মঙ্গলবার, ০৫ মে, ২০২০, ১১:৪৭:২৫

''বাবা মুক্তিযু'দ্ধে জীবন বাজি রেখেছিলেন আমি করোনায় জীবন বাজি রেখেছি''

''বাবা মুক্তিযু'দ্ধে জীবন বাজি রেখেছিলেন আমি করোনায় জীবন বাজি রেখেছি''

নিউজ ডেস্ক : সহকর্মীর স্ত্রীর পেটে সাত মাসের সন্তান। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই হঠাৎ করোনা ঝুঁ'কিতে চ'রমভাবে আ'ত'ঙ্কিত হয়ে পড়েন। স্বজনরা তাদের কাছে ভি'ড়ছেন না। সবকিছু শুনে ছু'টে গেলাম তাদের বাসায়। দ্রু'ত তাদের ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যাই। 

ঠান্ডা, জ্বর সর্দীর কথা শুনে চিকিৎসা না করেই করোনা রোগী ভেবে হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেয় তাদের। এরপর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই তাদের। সেখানে জ'রুরি বিভাগে নেওয়ার পর সবকিছু শোনেন ডিউটি চিকিৎসক। তবে এখানেও একই অবস্থা। শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা দেন তারা। পরে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়ার পর তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। 

তবে প্রাথমিক চিকিৎসায় তারা করোনায় আক্রা'ন্ত কিনা এখনও জানা যায়নি। এভাবেই একা'ন্ত আলাপচারিতায় বলছিলেন মানবপ্রেমী পুলিশ সদস্য মো. বাহাউদ্দিন। করোনার বি'ষা'ক্ত ছো'বলে দি'শেহা'রা-বি'পর্য'স্ত মানুষ যখন অসুস্থ স্বজনের কাছ থেকেও নিরা'পদ দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে এই অকু'তোভ'য় পুলিশ সদস্য নিজের জীবনের মায়া তু'চ্ছ করে সহকর্মীদের সেবায় বিরল দৃষ্টা'ন্ত স্থাপন করে যাচ্ছেন বিরামহীনভাবে। 

মানবপ্রেমী এই পুলিশ সদস্য মো. বাহাউদ্দিন ডিএমপির পাবলিক অ'র্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম-উত্তর) বিভাগের মেডিক্যাল সহকারী। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি বলেন, রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা তিনি করোনা ভাইরাসে আ'ক্রা'ন্ত পুলিশ সদস্যদের হাসপাতালে আনা-নেয়াসহ তাদের সার্বিক দেখভালের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন হাসিমুখে। সেহেরী খেয়ে ফজরের নামাজে পড়ে সহকর্মী সন্দে'হভাজন করোনা রোগীদের নিয়ে সেবা শুরু হয় তার। 

এরপর সারাদিন রোজা রেখে ইফতারের পরও ফুরসত নাই তার। এভাবে বিরামহী'নভাবে এ পর্যন্ত প্রায় ৮০ জন করোনা রোগীকে নিজের হাতে অ্যাম্বুলেন্সে তু'লে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন তিনি। তাদের অনেকেই এখুন সুস্থ। ভ'য়কে জয় করা মানবপ্রেমী এই পুলিশর সদস্যেরর সঙ্গে কথা বলে আরো জানা য়ায়, ভাইরাসজনিত কারণে বেশি দু'র্ব'ল হয়ে পড়া পুলিশ সদস্যদের তিনি নিজের কাঁধে তু'লে না'মিয়েছেন বহুতল ভবন থেকে, এরপর অ্যাম্বুলেন্সে তু'লে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। 

এ ছাড়া হোটেলে করোনা উ'পসর্গ নিয়ে যারা রয়েছেন সেসব পুলিশ সদস্যদেরও হাসপাতালে আনা নেওয়া, ওষুধ পথ্য দিয়ে সেবা করা, নিয়মিত খোঁ'জখবর রাখাসহ সার্বিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তিনি নীরবে সযত্নে। আর মানুষের পাশে থেকে সেবা দিতে গিয়ে তিনি নিজের সদ্যজাত কন্যা ও স্ত্রীকেও ঠিক মত সময় দিতে পারছেন না। মানব সেবাকে ক'ঠিন ত্যা'গ হিসেবে নিয়েছেন তিনি।

করোনা আক্রা'ন্ত পুলিশ সদস্যদের কাছে যেতে প্রথমদিকে খুব ভ'য় পেতেন জানিয়ে বাহাউদ্দিন আরো বলেন, দেশের এই চ'রম সং'কটে আমার পক্ষে আর বসে থাকা সম্ভব হয়নি। তাই দেশের এই দুর্যো'গময় পরি'স্থিতে সাধারণ মানুষের পাশে থাকার পাশাপাশি সহকর্মী পুলিশ সদস্যদের পাশে থাকতে পেরে নিজেকে আমি বাংলাদেশ পুলিশের একজন গর্বিত সদস্য মনে করছি। করোনার বিরু'দ্ধে যু'দ্ধ করতে গিয়ে আমার পুলিশের লোকজন যখন ব্যা'পকহারে ভাইরাসে আক্রা'ন্ত হচ্ছিলেন, তখন আমার মন থেকে সব ভ'য় দূর হয়ে যায়। আমি হাত গু'টিয়ে বসে থাকতে পারিনি।

করোনা আক্রা'ন্ত পুলিশের সেবায় নিজের আ'ত্মনিয়োগের কারণ ব্যখ্যা করে পুলিশ কনস্টবল মো. বাহাউদ্দিন বলেন, আমি একজন বীর মুক্তিযো'দ্ধার সন্তান। আমার বাবা মহান স্বাধীনতা যু'দ্ধে জীবন বা'জি রেখে যু'দ্ধ করেছেন। আমিও দেশের ডাকে করোনা যু'দ্ধে ঝা'পিয়ে পড়েছি। যথারীতি স্বাস্থ্যবিধি মেনে, পিপিই ও মাস্ক পরিধান করেই আক্রা'ন্তদের সেবা করে যাচ্ছেন।

করোনা রোগীর সং'স্প'র্শে যাওয়ার তার নিজের শারীরিক পরি'স্থিতি জানতে চাইলে স্ব'স্তি ফুটে ওঠে ২০১৫ সালে কনস্টবল পদে যোগদান করা বাহাউদ্দিনের চোখেমুখে। এত ঝঁ'কির মধ্যেও তিনি হেসে জানালেন, তিনি টেস্ট করেছেন। তার করোনা নেগেটিভ এসেছে। বাহাউদ্দিন বলেন, মানবসেবা শ্রেষ্ঠতম কাজ। পুলিশ সদস্যদের সেবায় মা'রা গেলে আমি শহীদের মর্যাদা পাবো। 

আর এই আত্মত্যা'গে বাহাউদ্দিনের ভূয়সী প্রশংসা করে পুলিশ কর্মকর্তা অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) রহিমা আখতার লাকি বলেন, বাহাউদ্দিনের সাহসিকতা ও দায়িত্বশীলতার প্রশংসা করে শেষ করা যাবে না। একটা বাচ্চা ছেলে হয়েও সে যে মাপের সাহ'সিকতা প্রদর্শন করে করোনা আক্রা'ন্ত পুলিশের সেবায় আ'ত্মনিয়োগ করেছেন, তা বর্ণ'নাতীত।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে