শুক্রবার, ০৯ অক্টোবর, ২০২০, ০৩:২৯:৩৯

এই মুহূর্তে রাজনীতি নয়, দেশবাসীকে কিছু দিতে চাই: সোহেল তাজ

এই মুহূর্তে রাজনীতি নয়, দেশবাসীকে কিছু দিতে চাই: সোহেল তাজ

আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয় মেয়াদের প্রথম সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ এবার দেশের তরুণ ও যুবসমাজকে ভয়াবহ মাদকের ছোবল থেকে রক্ষায় জিম (শরীরচর্চা কেন্দ্র) খোলার উদ্যোগ নিয়েছেন। ধানমণ্ডির সাতমসজিদ রোডে পৈতৃক বাড়ির একটি ফ্লোরে ব্যক্তিগত এই জিমনেসিয়ামের উদ্বোধন হবে আজ শুক্রবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে। বাড়িটি জাতীয় নেতা, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের। একটি ডেভেলপার কোম্পানি আগের পুরনো বাড়িটি ভেঙে সেখানে ১৩ তলা ভবন নির্মাণ করেছে। সোহেল তাজসহ তার তিন বোন এই ভবনের অন্যতম অংশীদার। এর একটি ফ্লোরে তিনি জিম করেছেন।

সোহেল তাজ বলেন, ‘একটি সুন্দর সুস্থ সমাজ এবং একটি সুন্দর সুস্থ দেশ পেতে হলে প্রথমে আমার নিজেকে সুন্দর ও সুস্থ হতে হবে। শারীরিক ও মানসিকভাবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। ইচ্ছা থাকলে সবকিছুই সম্ভব। এই মুহূর্তে রাজনীতি নয়, আমার ইচ্ছা দেশের মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন করে তোলা। শুধু একটি সুস্থ জাতিই পারে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে। চলমান করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে মানুষকে, বিশেষ করে শহরবাসীকে আরো বেশি স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে। করতে হবে শারীরিক পরিশ্রম।’

এই মুহূর্তে রাজনীতি নয়, তাহলে ভবিষ্যতে রাজনীতি করার ইচ্ছা আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেটা ভবিষ্যৎই বলে দেবে।’ ভবিষ্যতে কে কী করবে তার সব আগে থেকে ঠিক করে রাখা সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।

বনানীর ডিওএইচএসের বাসায় সোহেল তাজ আরো বলেন, ‘আমি রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছি। তবে আমার কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। সেই প্রত্যাশা ও নিজের দায়বদ্ধতা থেকেই মনে করছি দেশের জন্য কিছু করা দরকার। এই মুহূর্তে স্বাস্থ্য সচেতনতা সবচেয়ে প্রয়োজন বলে মনে করছি। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। রাজনীতি মানেই দুর্নীতি নয়। রাজনীতি হচ্ছে একটা মাধ্যম। কিন্তু রাজনীতির বাইরে থেকেও কিছু করা যায়।’ তিনি বলেন, ‘গ্রাম পর্যন্ত ভয়াবহ মাদক ছড়িয়ে পড়েছে। এ থেকে তরুণ ও যুবকদের রক্ষা করতে হবে।’

সাবেক এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে শহরে ৪০ শতাংশ মানুষ বসবাস করে। তাদের বেশির ভাগই শারীরিক পরিশ্রম করে না বা সুযোগ নেই। সে কারণে বিভিন্ন রকম স্বাস্থ্যগত জটিলতার মুখে পড়তে হচ্ছে। ভয়াবহ করোনাভাইরাসে এসব মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।’ তার লক্ষ্য তরুণ ও যুবকদের পাশাপাশি শহরের মানুষকে শারীরিক পরিশ্রমে উদ্বুদ্ধ করা। এতে বিভিন্ন রোগে যে হারে মানুষ মারা যাচ্ছে, তা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

তাজউদ্দীনপুত্র বলেন, ‘আমি রাজনীতি না করলেও দেশবাসীর জন্য কিছু করতে হবে এমন চিন্তা থেকে নানা বিষয়ে সচেতনতামূলক নানা কর্মকান্ড করে যাচ্ছি। আর এভাবে সবাই এগিয়ে এলে দেশের চিত্র পাল্টে যাবে।’ সময়ের সবচেয়ে আধুনিক ব্যায়ামাগার বা জিমনেশিয়াম ‘ইন্সপায়ার ফিটনেস বাই সোহেল তাজ’ পরিচালনা করবেন সাবেক এই সরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী নিজেই।

অত্যাধুনিক সরঞ্জাম সমৃদ্ধ এই জিমনেশিয়ামটির সম্পর্কে সোহেল তাজ বলেন, একটি ব্যায়ামাগারের প্রধান বিষয় হচ্ছে সেখানে ব্যবহিত সরঞ্জামাধি। আর ঠিক সে কারণেই ‘ইন্সপায়ার ফিটনেস বাই সোহেল তাজ’ জিমনেশিয়ামটি সাজাতে ব্যবহার করা হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ও ব্যয়বহুল সরঞ্জামাদিগুলো দিয়ে। যেগুলো আমাদের দেশের অন্যসব জিমনেশিয়ামগুলোতে সচরাচর দেখা যায় না। তবে, এত উন্নতমানের জিনেশিয়াম হওয়া সত্যেও এখানের গ্রাহকদের তেমন বেশি খরচ করতে হবে না বলে জানালেন সোহেল তাজ।

তিনি বলেন, আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষ যেনো এখানে এসে ব্যায়াম করে তাদের স্বাস্থ্য সুন্দর রাখতে পারে। আমার উদ্দেশ্য এটা দিয়ে অর্থ উপার্জন নয়। তবে, সবকিছু মেইন্টেইন করতে কিছু অর্থের যোগান ত গ্রাহকদের ও দিতে হবে। কিন্তু, সেটা অন্যসব উন্নত জিমনেশিয়ামের তুলনায় অর্ধেক।

এ সময় তিনি সাংবাদিকদের সমগ্র জিমনেশিয়ামটি ঘুরে দেখান। ব্যায়ামাগারটির ভিতরের আবহওয়া ঠান্ডা রাখতে এয়ারকন্ডিশন ছাড়াও রয়েছে ‘এয়ার ফ্লোয়িং’ নামের বিশেষ প্রক্রিয়া। রয়েছে আধুনিক স্টিমরোম, পুরুষ এবং মহিলাদের জন্যে ব্যায়াম করার আলাদা ব্যবস্থা, নিউট্রিশিয়ান স্পেশালিষ্টসহ থাকছে স্বীকৃতপ্রাপ্ত ট্রেইনাররা।

সোহেল তাজ গাজীপুরের কাপাসিয়া আসন থেকে ২০০১ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করলে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তার জায়গা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু কিছুদিন পর তিনি প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর সংসদ সদস্যের পদ থেকেও পদত্যাগ করে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। তাকে নিয়ে মাঝেমধ্যে গুঞ্জন ছড়ায়, তিনি মন্ত্রিসভায় যুক্ত হচ্ছেন অথবা আওয়ামী লীগের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন।

অবশ্য সোহেল তাজ বলেছেন, ‘আমি দেশের মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন করে তোলার জন্য কাজ করতে চাই। এটাই এখন আমার প্রধান লক্ষ্য।’ এর অংশ হিসেবে গত বছর হটলাইন কমান্ডো নামে একটি টেলিভিশন রিয়ালিটি শো শুরু করেছেন বলে জানান তিনি।

সোহেল তাজের বয়স যখন ১১ বছর, তখন তিনি স্থূল স্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন। এ কারণে তার স্কুল গ্রিন হেরাল্ডের শিক্ষকরা তাকে ফুটবল খেলায় নিতেন না। এ নিয়ে তিনি তখন মন খারাপ করতেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রে ছাত্রাবস্থায় প্রবল ইচ্ছা নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে তিনি বেশি উপার্জনের জন্য দুটি কাজ করে টাকা জমান। ওই টাকা দিয়ে জিমে ভর্তি হন। তারপর এই দীর্ঘ সময় অভ্যাসটি ধরে রেখে তিনি নিজেকে সুস্থ রেখেছেন বলে জানান।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে