পৌর নির্বাচনের পরিণতি নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি
নিউজ ডেস্ক : সরকারি প্রভাব ও নির্বাচন কমিশনের নতজানু মনোভাবে আসন্ন পৌর নির্বাচনের পরিণতি নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। দলটি অভিযোগ করেছে, নির্বাচন কমিশনের 'নির্লিপ্ততার' কারণে সারাদেশে নির্বাচনী সংঘাত ও সন্ত্রাস বাড়ছে।
শনিবার রাতে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রামে নির্বাচনী প্রচারে থাকা চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর নাসিরউদ্দিন ও রুহুল আলম চৌধুরীর ওপর হামলার ঘটনা তুলে ধরে এই অভিযোগ করেন দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
বরিশালের মুলাদী, মোড়লগঞ্জ, ঝালকাঠির নলছিটি, নাটোরের সদর, শিংড়া, বড়াইগ্রাম, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জের তারাব, যশোর, কুমিল্লার দাউদকান্দি, চান্দিনা, জামালপুর, দিনাজপুর, নড়াইল, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন পৌরসভায় বিএনপি দলীয় প্রার্থীর প্রচারণায় হামলা, গাড়ি ভাংচুর, নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শনের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
রিজভী অভিযোগ করেন, ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণার সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা হামলা চালিয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি প্রার্থীদের নানা রকম হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। তিনি বলেন, 'মন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও মির্জা আজম নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন, নির্বাচন কমিশন মুখ ঘুরিয়ে আছে, কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। ফলে জনমনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে- পৌর নির্বাচন সর্বজনগ্রাহ্য হবে কি না।'
তিনি বলেন, 'আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর সন্ত্রাস ও হুঙ্কার সর্বস্ব রাজনীতির কাছে নির্বাচন কমিশনের নতি স্বীকার করার কারণেই ৩০ ডিসেম্বরের পৌর নির্বাচনের প্রাক্কালে খুন, জখম ও সহিংসতা বিস্তার লাভ করেছে। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন মহলের অন্যায় অসদাচরণ, ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, বিরোধী প্রার্থীদের মাইক ভাংচুর, লিফলেট-পোস্টার-ব্যানার ইত্যাদি ছিঁড়ে ফেলা ও অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটিয়ে এক ব্যাপক অনাচার-অপকীর্তি চালিয়ে দেশজুড়ে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়েছে সেটা আসন্ন নির্বাচনকে দখলে নেয়ারই কৌশল।'
তিনি বলেন, সরকারি অশুভ চক্রান্তের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে কমিশন যে সংকীর্ণ মনোভঙ্গি দেখাচ্ছেন তা দেশকে আরো নানা বিভাজনের পথে নিয়ে যাবে। তখন যে সংকট সৃষ্টি হবে তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'এসব অরাজকতা ও সন্ত্রাসের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে। সরকারের মুখাপেক্ষী এই কমিশনের মেরুদন্ডে শক্তি নেই বলেই পৌর নির্বাচনের প্রাক্কালে ধানের শীষের প্রার্থীর প্রচারণায় বিএনপির নেতানেত্রীদের ওপর চলছে লাগামহীন বর্বরোচিত আক্রমণ। আর যদি কমিশনের শক্তি থাকতো তাহলে যেসব অভিযোগ তাদের কাছে জমা হচ্ছিল সেই সব অভিযোগের প্রেক্ষিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারতেন। কারণ সংবিধান তাকে সেই স্বাধীনতা দিয়েছে।'
এদিকে সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে পৌরসভা নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় জনগণ অসন্তুষ্ট বলে দাবি করেন রিজভী। ইসি বিএনপিকে 'বাড়তি সুবিধা' দিচ্ছে বলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অভিযোগকে 'তামাশা' বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রিজভী বলেন, 'নির্বাচন কমিশন একটি নিষ্ক্রিয় ডাকঘর অর্থাৎ পোস্ট অফিসে পরিণত হয়েছে। পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্রে করে আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ অসংখ্য অভিযোগ কমিশনের পাঠানো হয় কিন্তু তারা নির্বিকার নিশ্চুপ থাকে। এই নতজানু ভূমিকার জন্য ছি ছি করছে মানুষ।' ফেনীতে বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে না দিয়ে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে রিজভী বলেন, 'মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন যে, নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে বেশি সুবিধা দিচ্ছে। তার এই বক্তব্যটিকে বছরের শ্রেষ্ঠ আলোচিত তামাশামূলক বক্তব্য ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারছে না মানুষ। মানুষ যেন অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে- কী কথা বলে! তার এই বক্তব্যে মনে হয়, ধান ক্ষেত বা ধানের গোলার নিরাপত্তাহীনতায় উদ্বিগ্ন হয়ে মুসিক বিলাপ করছে গৃহস্থের কাছে।'
প্রতিদিনই মন্ত্রী-এমপিরা নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ জানিয়ে আসা বিএনপি পৌর নির্বাচনের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন করে। - যায়যায়দিন
২৭ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস