বুধবার, ১০ জুন, ২০২০, ০৬:১০:৪২

পূর্ব রাজাবাজার লকডাউন, এলাকা থেকে অনেকেই চলে গেছেন

পূর্ব রাজাবাজার লকডাউন, এলাকা থেকে অনেকেই চলে গেছেন

ঢাকা : করোনা ভাইরাসের সং'ক্র'মণ রো'ধে ঘনত্ব বিবেচনায় রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এলাকা লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (৯ জুন) দিবাগত রাত ১২টা থেকে এই লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের স্থানীয় ২৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান ইরান। 

তিনি বলেন, ''আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ। এখন এই এলাকা থেকে কেউ বের হতে পারবে না এবং কাউকে প্রবেশ করতেও দেওয়া হবে না।'' লক ডাউনের প্রসঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব বিজয় তালকুদার জানান, কোভিড-১৯ রোগটি ছড়ানোর ক্ষমতা সাধারণত ১৪ দিন ধ'রা হয়। এই কারণে পূর্ব রাজাবাজারে আপাতত ১৪ দিন চলাচল বন্ধ থাকবে। তারপরও পরি'স্থিতি নিয়'ন্ত্রণে না হলে ২১ দিন পর্যন্ত অ'বরু'দ্ধ অবস্থা থাকতে পারে। 

এদিকে এই এলাকার লকডাউন বিষয়ক ঘোষণা আসার পর স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতি'ক্রিয়া দেখা দেয়। ফলে বুধবার বাসিন্দাদের মধ্যে অনেককে এলাকা ছাড়তে দেখা গেছে। মঙ্গলবার রাত ১০টা দিকে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পূর্ব রাজাবাজার মসজিদ গলির শেষ মাথায় বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। 

সেখানে লেখা আছে, ''করোনা ভাইরাস সং'ক্র'মণ প্রতিরো'ধে স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক পরীক্ষামূলক রেড জোন চি'হ্নিত করে পূর্ব রাজাবাজার এলাকা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। প্রবেশ নিষে'ধ।'' অপরদিকে গ্রিন রোডে অবস্থিত আইবিএ হোস্টেলের পাশের সড়কের প্রবেশপথও ব'ন্ধ করে রাখা হয়েছে।

ওই পথ দিয়ে চলাচলরত সাধারণ নাগরিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রাত ১২টার পর এই সড়ক দিয়ে আর কেউ বের হতে পারবেন না। পাশাপাশি প্রবেশও করতে পারবেন না। সেখানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। রাত সোয়া ১০টার দিকে ওই পথ দিয় বাসার মালামাল ভর্তি একটি ট্রাক বের হতে দেখা যায়। 

জানতে চাইলে ওই ট্রাকটির চালক জানান, লকডাউনের কারণে তারা আ'ত'ঙ্কিত রয়েছেন। তাই বাড়ির মালিক বাসা ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছেন। কারণ এই এলাকায় থাকলে তারা বের হতে পারবেন না, ফলে তাদের ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করতে সম'স্যা হবে।

এদিকে ওই এলাকার প্রধান সড়কটি ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বাসা-বাড়ির প্রধান ফটক ব'ন্ধ রয়েছে। তবে তখনও দুয়েকটি দোকান খোলা দেখা যায়। আরও দেখা যায়, কেউ কেউ তাদের দোকানপাটের মালামাল গুছিয়ে রাখার কাজ করছেন।

জানতে চাইলে সালেহা স্টোরের মালিক রিয়াদুল ইসলাম বলেন, ''১২টার মধ্যেই দোকান বন্ধ করে ফেলবো। কাল থেকে তো আর দোকান খোলা রাখা যাবে না। আসলে বলতে পারছি না কী হয়, কারণ দোকানে যেসব মালামাল আছে এগুলোর অধিকাংশই প'চনশীল। আর ইঁদুরে তো নষ্ট করবেই। সে কারণে ভ'য় হচ্ছে। এলাকা থেকে অনেকেই চলে গেছেন। আসলে এত দিন লকডাউন এটা কেউ মানতে পারছেন না।''

ইয়াছিন আরাফাত নামে এক শিক্ষার্থী জানান, তিনি অনেক দিন ধ'রেই এখানকার একটি বাড়িতে মেস বানিয়ে রয়েছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই তাদের এলাকাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে তারা সম'স্যায় পড়তে পারেন। সে কারণে অনেকেই বাসা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। আবার কেউ কেউ ঢাকার অন্য এলাকায় আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুদের বাসায় চলে গেছেন।

নাজিম উদ্দিন নামে স্থানীয় এক বাড়ির মালিক বলেন, ''সরকার নি'শ্চয়ই ভালোর জন্যই এটা করেছে। আমরাও চাই এই লকডাউন যাতে আগের মতো না হয়, সঠিকভাবে কার্যকর করে যদি এলাকাবাসীকে রক্ষা করা যায় তাহলে আমার মনে হয় কোনও সমস্যা হবে না।''

জানতে চাইলে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান ইরান বলেন, ''আমাদের সব প্রস্তুতি প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দুই দিকেই সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বেরও হতে দেওয়া হচ্ছে না। আসলে লকডাউন কী জিনিস তা এখনও বুঝতে পারছে না মানুষ। অনেকেই বের হয়ে গেছে এটা সত্য। কিন্তু আমি এখন থেকে অনেক ক'ঠো'র হয়েছি। কাউকে কোনও পাস দেওয়া হচ্ছে না।'

লকডাউন কার্যকরের বিষয়ে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) রুবায়েত জামান বলেন, 'এই এলাকার জন্য আমাদের বিশেষ নিরা'পত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাদা পোশাকে ও ইউনিফর্মধারী শতাধিক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এলাকার ভেতরে রাস্তা বিবেচনায় রেখে মোটরসাইকেল পেট্রোলিং ও ফুট পেট্রোলিং (পায়ে হেঁটে)-এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পুলিশের অপারে'শনাল গাড়িগুলো দিয়ে এলাকায় টহল দেওয়া হবে।'

এদিকে করোনা ভাইরাসের কমিউনিটি স্প্রেডিং বন্ধের জন্য সেনাবাহিনী ক'ঠো'র হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মেজর মুসফিক। পূর্ব রাজাবাজার এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, 'সরকারের নির্দে'শনা বাস্তবায়নে ক'ঠো'র নিয়'ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কমিউনিটি স্প্রেডিং বন্ধের জন্য আমরা হার্ড লাইনে যাচ্ছি।' পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় দুটি পেট্রোল টিম সার্বক্ষণিক থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে