বুধবার, ২২ এপ্রিল, ২০২০, ০৩:৫৩:৩২

লাথি দিয়ে দরজা ভা'ঙার চেষ্টা অবুঝ সন্তানের, ভিতরে কাঁ'দছেন করো'নায় আক্রা'ন্ত চিকিৎসক মা!

 লাথি দিয়ে দরজা ভা'ঙার চেষ্টা অবুঝ সন্তানের, ভিতরে কাঁ'দছেন করো'নায় আক্রা'ন্ত চিকিৎসক মা!

নিউজ ডেস্ক : মা অন্য ঘরে, ছে'লে বায়না ধরেছে মায়ের কাছে যাবে। মে'য়ে বায়না ধরেছে মায়ের সঙ্গে ঘুমাবে। গত কয়েক সপ্তাহ চিকিৎসক মাকে খুব কমই কাছে পেয়েছে দুই সন্তান।

এখন তাদের মা বাড়িতে। এক ছাদের নিচে থাকলেও ভিন্ন রুমে মা। মায়ের সঙ্গে সন্তানদের দেখা নেই। দুই সন্তান এক রুমে। চিকিৎসক বাবা আরেক রুমে। এর আগে এমন নিঃসঙ্গ ব'ন্দি সময় কা'টাতে হয়নি তাদের।

গল্পটা আমাদের! এক চিকিৎসক দম্পতি ও তার সন্তানদের। তাদের এক শি'শুসন্তানের বয়স চার। মে'য়েসন্তানের বয়স সাত। এই বয়সে মায়ের বুকে ঘুমানোর কথা তাদের। মায়ের স্নেহমাখা হাত থাকার কথা তাদের মা'থায়।

কিন্তু তাদের নিঃসঙ্গ করে দিল করো'না। মায়ের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিল তাদের। একই বাড়িতে থেকেও আবদ্ধ নির্দিষ্ট একটি রুমে তাদের বসবাস। প্রিয় সন্তান বার বার আম্মু বলে ডাকে। একসময় ডাকে সাড়া দিলেও আরেক সময় সাড়া নেই। কারণ এতে সন্তানদের কাছে নিতে না পারার ক'ষ্ট বেড়ে যায়। এ অবস্থায় বুকে পাথর বাঁধলেন চিকিৎসক মা। সন্তানদের ভালোবাসা ভুলে কোয়ারেন্টাইনে থাকছেন তিনি। যাতে সন্তানদের গায়ে না লাগে করো'নার আঁচড়।

এই চিকিৎসক দম্পতি ও তার সন্তানদের এমন নিঃসঙ্গ ব'ন্দিদশার কথা তুলে ধরে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতা'লের ইন্টার্ন চিকিৎসক সুমন হুসাইন। সোমবার (২০ এপ্রিল) রাতে নিজের ফেসবুকে এই পোস্ট দেন তিনি।

পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘সব কিছুতেই পাহাড়সম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে করো'না। পরিবার-সমাজসহ দেশ-বিদেশে সবাই ব'ন্দি। বর্তমানে করো'না যোদ্ধারা পরিবার-সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবনযাপন করছেন। প্রিয় মা-বাবা, স্ত্রী'-সন্তানের সঙ্গে অনেকের দেখা হয় না বহুদিন। কথা হয় ফোনে, দেখা হয় দূর থেকে। মনের ভেতরে একটা অ'তৃপ্তি থেকে যায় প্রিয়জনের জন্য। তারপরও কিছুই করার নেই। কারণ সুযোগ পেলেই প্রিয়জনকে আ'ক্রান্ত করবে করো'না। বর্তমানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা খুবই জরুরি।’

এই চিকিৎসক আরও লিখেছেন, ‘বিষয়টি সাধারণ মানুষ কম বুঝলেও সবচেয়ে ভালো জানেন চিকিৎসকরা। ময়মনসিংহের এক নারী চিকিৎসক বুকে পাথর বেঁধে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। কিন্তু তার শি'শুসন্তান কোনোভাবেই মানতে পারছে না; মা বাড়িতে থাকার পরও কেন তার কাছে আসছে না। কেন দরজা বন্ধ করে রেখেছে মা। শি'শুটি মায়ের ঘরের দরজায় ধাক্কা দেয় বার বার। দরজা না খোলায় লাথি দিয়ে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে অবুঝ শি'শুটি। তবুও সাড়া-শব্দ নেই মায়ের।’

চিকিৎসক দম্পতির সন্তানের ছবি দিয়ে সুমন হুসাইন আরও লিখেছেন, ‘মা অন্য ঘরে, ছে'লে বায়না ধরেছে মায়ের কাছে যাবে। মে'য়ে বায়না ধরেছে মায়ের সঙ্গে ঘুমাবে। গত কয়েক সপ্তাহ চিকিৎসক মাকে খুব কমই কাছে পেয়েছে দুই সন্তান। এমনটা হয়নি এর আগে। দরজা ধাক্কায় সন্তানরা, মাকে ডাকে। চিকিৎসক বাবা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করে, ভেতর থেকে মা-ও বোঝায়। অবুঝ সন্তানরা বুঝে না তাদের মা করো'নায় আ'ক্রান্ত। ভেতরে মা কাঁদেন, যে মা একজন চিকিৎসক। রোগীর সেবা দিতে গিয়ে করো'নায় আ'ক্রান্ত তাদের মা। স্বামী-সন্তান দূরে রেখে তিনদিন ধরে কোয়ারেন্টাইনে এই চিকিৎসক।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘চিত্রটা কল্পনা করুন। বেশ ক'ষ্ট দিচ্ছে না গল্পটা? দারুণ না গল্প টা? এটা গল্প নয়, একটুও গল্প নেই। আমা'র অ'তি পরিচিত চিকিৎসক আপুর গল্প। গল্পটা সব চিকিৎসক মা-বাবার গল্প। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতা'লের গাইনি বিভাগের একটা ইউনিটের এক রোগীর করো'না পজিটিভ ধ'রা পড়েছে। আ'ক্রান্ত ব্যক্তির সংস্প'র্শে গেছেন সব চিকিৎসক-নার্স। তাদের সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে। পরীক্ষার পর জানা যাবে কতজন আ'ক্রান্ত।’

সুমন হুসাইন আরও লিখেছেন, ‘গাইনি বিভাগের প্রায় সব চিকিৎসকের দুই’একটা বাচ্চা আছে। ডিউটির সময় যখন কথা হয়; সবাইকেই একটা কথা বলতে শুনি, আমি মা'রা যাই কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমা'র বাচ্চাটার কী' হবে, আমা'র বাচ্চাদের কী' হবে?। যেদিন গাইনি বিভাগে করো'না রোগী শনাক্ত হয়েছে সেদিন কয়েকজন গাইনি চিকিৎসক বাসায় যাননি। তাদের একটাই চিন্তা; আমি ম'রে যাই, সমস্যা নেই। কিন্তু আমা'র বাচ্চাগুলোকে যদি আমা'র জন্য আ'ক্রান্ত হতে হয় তাহলে ম'রে গিয়েও নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না। আম'রা কেউ বাসায় যাব না।’

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে