নাঈমুল ইসলাম খান : আমার জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃ'খ ও ক'ষ্ট এটি, ৭১ সালে আমার বয়স যখন এগার, সেই ছোট্ট আমিও বুঝতাম, স্বজনদের কথায় শুনতাম, বাবা শ'ত্রু পক্ষে। ৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ যেদিন কুমিল্লা শহর হা'না'দার মু'ক্ত হয়, বিজয়ী মু'ক্তিযো'দ্ধারা শহরে ঢোকে, সেদিনই আমাদের বাগিচাগাঁওয়ের বাসায় শহরের সুশোভিত সেরা বাগানের মাঝখানটায় বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে বাবার রাজনীতির বি'রু'দ্ধে আনুষ্ঠানিক বি'দ্রো'হ ঘোষণা করি।
বাবা নিজেও সেদিন দূরে দাঁড়িয়ে নিঃ'শব্দে পরা'জয় মেনে নেন। যখন বড় হয়েছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি তখন আমার সকল চিন্তা-কর্ম, অসা'ম্প্রদা'য়িকতা ও মু'ক্তিযু'দ্ধের চেতনায় উ'দ্বু'দ্ধ। ঢাকায় ছাত্রাবস্থায়ই জীবনের প্রথম চাকরি এডবেস্ট নামে বিজ্ঞাপনী সংস্থায়। এর পরিচালনায় তখন মু'ক্তিযু'দ্ধের ইতিহাসে খুব উজ্জল ব্যক্তিত্ব, ক্র্যাক প্লা'টুনের সা'হসী মু'ক্তিযো'দ্ধারা। বছর ১৯৮০। প্রধান কর্তা পিযুষ বন্দোপধ্যায়কে জানালাম আমার বাবা মু'ক্তিযু'দ্ধ বিরো'ধী ছিলেন। তিনি সেদিন অবা'ক হয়েছিলেন আমি কেন এ কথা বলতে গেলাম। বললেন কাজে মনোযোগ দিতে।
সাংবাদিকতা জীবনে যখন নিজেরাই পত্রিকা করেছি, সাপ্তাহিক খবরের কাগজ, দৈনিক আজকের কাগজ, দৈনিক ভোরের কাগজ তখন আমাদের সকল চেতনা, চিন্তা ও চর্চার কেন্দ্রে ছিলে মু'ক্তিযু'দ্ধ। আমরা সব সময়ই স্বাধীনতা বিরো'ধী এবং মানবতা বিরো'ধী অ'পরা'ধে অ'ভিযু'ক্তদের বিচারের দাবিতে ঐ'ক্যব'দ্ধ, অবিচল। মু'ক্তিযু'দ্ধকালে আমার বাবার যতো অ'পরা'ধ তারও ত'দ'ন্ত ও বিচার দাবিতে দ্বি'ধা করিনি। তিনি এখন প্রয়া'ত, তারপরও মরো'ণ'ত্তর বিচার যদি হয় তাতেও আমার সায় আছে।
আমার বাবা মা'রা গেছেন, ৭ মার্চ ১৯৯৮। আমি তার বড় সন্তান। তার জানাজা হয় কুমিল্লা শহরে, দেবিদ্বার উপজেলা সদরে এবং সবশেষে তার জন্মস্থান আব্দুল্লাহপুর গ্রামে। এই তিনটি জানাজায় প্রথামত সমবেত সকলের কাছে বাবার সকল ভু'ল-ত্রু'টির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছি এবং তার সকল দায়-দেনার দায়িত্ব নিজে গ্রহণ করেছি। কিন্তু প্রথার বাইরে গিয়ে প্রতিটি জানাজায় আমি মু'ক্তিযু'দ্ধের সময় বাবার কোনো কাজে বা কথায় কেউ সামান্য মনোক'ষ্ট পেয়ে থাকলেও তার জন্য বিশেষ করে ক্ষ'মা চেয়েছি।
সাংবাদিকতা জীবনে তারপর আমরা করেছি আরও কিছু সংবাদপত্র, দৈনিক আমাদের সময়, দৈনিক আমাদের অর্থনীতি, ইংরেজি দৈনিক আওয়ার টাইম, দৈনিক আমাদের নতুন সময় এবং অনলাইন পোর্টাল আমাদের সময়.কম। সবই অসা'ম্প্রদা'য়িকতা ও মু'ক্তিযু'দ্ধের প্রেরণায় উ'দ্বু'দ্ধ।
একজন মু'ক্তিযু'দ্ধ বিরো'ধীর সন্তান হিসেবে আমি সচেতনভাবে চেষ্টা করেছি র'ক্তস্না'ত মহান মু'ক্তিযু'দ্ধের চেতনায় উজ্জী'বিত এমন একজন নাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে, যেনো দেশের আরো অনেক মু'ক্তিযু'দ্ধ ও স্বাধীনতা বিরো'ধীর সন্তানদের জন্য নিজেকে উ'দহা'রণ হিসেবে তৈরি করি। মু'ক্তিযু'দ্ধ বিরো'ধীর সন্তানরাও মু'ক্তিযু'দ্ধের চেতনায় উজ্জী'বিত হোক এটা আমার প্রত্যাশা। আজ বিশ্ব বাবা দিবসে আল্লাহতালার কাছে প্রার্থনা আমার বাবার সকল অ'পরা'ধ ক্ষ'মা করবেন। আমিন। (এই লেখাটি ২১ জুন ২০২০, বিশ্ব বাবা দিবসে লেখা।)