খালেদার বক্তব্যের ব্যাখ্যা
ঢাকা: এবার বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিল বিএনপি।
দলটির দাবি, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেওয়া ভাষণের একটি অংশের বিকৃত ব্যাখ্যা করে ক্ষমতাসীন মহল অপপ্রচার ও বিভিন্ন মতলবী কার্যক্রম শুরু করেছে। বিএনপি এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছে।
মঙ্গলবার রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
ওই বিবৃতিতে খালেদা জিয়া কেন ওই বক্তব্য দিয়েছিলেন তারও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের তালিকা ও পরিচিতি আজ পর্যন্ত সংরক্ষিত না থাকায় স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ বিভিন্ন শক্তি ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে নানা ধরনের তথ্য ও বিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। বিভিন্ন বইয়ে শহীদদের বিভিন্ন রকম সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘দেশনেত্রী তার বক্তব্যে সে বিষয়টিই তুলে ধরেছেন। এর মাধ্যমে তিনি মহান শহীদদের পরিচিতি ও প্রকৃত সংখ্যা নিরুপণের প্রয়োজনীয়তার দিকেই ইঙ্গিত করেছেন, যাতে তাদের উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করা যায়।’
বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘এর মাধ্যমে খালেদা জিয়ার শহীদদের প্রতি কোনো ধরনের অসম্মান প্রদর্শনের প্রশ্নই আসে না। যারা মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করেনি বরং ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সাজিয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করেছে এবং যারা প্রকৃত শহীদদের তালিকা ও পরিচিতি সংরক্ষণের মাধ্যমে তাদের সম্মানিত করতে চায় না, তারাই বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে বিকৃত ব্যাখ্যা করে অপরাজনীতিতে মেতে উঠেছে। আমরা তাদের এই হীন অপপ্রচার ও তৎপরতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, ‘ওই ভাষণে খালেদা জিয়া স্বাধীনতাযুদ্ধে মহান শহীদদের সংখ্যা নিয়ে যে বিভ্রান্তি ও বিতর্ক রয়েছে, রেফারেন্স হিসেবে সে কথার উল্লেখ করেছিলেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের ঘোষক জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল। মুক্তিযোদ্ধারা এই দলের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে খালেদা জিয়া নিজেও তার শিশুসন্তানদের নিয়ে দুঃসহ বন্দী জীবন কাটিয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ, শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা ও সম্মান দেওয়ার ব্যাপারটি তাই এই দলের কারো কাছ থেকে শিখতে হবে না।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করার উদ্দেশ্যে প্রথম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে তিনিই মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র সংরক্ষণ প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন।
ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াই মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করেছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহের সংরক্ষণ প্রকল্প গ্রহণ করেন। তার নির্দেশে ঢাকা সিটি করপোরেশনে সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ঢাকা মহানগরের প্রধান সড়কগুলোর নামকরণ করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নামে।
প্রসঙ্গত, ২১ ডিসেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, ‘বলা হয়, এত লক্ষ লোক শহীদ হয়েছে। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে যে, আসলে কত শহীদ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে, এটা নিয়েও বিতর্ক আছে।’
খালেদা জিয়ার এই বক্তব্যের পর এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। মঙ্গলবার সকালে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠন গুলশানে অবস্থান করে বক্তব্যের প্রতিবাদ জানায়। সেখান থেকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানানো হয়।
৩০ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ