সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৩:১৪:৫০

শেষ মুহুর্তের প্রচারণায় মুখরিত সারাদেশ

শেষ মুহুর্তের প্রচারণায় মুখরিত সারাদেশ

নিউজ ডেস্ক : আজ মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে নির্বাচনী প্রচারণা। তাই শেষ সময়ের প্রচারণায় মুখরিত এখন দেশের ২৩৪ নির্বাচনী পৌর এলাকা। ভোটারদের সহানুভূতি আদায়ে শেষ সময়ের সুযোগটুকু সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গণসংযোগ আর প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থী ও তাদের সহযোগী নেতাকর্মীরা। তাদের সঙ্গে আনন্দের অনুভূতি নিয়ে গভীর রাতে জাগছেন ভোটাররাও। তাই শেষ সময়ে সার্বজনীন উৎসবের মাত্রা পেয়েছে এই নির্বাচনী প্রচারণা। এদিকে স্থানীয় এ নির্বাচনের ফলাফল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যথেষ্ট প্রভাব ফেলবে তা বিবেচনায় রেখেই প্রধান দু'প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ বিএনপি ছক কষছে সর্বোচ্চ সতর্কতায়। আর ভোটাররাও হিসাব-নিকাষ মেলাচ্ছেন নানা দিক ভেবে। প্রচারণার ফুলঝুড়ি মুগ্ধ হয়ে শুনলেও কাকে ভোট দিলে এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি সমর্থিত রাজনৈতিক দলের সাফল্য ঘরে তোলা যাবে তার বিশ্লেষণও চলছে চুলচেরা। অন্যদিকে শেষ মুহূর্তের নির্বাচনী পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সতর্ক র‌্যাব-পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচনবিধি অনুযায়ী ৩০ ডিসেম্বর ভোট শুরুর ৩২ ঘণ্টা আগে যাতে সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা বন্ধ রাখা যায় সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখছে নির্বাচন কমিশন। পরস্পরের নজরবন্দি থাকছেন প্রার্থীরা। খোঁজ রাখছেন নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর প্রতিপক্ষের প্রার্থী বা তার সমর্থকরা কোথাও কোনোভাবে প্রচার-প্রচারণা চালান কিনা। ভোট বেচাকেনা ঠেকাতে গভীর রাত অবধি জাগছেন প্রতিদ্বন্দ্বীরা। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, নানা প্রতিবন্ধকতায় বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় মেয়রপ্রার্থীরা এতোদিন তোড়জোড়ে প্রচারণায় নামতে না পারলেও শেষ মুহূর্তে কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই পথে নেমেছেন। নিজেদের সুসংহত করার চেষ্টায় সফল হয়েছেন অনেকেই। তাই আত্মগোপনে থাকা বেশকিছু নেতাকর্মীও রাজপথে বেরিয়ে এসে তাদের সহযোগী হয়েছেন। হুজুগে পড়ে কোথাও কোথাও এ মিছিলে যোগ দিয়েছেন সাধারণ ভোটাররাও। বিএনপি সমর্থিত অধিকাংশ মেয়রপ্রার্থীর দাবি, আওয়ামী দুঃশাসনে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ তাদের পক্ষে ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন। তবে তারা নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। তাই শেষ মুহূর্তে তারা জোরেশোরে মাঠে নেমে ভোটারদের সাহস জোগাচ্ছেন। ক্ষমতাসীনদের চাপে কোণঠাসা হয়ে থাকলেও তারা নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে যাননি তার জানান দিতেও শেষ সময়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই দেশের অধিকাংশ পৌরসভাতেই নির্বাচনী মাঠ আওয়ামী লীগের দখলে থাকলেও শেষ সময়েও কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছে না তারা। তাই কোনো ধরনের গাফিলতি না দেখিয়ে বিরামহীনভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা। বিশেষ করে যেসব পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী কিংবা বিএনপির শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন ওইসব পৌরসভাতে প্রার্থীদের সঙ্গে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন স্থানীয় শীর্ষ নেতারা। তোড়জোড় প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি ভোটের দিনের নির্বাচনী মাঠ নিজেদের দখলে রাখার ছক কষতেও ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। তাদের সঙ্গে রাত জেগে নির্বাচনী শেষ সময়টুকু উৎসবমুখর করে তুলেছেন দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি দলসমর্থিত সাধারণ ভোটাররাও। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নীরবতায় গত কয়েকদিন নির্বাচনী পরিবেশ কিছুটা থমথমে থাকলেও শেষ মুহূর্তে তারা সরব হওয়ায় সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সব পৌর শহরই ছেয়ে গেছে ব্যানার ও পোস্টারে। মাইকিংয়ে কানপাতাও দায় হয়ে পড়েছে। তীব্র শীত উপেক্ষা করে কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে প্রার্থীদের গণসংযোগ। চায়ের দোকান, পাড়া-মহল্লার অলিগলি, অফিস-আদালত ও বাস-লঞ্চ ট্রেনে সবকিছু ছাপিয়ে এখন মুখ্য হয়ে উঠেছে নির্বাচনী আলোচনা। কে কাকে ভোট দেবেন তা প্রকাশ না করলেও কোন দলের প্রার্থীর অবস্থান কী তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছেন ভোটাররা। এদিকে ভোটাররা জানান, পৌরসভা নির্বাচন হলেও দেশজুড়ে বইছে জাতীয় নির্বাচনের উৎসবের আমেজ। কারণ দলীয়প্রার্থী মনোনয়ন থেকে শুরু করে প্রচার-প্রচারণা সবই হয়েছে সংসদ নির্বাচনের আদলে। এছাড়াও স্থানীয় এ নির্বাচনের প্রভাব পড়েছে জাতীয় রাজনীতিতে। সাধারণ ভোটারদের ভাষ্য, শুধু মেয়রপ্রার্থীরা দলীয় প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও কাউন্সিলর ও সাধারণ কাউন্সিলরদের মধ্যেও দুই-তৃতীয়াংশ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। এতে রাজনৈতিক দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরাও নির্বাচনী মাঠে জোরেশোরে নেমে পড়েছেন। তাই নির্বাচনী হাওয়ায় বইছে উৎসব আমেজ। এদিকে আজ মধ্যরাত থেকে নির্বাচনী সব পৌরসভাতেই বহিরাগতদের অবস্থানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। একই সময় থেকে ৩১ ডিসেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে মোটরসাইকেল চলাচলও। ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে ৩০ ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত ১২ ধরনের যানবাহন চলাচলেও জারি হচ্ছে বিশেষ নিষেধাজ্ঞা। অন্যদিকে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুত চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ থেকে চারদিনের জন্য মাঠে নামবে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা। এছাড়াও ২২৯টি পৌরসভায় আজ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপ-সচিব সামসুল আমল স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খানের কাছে পাঠানো হয়েছে। সোমবার থেকে ৩১ ডিসেম্বর এ সব পৌরসভায় চারদিনের জন্য মোট ১০২ প্লাটুন বিজিবি সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। তবে উপকূলীয় ছয়টি পৌরসভায় কোস্টগার্ড দায়িত্ব পালন করবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২০ জন ফোর্স দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রে কমপক্ষে পাঁচজন (অস্ত্রসহ) ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে কমপক্ষে ছয়জন (অস্ত্রসহ) পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, ভোটার সংখ্যা ১ লাখের অধিক হলে ২ প্লাটুন এবং যে সব এলাকায় ভোটার সংখ্যা ৫০ হাজারে অধিক সেখানে এক প্লাটুনের বেশি মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া ১০ হাজার ভোটার হলে এক প্লাটুনের কম বিজিবি দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতি প্লাটুনে গড়ে ৩০ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহসীন রেজা। তবে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের জোরালো দাবি সত্ত্বেও এবারের নির্বাচনে মাঠে থাকছে না সেনাবাহিনী। এদিকে ভোটগ্রহণ উপলক্ষে ভোটের দিন অর্থাৎ ৩০ ডিসেম্বর ২৩৪ পৌরসভায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কমিশন। এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে। গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে মাঠ পর্যায়ে ভোটের সামগ্রী সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে পৌঁছে দেয়া শুরু করেছে কমিশন। ভোটগ্রহণের দিনে সকাল থেকে সেগুলো কেন্দ্রে কেন্দ্রে বিতরণ করা হবে; বুঝিয়ে দেয়া হবে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এবার ২৩৪ পৌরসভায় ৬১ হাজার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। এরই মধ্যে তাদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। ভোটের আগের দিন তারা তাদের দায়িত্ব বুঝে নেয়ার পাশাপাশি রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে নির্বাচনী সামগ্রী বুঝে নেবেন। এবার প্রতি কেন্দ্রে ১ জন করে ৩ হাজার ৫৮২ জন প্রিজাইডিং অফিসার, প্রতি বুথে ১ জন করে ১৯ হাজার ১৮৭ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং প্রতি বুথে ২ জন করে ৩৮ হাজার ৩৭৪ জন পোলিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এদিকে দু'ধাপে পৌর নির্বাচনে মাঠে থাকবে ১ হাজার ২০৩ জন ম্যাজিস্ট্রেট। এর মধ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ৯৬৮ জন এবং বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট ২৩৫ জন। এছাড়াও গত ১৪ ডিসেম্বর থেকে আচরণবিধি তদারকিতে মাঠে রয়েছে ২৩৪ ম্যাজিস্ট্রেট। অন্যরা আজ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। -যায়যায়দিন ২৮ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে