতে পারেন এসব বিদ্রোহী। এ ছাড়া ২৫ পৌরসভায় জামায়াত ও তিন পৌরসভায় খেলাফত মজলিস স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়েছে। তাদের সঙ্গেও কোনো ধরনের সমঝোতায় আসতে পারেনি বিএনপি। দলের সিনিয়র নেতারা বলছেন, জামায়াতের সঙ্গে স্থানীয়ভাবে সমঝোতা করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত একটি পৌরসভায়ও জামায়াত প্রার্থী সরে দাঁড়াননি। এদিকে বিদ্রোহীদের প্রচারণা থেকে নিষ্ক্রিয় করতে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এ লক্ষ্যে গত মঙ্গলবার পৌর নির্বাচন পরিচালনায় তিনটি মনিটরিং সেল ও ১১টি সমন্বয় কমিটি গঠন করেছে দলটি। কয়েকটি টিম মাঠে প্রচারণায় নেমেছে। এদিকে পাবনায় তিন বিদ্রোহী প্রার্থীকে বহিষ্কার করেছে স্থানীয় বিএনপি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভায় দলের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী হয়েছেন বিএনপির বর্তমান সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। ভোটের মাঠে তার শক্ত অবস্থান রয়েছে। জেলার আড়ানি পৌর বিএনপির আহ্বায়ক নজরুল ইসলামও দলের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। ভোটের মাঠে তিনিও সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। রাজশাহীর তানোর পৌরসভার ফিরোজ সরকারও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। বর্তমান মেয়র হওয়ায় তিনিও ভালো অবস্থানে রয়েছেন। এ ছাড়া রাজশাহীর নওহাটায় রফিকুল ইসলাম ও চারঘাটে কায়েম উদ্দিন বিএনপির বিদ্রোহী হিসেবে দাঁড়ালেও ভোটের মাঠে তাদের অবস্থান তেমন সুবিধাজনক নয়। এদিকে চাঁপাই নবাবগঞ্জ সদরে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছে বর্তমান মেয়র আবদুল মতিন। ওই পৌরসভায় জামায়াত প্রার্থী নজরুল ইসলামের শক্ত অবস্থান রয়েছে। তাই ভোটের মাঠে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বিএনপি প্রার্থী (জামায়াত থেকে বহিষ্কৃত) আতাউর রহমানকে। ওদিকে পাবনা সদরে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন বর্তমান মেয়র কামরুল হাসান মিন্টু। ওই পৌরসভায় মিন্টুর অবস্থান ভালো হওয়ায় ভোটের মাঠে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বিএনপি প্রার্থীকে। এদিকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় পাবনায় বিএনপির তিন বিদ্রোহী প্রার্থীকে বহিষ্কার করেছেন জেলা সভাপতি কে এস মাহমুদ। বহিষ্কৃত তিন বিদ্রোহী হলেন- সুজানগরে কামাল হোসেন বিশ্বাস, সাঁথিয়ায় সাইফুল ইসলাম, চাটমোহরে আবদুল মান্নান। ভোটের মাঠে তাদের সবাই ভালো অবস্থানে রয়েছেন। ময়মনসিংহের ভালুকায় দলের মনোনয়ন না পেয়ে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আলহাজ মফিজউদ্দিন সরকার। জগ প্রতীক নিয়ে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ধানের শীষের প্রতীকের প্রার্থী হাতেম আলীর সঙ্গে। জেলা ও পৌর বিএনপির সদস্য মফিজউদ্দিন সরে না দাঁড়ানোয় বিএনপির প্রার্থীর জয়-পরাজয়ে ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারেন। এদিকে নারায়ণগঞ্জের তারাবতে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন বর্তমান মেয়র শফিকুল ইসলাম। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তারাবতে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হলেন নজরুল ইসলাম। তবে বর্তমান মেয়র হওয়ায় ভোটের মাঠে শফিকুল ইসলামের রয়েছে শক্ত অবস্থান। তাই জয়-পরাজয়ে ব্যবধান তৈরি করতে পারেন তিনি। ওদিকে নরসিংদীর মনোহরদীতে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সাবেক মেয়র আবদুল খালেক। জানা গেছে, ওই পৌরসভায় মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে বিএনপির প্রার্থী মাহমুদুল হাসানের। তবে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হওয়ায় কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক মেয়র হওয়ায় ভোটের মাঠে ব্যবধান তৈরি করতে পারেন। এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও নির্বাচন সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ শাহজাহান মানবজমিনকে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে সমঝোতার জন্য আমরা শেষ পর্যন্ত আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাবো। সরে না দাঁড়ালেও তাদের নিষ্ক্রিয় করে ধানের শীষের প্রতীকের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করতে চেষ্টা করবো। ইতিমধ্যে নির্বাচন সমন্বয় টিম মাঠে কাজ শুরু করেছে। বিদ্রোহীদের বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপি কোনো অ্যাকশন নেবে না মন্তব্য করে মনোনয়ন প্রত্যয়নকারী এ নেতা বলেন, স্থানীয়ভাবেই বিদ্রোহীদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করা হবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে সমঝোতা না হলে অ্যাকশনও স্থানীয়ভাবে নেয়া হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো অ্যাকশন নেয়া হবে না। এদিকে রাজশাহীর নওহাটায় বিদ্রোহী প্রার্থী রফিকুল ইসলাম বলেন, জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। এখন পর্যন্ত প্রচারণায় আমিই এগিয়ে আছি। লড়াইয়ের শেষ পর্যন্ত থাকবো। সমঝোতার প্রশ্নই আসে না। যেসব পৌরসভায় বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন: ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইলের সখিপুরে ছানোয়ার হোসেন সজীব, ময়মনসিংহের ভালুকায় মফিজ উদ্দিন সরকার, ফুলবাড়ীয়ায় চাঁন মাহমুদ, শেরপুরের শ্রীবর্দীতে আবু রায়হান আল বিরুনী, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে আনোয়ার আলী মৃধা রতন, নরসিংদীর মনোহরদীতে আবদুল খালেক, জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে রহুল আমিন সেলিম ও শহিদুল ইসলাম ভিপি শহিদ, নারায়ণগঞ্জের তারাবতে শফিকুল ইসলাম, রাজশাহীর নওহাটায় রফিকুল ইসলাম, কাটাখালীতে সিরাজুল ইসলাম, তানোরে ফিরোজ সরকার, চারঘাটে কায়েম উদ্দিন ও আড়ানীতে নজরুল ইসলাম, বগুড়ার নন্দিগ্রামে আবুল কাশেম ও কামরুল হাসান জুয়েল, শিবগঞ্জে তাজুল ইসলাম, জয়পুরহাটের কালাইয়ে আনিসুর রহমান তালুকদার, চাঁপাই নবাবগঞ্জ সদরে আবদুল মতিন, পাবনা সদরে কামরুল হাসান মিন্টু, সুজানগরে কামাল হোসেন বিশ্বাস, সাঁথিয়ায় সাইফুল ইসলাম ও আশিক ইকবাল রাসেল, চাটমোহরে আবদুল মান্নান, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে হাসিন আফরোজ চৌধুরী ও জাকারিয়া হাবিব বিপ্লব, বড়লেখায় মতিউর রহমান ইরাজ, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে হাজি আবদুল মজিদ, চট্টগ্রাম বিভাগের পটিয়ায় মোহাম্মদ ইব্রাহিম, রাঙ্গামাটি সদরে রবিউল আলম রবি, কুমিল্লার দাউদকান্দিতে নুরুল আমিন সরকার নাঈম, হোমনায় হানিফ মিয়া ও আলমগীর সরকার, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে হেলাল উদ্দিন মজুমদার, যশোরের বাঘারপাড়ায় আবু তাহের সিদ্দিক। ১৭ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে