২৬ মন্ত্রী–সাংসদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে ইসি!
হারুন আল রশীদ: পৌরসভা নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সাংসদ মিলিয়ে ২৬ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনকে ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় এবং এসব ক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ওপর আস্থা রাখতে না পেরে কমিশন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আজ কমিশনের বৈঠকে তাঁদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সরাসরি নির্দেশ দেওয়া হবে।
এ ছাড়া শেষ মুহূর্তে আদালতের নির্দেশে যেকোনো পৌরসভার নির্বাচন আটকে যেতে পারে অথবা তড়িঘড়ি ব্যালট পেপার ছাপতে গেলে বিষয়টি পুরো নির্বাচনব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে—এ আশঙ্কায় কমিশন দুই শতাধিক প্রার্থীর প্রার্থিতা বৈধ করার বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, আর রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ওপর নির্ভর করা হবে না। অপরাধী ব্যক্তি যত বড়ই হোন না কেন, হোক তিনি মন্ত্রী-সাংসদ, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এখন থেকে সরাসরি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে। প্রয়োজনে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হবে।
কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, কমিশনের এ সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। তবে সিদ্ধান্তটি যখন নেওয়া হয়েছে, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
তফসিল ঘোষণার পর থেকে কমিশন নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তা জানতে চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু তাতে বেশির ভাগ রিটার্নিং কর্মকর্তা সাড়া দেননি। অনেকেই বলেছেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু দেশজুড়ে নির্বাচনী সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় কমিশন এখন আর রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। যে কারণে তারা মন্ত্রী-সাংসদদের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংকলন করে কমিশন আচরণবিধি লঙ্ঘনকারী মন্ত্রী-সাংসদদের তালিকা তৈরি করেছে।
এ তালিকায় আছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ ও খাদ্য প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এবং সাংসদদের মধ্যে ফরিদুল হক খান, আবদুর রহমান, সোহরাব উদ্দিন, আবদুল কুদ্দুস, এম এ মালেক, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, নাহিম রাজ্জাক, আবু জাহির, হাসিবুর রহমান, আয়শা ফেরদাউস, আবদুর রউফ, মমতাজ বেগম, দিদারুল আলম, নাজমুল হাসান, আনোয়ারুল আবেদীন খান, কবিরুল হক, শওকত হাচানুর রহমান, শফিকুল ইসলাম, আফজাল হোসেন ও এনামুল হক। তবে তাঁদের মধ্যে কয়েকজনকে কমিশন আগেই সতর্ক করেছে, যে কারণে চূড়ান্ত তালিকা থেকে তাঁদের নাম বাদ যেতে পারে।
জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এসব করে কোনো লাভ হবে না। নির্বাচনী সহিংসতা ও মানুষের মৃত্যুর দায় রিটার্নিং কর্মকর্তার ওপর বর্তাবে না। কমিশনকেই বহন করতে হবে। সে জন্য কমিশনের উচিত হবে যেসব জায়গায় গন্ডগোল হয়েছে, সেখানে নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া এবং প্রয়োজনে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করে দেওয়া। এটা করা হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচনের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই কমিশনের হাতে এসে যাবে।
৫ ও ৬ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে ১৫৭ জন মেয়র প্রার্থীসহ মোট ৮৯৭ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। তাঁদের মধ্য হাইকোর্ট অন্তত ১০ জন মেয়র প্রার্থীসহ দুই শতাধিক কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন। শুরুতে কমিশন হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। গতকাল কমিশন সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে।
জানতে চাইলে কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, ৩০ ডিসেম্বর ভোট হবে। আদালত বসবেন ২৯ ডিসেম্বর। ওই দিন আদালত কোনো পৌরসভা সম্পর্কে ভিন্ন কোনো রায় দিলে তখন কি এক রাতের মধ্যে নতুন ব্যালট পেপার ছাপিয়ে পরের দিন ভোট গ্রহণ করা সম্ভব হবে? এ প্রশ্নে কমিশন আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে।-প্রথম আলো
২৪ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪ডটকম/জুবায়ের রাসেল