নিউজ ডেস্ক : সমুদ্রের প্রায় ৫ হাজার কিলোমিটার জুড়ে ছিল বিস্তৃতি। আঘা'তের লক্ষ্যবস্তু ছিল দুই দেশের বিশাল উপকূল। বাতাসের গতি কিংবা ঢেউয়ের তীব্রতা সবদিক থেকেই বিরল এক ঘূর্ণিঝড় ছিল সুপার সাইক্লোন আম্পান।
তবে এত শক্তিধর আম্পানকেও হার মানতে হয়েছে রয়েল বেঙ্গলের গর্ব সুন্দরবনের কাছে। তাই আবারো সবার কণ্ঠে উঠে এলো সুন্দরবন সংরক্ষণের আহ্বান। একসঙ্গে এত বিশাল উপকূলজুড়ে ঘূর্ণিঝড়ের বিস্তৃতি এর আগে দেখেনি কেউ। আঘা'ত হা'নার দীর্ঘ সময় পরও এমন শক্তি ধরে রাখারও নতুন নজির দেখালো সুপার সাইক্লোন আম্পান।
দীর্ঘদিন ধরে দেশের দুর্যোগ নিয়ে গবেষণা করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. বিশ্বজিৎ নাথ। তার মতে, বঙ্গোপসাগরের ইতিহাসে আম্পান একটি বিরল ঘূর্ণিঝড়। যা দীর্ঘসময় ধরে প্রভাব বিস্তার করেছে বিশাল এলাকাজুড়ে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ গবেষক ড. বিশ্বজিৎ নাথ বলেন, আম্পানের বিস্তৃত অন্যান্য ঝড়ের থেকে বেশি।
তবে সুন্দরবনের কাছে হার মেনেছে ক্ষমতাধর আম্পানও। এবার শুধু বুক পেতে সহ্য করা নয়, বরং ঘূর্ণিঝড়কে আড়াল থেকে প্রাকৃতিক প্রৎতিরোধ করেছে সুন্দরবন। যা বাংলাদেশমুখী এ ঝড়কে ভিন্নদিকে ঘুরিয়ে দেয়ার পাশাপাশি করেছে দুর্বলও। যার ফলে ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পেয়েছে পুরো দেশ।
ড. বিশ্বজিৎ নাথ বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন মাত্রার ঘূর্ণিঝড় হয়ে থাকে এর কারণে অভ্যন্তরীণ গঠন পরিবর্তন হওয়া স্বাভাবিক। এই পরিবর্তন হওয়ায় ঘূর্ণিঝড়গুলোর গতিপথও পরিবর্তন হতে বাধ্য।
সামুদ্রিক আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, সুন্দরবনের দিকে লো প্রেসার থাকায় সেদিকে আকৃষ্ট হয়ে ঝড়টি দুর্বল হয়ে যায়।
তবে জলবায়ুবিদরা বলছেন, এ দফায় আম্পান বিদায় নিলেও দিয়ে গেল বড় দুর্যোগের আভাস।
জলবায়ুবিদ ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, পরবর্তীতে ক্যাটাগরি ৪ এবং ৫ স্লাইকোনের শঙ্কা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া সাইক্লোনগুলো অনেক শক্তিশালী ও বৃষ্টিপাত নিয়ে হবে। সুন্দরবন বার বার আমাদের রক্ষা করলেও ঝড়ের পরে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বিপদ বাড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করে পরিবেশবিদরা বলছেন, পুরো উপকূলকে রূপ দিতে হবে অনেকগুলো সুন্দরবনে।
সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ বলেন, যতবার এই অঞ্চল দিয়ে ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায়, আমরা সুন্দরবনের অবদান সম্পর্কে বুঝে যাই।
দেশের স্বার্থে সুন্দরবনের আশপাশে পরিবেশবিধ্বংসী কার্যক্রম বন্ধেরও আহ্বান আবারো তুলে ধরলেন পরিবেশবাদীরা।