বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০২০, ০৯:৪৫:৫৮

করোনায় ভিক্ষুক বাড়ছে সারা দেশে, শ্রমিকরাও ভিক্ষা করছেন!

করোনায় ভিক্ষুক বাড়ছে সারা দেশে, শ্রমিকরাও ভিক্ষা করছেন!

রুহুল আমিন রাসেল: মহামা'রী করোনাভাইরাসের প্র'ভা'বে কোনো ধরনের আয়-রোজগার বা কাজ না পেয়ে পথে পথে ভি'ক্ষা করছেন নিঃ'স্ব ও হ'তদ'রি'দ্ররা। তারা এখন গ্রাম থেকে শহরমুখী হচ্ছেন ভি'ক্ষাবৃ'ত্তিতে। লকডাউনের আগে রাজধানীতে তুলনামূলক ভি'ক্ষু'কের উ'পস্থিতি কম ছিল। কিন্তু এখন চারদিকে ভি'ক্ষু'কের হা'হাকার। পথে পথে মানুষ বসে আছেন ভি'ক্ষা আর ত্রা'ণের অপে'ক্ষায়। সারা দেশেই ভি'ক্ষু'ক বাড়ছে। বিভিন্ন পেশার শ্রমিকরা কাজ না পেয়ে এখন ভি'ক্ষা করছেন বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, লকডাউনে সারা দেশেই ভি'ক্ষু'ক বে'ড়েছে। সামনের দিনগুলোতে ভি'ক্ষুক আরও বাড়বে। এ সংখ্যা এখন প্রা'ক্ক'লন করা ক'ঠিন হলেও সং'ক'ট উ'ত্তরণে শ্রমিকদের জন্য ক'র্মসং'স্থান বাড়াতে হবে। এ উ'দ্যো'গ সরকারকে নিতে হবে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন অ'ন্বে'ষণের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, ম'হামা'রী করোনাভাইরাস উ'দ্বে'গ-উৎ'ক'ণ্ঠা এবং শ'ঙ্কা বা'ড়িয়েছে। পৃথিবীতে ন'জি'রবিহী'ন উৎপাদন ব'ন্ধ। এটি দিন আনা দিন খাওয়া, স'ঞ্চয়হীন মানুষের বড় ধরনের আয় কমিয়েছে। এই আ'পৎকা'লীন সময়ে সর্বজনীন আয়-সহায়তা ও কর্মসংস্থান ধ'রে রাখা এবং খাদ্য-সহায়তা নি'শ্চি'ত না করতে পারলে সামনে স্থি'তিশী'লতায় বড় রকমের টা'ন পড়বে। এবারের বাজেটে বর্তমানে দ'রিদ্র ও নতুন দরিদ্র মানুষের ভো'গব্য'য় বৃ'দ্ধির জন্য নগদ সহায়তা প্রদান এবং সর্বজনীন জীবন ও অ'ধিকারভিত্তিক সামাজিক নির্ভরতা কর্মসূচি নি'শ্চি'ত করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের এই অধ্যাপকের মতে, ভি'ক্ষুকদের আয়ের ওপর, কর্মের ওপর চা'প পড়লে উ'দ্বে'গ-উ'ৎক'ণ্ঠা বে'ড়ে যাওয়ায় সামাজিক স্থি'তিশী'লতায় ব্যা'ঘাত' ঘ'টতে পারে। এদিকে দেশে এখন প্রকৃত কত মানুষ ভি'ক্ষাবৃত্তি করছেন, এর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। এ নিয়ে কোনো জ'রি'পও হয়নি। এ প্রসঙ্গে ১৩ জানুয়ারি জাতীয় সংসদকে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে এখন আড়াই লাখের মতো ভি'ক্ষুক রয়েছেন, যা মোট জনসংখ্যার শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ। তবে বাংলাদেশে ভি'ক্ষুকদের সংখ্যা নির্ধারণের জন্য সমন্বিতভাবে কোনো জ'রিপ হয়নি বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পরিচালিত জ'রি'পের ত'থ্যের ভি'ত্তিতে ভি'ক্ষুকের সংখ্যার হিসাব দিয়ে বলেন, ওই হিসাবেই দেশে শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ মানুষ ভি'ক্ষাবৃ'ত্তির মাধ্যমে জীবিকা নির্বা'হ করে। 

ভি'ক্ষুক পু'নর্বা'সনে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও অ'লিগ'লির মোড়ে, মুদিদোকান, কাঁচাবাজার, ওষুধের দোকান, এটিএম বু'থ বা ব'ন্ধ হয়ে থাকা শপিং মলের সামনে এখন দেখতে পাওয়া যায় অসংখ্য অ'সহা'য় নারী। যারা কাউকে দেখলেই সাহা'য্য প্রা'র্থনা করছেন। সবার দ্বা'রে দ্বা'রে গিয়ে হাত পা'ত'ছেন। কেউ গাড়ির দরজা খু'ললে'ই সামনে গিয়ে দাঁ'ড়াচ্ছেন। এসব নারীর সঙ্গে শিশুসন্তানেরাও রয়েছেন। মায়ের সঙ্গে তারাও ক'রু'ণ চা'উ'নি নিয়ে তা'কিয়ে থাকছেন কিছু পাওয়ার আশায়। বেশির ভাগ মধ্যবয়সী এই নারীরা কখনই ভি'ক্ষুক ছিলেন না। তারা ছিলেন শ্রমজীবী। এতদিন যেসব নারী গৃহশ্রমিকের কাজ করতেন, তারাও এখন ভি'ক্ষা করছেন বা'ধ্য হয়ে। কারণ বাসাবাড়িতে গৃহশ্রমিকদের ছাঁ'টাই করা হয়েছে। ফলে করোনাকালে গৃহশ্রমিকরা এখন অ'ন্ধ'কার জীবনের স'ম্মুখী'ন হয়েছেন। জানা গেছে, মধ্যবয়সী এসব নারীর পোশাক-আশাক দেখেও কিছুটা আঁ'চ করা যায় যে তারা এর আগে এভাবে রাস্তায় নামেননি, তারা পেশাদার ভি'ক্ষুকও নন। শ্রমজীবী এসব নারী বিভিন্ন ধরনের কাজের সঙ্গেই স'ম্পৃ'ক্ত ছিলেন। অনেকটা সামাজিক মর্যাদা নিয়েই তারা জীবন যাপন করতেন। 

কিন্তু সময়ের ফে'রে এখন তাদের পথে না'মতে হয়েছে। কথা বলে জানা গেছে, এরা কেউ বাসাবাড়ির গৃ'হশ্রমিক, কেউ নির্মাণ/মাটিকাটা শ্রমিক, কেউ বিভিন্ন মার্কেটে আলু-পিয়াজ বাছাই করা, কেউ হোটেল রেস্টুরেন্টে মসলা তৈরি করতেন, কেউ বিভিন্ন দোকানে সেলাইশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। সামান্য যে বেতন পেতেন স্বামী আর নিজের আয় মিলিয়ে তারা ভালোই চলতেন। অনেকেই আবার বিধবা বা স্বামীপ'রিত্য'ক্তা হওয়ায় নিজের আয় দিয়েই ক'ষ্ট করে চ'লতেন। ক'ষ্ট হলেও মনে শান্তি ছিল এই বলে, চ'র'ম অনি'শ্চয়তা বলে কিছু ছিল না। সচল ঢাকা শহরে অন্তত এই নি'শ্চয়'তা ছিল যে কিছু একটা কাজ করলেই দুই পয়সা আয় করা যেত। দু’মুঠো ভাতের সং'স্থা'ন করা যেত। করোনাভাইরাসের কারণে এ রকম নিম্ন বা স্বল্প আয়ের এই শ্রমজীবী সংগ্রামী নারীদের জীবনে নে'মে এসেছে এক দু'র্বি'ষহ অবস্থা, ঘো'র অ'ন্ধকার। 

বাসাবাড়িতে গৃহশ্রমিকরা যেতে পারছেন না। নির্মাণশ্রমিক হিসেবে যারা কাজ করতেন তাদের কাজও বন্ধ। রাজধানীর ধানমন্ডিতে একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের নির্মাণশ্রমিক রাফেজা। খানিকটা লিকলিকে শরীর তার। দিনমজুর হিসেবে রাস্তার কাজ করতেন। মাটি কে'টে ট্রাকে তো'লা, খো'য়া ভা'ঙা, রাস্তায় বালু ফে'লা, ইট ফে'লা'র কাজ করতেন। প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দিনমজুরি পেতেন। কিন্তু করোনার কারণে সেই কাজ বন্ধ। আজিমপুরে বাসা ভাড়া করে থাকেন শিউলি। তার স্বামী অসুস্থ, দুই সন্তানের জননী। নিজে কাজ করতেন চাঁদনী চকে একটি পোশাকের দোকানে দর্জি হিসেবে। পোশাক সেলাই, ফুল তো'লা এসব কাজ করতেন। দিন হিসেবে মজুরি পেতেন। লেখাপড়াও জানেন তিনি। নিজের আয় করা টাকা দিয়ে সংসার চালাতেন। প্রতি মাসে ঘর ভাড়া তাকে দিতে হয় তিন হাজার টাকা। করোনার কারণে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিউলি ম'হাবি'পদে প'ড়েছেন। 

হাতিরপুলের গৃহশ্রমিক রিজিয়া এর আগে কখনই ভি'ক্ষাবৃ'ত্তি করেননি। ভূতের গলির একটি ফ্ল্যাটবাড়িতে কাজ করতেন। প্রতি মাসে বেতন হিসেবে সাড়ে চার হাজার টাকা পেতেন। কিন্তু করোনার কারণে সেই কাজ আ'পাত'ত ব'ন্ধ। 

রিজিয়া থাকেন ঢাকা উদ্যানে। ৬০ বছরের বেশি বয়স তার। সংসারে দুই নাতি রয়েছে। বৃদ্ধ স্বামীসহ পাঁচজনের সংসার। ন্যাশনাল আইডি কা'র্ড গ্রামের হওয়ায় কমিশনার অফিস থেকে কোনো ত্রা'ণ পাননি। কমিশনার অফিসে গিয়েছিলেন। কিন্তু আইডি কা'র্ড দেখার পর ফেরত পাঠানো হয়েছে তাকে। এ পর্যন্ত যতটুকু খাদ্য সহায়তা পেয়েছেন তা অচেনা মানুষদের কাছ থেকেই। কী করবেন রিজিয়া? সবকিছু ফে'লে রাস্তায় নে'মে'ছেন।-বিডি প্রতিদিন

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে