নিউজ ডেস্ক : আগামী ১৪ দিন সত'র্কতার সঙ্গে স্রেফ দুটি শর্ত পালন করলে প্রাণঘা'তী করোনা ভাইরাসের সং'ক্র'মণ থেকে র'ক্ষা পেতে পারে বাংলাদেশ। শর্ত দুটি হচ্ছে- এক. বিদেশ থেকে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না ও দুই. ইতোমধ্যে বিদেশ ফেরতদের এবং তাদের সংস্পর্শে আসা লোকজনের যথাযথ প'দ্ধতি অনুসরণ করে আগামী ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক অথবা হোম কোয়ারেনটিন নি'শ্চি'ত করতে হবে।
এর অন্যথা হলে এ দেশে প্রাণঘা'তী ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে ভ'য়াব'হ এক বিপ'র্যয়ের মধ্যে পড়বে ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশ। দেশে গতকাল মঙ্গলবার আরও দুজন করোনা ভাইরাস আক্রা'ন্ত রো'গী শনা'ক্ত হয়েছে। এ নিয়ে শনা'ক্তকৃত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ জনে। এ ১০ জনের কেউ বিদেশ ফেরত, কেউবা তার পরিবারের সদস্য যিনি সংক্র'মিত হয়েছেন বিদেশ ফেরত লোকটির মাধ্যমে।
এর বাইরে এখনো পর্যন্ত দেশে আক্রা'ন্ত হননি কেউ। এ কারণেই দ্বিতীয় শ'র্তটি পালন করা অত্যা'বশ্যক। জানা গেছে, শুধু যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপের সব দেশ ও আমেরিকার সঙ্গে বিমান যোগাযোগ ব'ন্ধ হয়ে গেছে বাংলাদেশের। তবে এখনো থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে আকাশ যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। এসব দেশ থেকে যেসব প্রবাসী বাংলাদেশি ও বিদেশি বাংলাদেশে প্রবেশ করবেন, তারা করোনা ভাইরাস ছড়ানোর ক্ষেত্রে ঝুঁ'কির কারণ হতে পারেন।
গত আট দিনে লক্ষাধিক বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে দেশে ফিরেছেন। তাদের যথাযথ পদ্ধতিতে হাসপাতালে বা বাসায় কোয়ারেনটিনে রাখা খুবই জ'রুরি হয়ে পড়েছে। করোনা ভাইরাস মো'কাবিলায় এটিই এখন বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যা'লেঞ্জ বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। সারা দেশে এখন যারা হোম কোয়ারেনটিনে আছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই যথাযথভাবে কোয়ারেনটিনে থাকছেন না বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে।
আরও পড়ুন : এই ৮টি সমস্যার একটিও যদি থাকে, তাহলে করোনায় আপনার ঝুঁকি বেশি
কেউ কেউ কোয়ারেনটিনে থাকাবস্থায় বাজার-সদাই করছেন; বিয়ে বাড়ির ভিড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে জেল-জরি'মানাও করা হয়েছে। আইইডিসিআরের পরিচালক গতকাল প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, বাংলাদেশে আরও যে দুজনের শরীরে করোনা ভাই'রাস পাওয়া গেছে; তাদের একজন ইতালি ফেরত, অন্যজন এক মার্কিন-প্রবাসীর সং'স্পর্শে আসা বাংলাদেশি নাগরিক। আ'ক্রা'ন্ত দুজনকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আইইডিসিআরে গত ২৪ ঘণ্টায় কল করেছেন ৪২০৫ জন। এসব কলের মধ্যে করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত কলের সংখ্যা ৪১৬৪টি। আইইডিসিআরে সরাসরি এসেছেন ২০ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৬ জন এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেনটিনে আছেন ৪৩ জন। ইউরোপসহ করোনা আক্রা'ন্ত দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে আসায় নিষে'ধা'জ্ঞা জা'রি করেছে সরকার।
তিনি বলেন, গত সোমবার কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইটের পর আর কেউ বাংলাদেশে আসেননি। যারা এসেছেন, তাদের মধ্যে কারও করোনা সংক্র'মণ হয়ে থাকলে ২ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা পাবে। এই সময়ের মধ্যে করোনার ল'ক্ষণ প্রকাশ না পেলে পরে আর ভাইরাসটি ছড়ানোর ঝুঁ'কি থাকবে না। কারণ এখন বিদেশ থেকে আসা ব'ন্ধ রেখেছে সরকার, নতুন করে কেউ আসার কথা না।
আইইডিসিআরের এই পরিচালক আরও বলেন, ''ভাইরাসটি কমিউনিটি পর্যায়ে ছড়িয়েছে কিনা, তা শনা'ক্তকরণে আমরা পরীক্ষা করেছি। এ পর্যন্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। আমরা আমাদের পরীক্ষা অব্যাহত রাখব।'' ডা. ফ্লোরা যোগ করেন, ১৪ দিনের মধ্যে যারা এসেছেন, তাদের ক্ষেত্রে হোম কোয়ারেনটিন প্রযোজ্য। সিভিল সার্জনদের দপ্তর থেকে পাঠানো তথ্যাদির ভিত্তিতে দেশে যারা হোম কোয়ারেনটিনে আছেন, তাদের সংখ্যা আমরা জানিয়েছিলাম।
এর বাইরে কিছু জায়গা আছে, হোম কোয়ারেনটিন নি'শ্চিত করা যাচ্ছে না। তাই আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়েছি। যারা হোম কোয়ারেনটিনে থাকছেন না, তাদের বি'রু'দ্ধে প্রশাসন যে কোনো ধরনের আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে। হোম কোয়ারেনটিনই আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যা'লেঞ্জের বিষয়। তাই আমরা এ ব্যবস্থা নিয়েছি। স্থানীয় পর্যায়ে মোবাইল টিম বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।
তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পরামর্শ অনুযায়ী হোম কোয়ারেনটিনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যারা বিদেশ থেকে এসেছেন, তাদের হোম কোয়ারেনটিনের বিষয়টি যেন নি'শ্চিত করা যায়, আমাদের সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। যাদের বাড়িতে কোয়ারেনটিন করা সম্ভব নয়, আমরা তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেনটিনে রাখার ব্যবস্থা করছি।
আরও পড়ুন : জেনে নিন, শরীরের ভেতর কি ভাবে ঢুকে কোন কোন পথে আ'ক্রমণ চালায় করোনা?
গণমাধ্যমকর্মীদের সত'র্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আমরা দেখছি অনেক সংবাদকর্মী বিদেশ থেকে আসা লোকজনের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় তাদের খুবই কাছাকাছি অবস্থান করেন। কিন্তু তাদের উচিত অন্তত এক মিটার দূর থেকে কথা বলা। যেসব জায়গায় (হাসপাতাল ও কোয়ারেনটিনস্থল) সং'ক্র'মণ হতে পারে, আপনারা সেখানে যাবেন না। এরপরও যদি যেতে হয়, মাস্ক পরে যাবেন। গণজমায়েত ও জনসমাবেশের সংবাদ সংগ্রহের সময়ও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। যাদের এখন জ্ব'র, সর্দি, গলাব্য'থা ও শ্বা'সক'ষ্ট রয়েছে তারা গণপরিবহন ব্যবহার করবেন না।
অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, গার্মেন্টস মালিকরা আমাদের কাছে পরামর্শ চেয়েছেন তারা কী করবেন। আমরা বলছি- শুধু গার্মেন্টস নয়, যেসব অফিসে একসঙ্গে অনেক মানুষ কাজ করেন, কাছাকাছি বসেন, তাদের প্রতি পরামর্শ হচ্ছে- কর্মস্থলে প্রবেশের সময় করোনা ভাইরাসের লক্ষ'ণ-উপ'সর্গগুলো (জ্ব'র, কাশি, হাঁ'চি ও শ্বা'সক'ষ্ট) পরীক্ষা করে প্রবেশের সুযোগ দিন। যাদের মধ্যে ল'ক্ষণ বা উপ'সর্গ পাওয়া যাবে তারা বাড়িতে থাকবেন।
মালিকপক্ষ তাদের স্ব-বেতনে ১৪ দিন বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করবেন। যদি তাদের বেতন দেওয়া না হয়, তা হলে তারা তথ্য গো'পন করতে পারেন। এতে সেখানে করোনা ছড়ানোর ঝুঁ'কি থাকবে। এ ছাড়া আমাদের অনেক প্রতিষ্ঠানে বিদেশি বায়ার আসেন। আপাতত তারা যেন না আসেন। তারা যদি দাপ্তরিক কাজে এসেও থাকেন, তা হলে তারা যেন আমাদের যেখানে বেশি মানুষ কাজ করেন সেখানে না যান।
আর পড়ুন : করোনা সচেতনতায় রাস্তায় রাস্তায় মাস্ক বিতরণ করছেন কণ্ঠশিল্পী সিঁথি
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, বিদেশ ফেরত সবাইকে হোম কোয়ারেনটিনে থাকতে হবে। কোয়ারেনটিনে থাকা অবস্থায় যদি কারও করোনার লক্ষণ দেখা দেয়, তা হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরের হটলাইনে যোগাযোগ করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটালে সং'ক্র'মণ ব্যাধির আইন অনুযায়ী জেল-জরি'মানা করা হবে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন ভবনে সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষের উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের ১৭০টি দেশ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। এসব দেশ থেকে আসা অনেকেই বিমানবন্দরে প্রাথমিক চিকিৎসা না নিয়ে পালিয়ে গেছেন। তাদের চিহ্নিত করতে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ নিরা'পত্তার জন্য স্কুল-কলেজ ব'ন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী হু'শিয়া'রি দিয়ে বলেন, এখন যদি কোনো শিক্ষার্থী বাইরে ঘোরাফেরা করে, তা হলে তার বি'রু'দ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।