ক্ষমা নেই সেই মন্ত্রী-এমপিদের
রফিকুল ইসলাম রনি : দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে পৌরসভা নির্বাচনে যেসব মন্ত্রী-এমপি বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থীদের প্রকাশ্যে মদদ জুগিয়েছেন, শাস্তির খড়গ আসছে তাদের ওপর। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশ অমান্যকারী সেই ২০ মন্ত্রী-এমপির তালিকা এখন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে।
৯ জানুয়ারি শনিবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। আগামীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি সাংগঠনিক পদও হারাতে পারেন তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
দলীয় সূত্রমতে, দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু নিজ দলের কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি বিদ্রোহীদের পক্ষ নেওয়ায় বেশ কিছু পৌরসভায় দল মনোনীত মেয়র প্রার্থী জিততে পারেননি। তাই ব্যক্তিগত স্বার্থে যারা দলের ইমেজ নষ্ট করছেন তাদের শাস্তির আওতায় আনার কথা ভাবছেন দলের নীতিনির্ধারকরা।
আগামীতে ইউনিয়ন পরিষদ ও দ্বিতীয় দফা পৌরসভা নির্বাচনে যেন এমন জটিলতা সৃষ্টি না হয় সে জন্য এখনই দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চায় আওয়ামী লীগ। পৌরসভা নির্বাচনের পর দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত্ করে এ নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। এ সময় দলীয় প্রধান চরম অসন্তোষ প্রকাশ ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলেছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী এবং পৌরসভা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ওবায়দুল কাদের এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কোনো কোনো এমপি-মন্ত্রী বিদ্রোহীদের মদদ দিয়েছেন, সেসব দলীয় সভানেত্রীর নজরে আছে। তাদের ভবিষ্যত্ অনিশ্চিত। দলের আগামী কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, পৌরসভা নির্বাচনে যারা দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদদ দিয়েছেন তাদের নিয়ে দলের ভিতরে আলোচনা হচ্ছে। যারা এমপি-মন্ত্রী রয়েছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে না। এ ছাড়াও বর্তমানে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে ৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে।
আওয়ামী লীগের দুই সাংগঠনিক সম্পাদক জানিয়েছেন, পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রথমে বসে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল। অনেকেই কথা শুনেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে থেকেছেন। আমরা অনুসন্ধানে জানতে পেরেছি, তাদের পেছনে স্থানীয় এমপি, কেন্দ্রীয় ও কিছু কিছু জেলা নেতার ইন্ধন রয়েছে। পরবর্তীতে সেসব এমপি ও নেতাকে ডেকে সতর্ক করার পরও তারা মাঠে বিদ্রোহী জিইয়ে রেখেছেন। দলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ এবং অনুরোধকে যারা উপেক্ষা করেছেন তাদের একটি লিস্ট করা হয়েছে। সেগুলো যথাযথ জায়গায় (সভানেত্রীর কাছে) পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, কেন্দ্রীয়ভাবে সতর্ক করার পরও বিদ্রোহীকে সমর্থন দিয়েছেন জামালপুর-১ আসনের এমপি, সাবেক তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ। দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন শাহনেওয়াজ শাহেনশা। কিন্তু স্থানীয় এমপি মেয়র পদে চেয়েছিলেন তার ভাতিজা নুরুন্নবী অপুকে। দলের প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করলেও তার ভরাডুবি হয়েছে। এ জন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত হতে পারেন তিনি।
বরগুনা-১ আসনের অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। তিনি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যও। বরগুনা সদর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ। জেলা সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এমপির আস্থাভাজন বর্তমান মেয়র শাহাদাত হোসেন বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। যে কারণে এখানে দলীয় প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের জেলা দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ছিলেন শাহজাহান আলী সরকার পুতু।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের ভাই খাজা মইনউদ্দিন। এ পৌরসভায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র গোলাম মর্তুজা মানিক। নীলফামারীর জলঢাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ছিলেন আবদুল ওয়াহেদ বাহাদুর। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে এখানেও জয়ী হয়েছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ফাহমিদ ফয়সাল চৌধুরী। জানা গেছে, দলীয় প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ করে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হন আওয়ামী লীগ নেতা ইলিয়াস হোসেন বাবলু। বাবলুর প্রতি সরকারদলীয় সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফার সমর্থন ছিল বলে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড মনে করেন। একই অবস্থা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে। এ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ছিলেন আবদুল্লাহ আল মামুন। তার সঙ্গে স্থানীয় আলোচিত সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের বিরোধ ছিল।
এ কারণে লিটন বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করেন। লিটনের অনুসারী নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থীর হয়ে কাজও করেন। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী দুই মেয়র প্রার্থীই ধরাশায়ী হন। জয়ের মালা গলায় পরেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী। এ ছাড়াও বিদ্রোহীদের মদদদাতা ঝুঁকিপূর্ণ এমপিদের তালিকায় রয়েছেন চট্টগ্রাম-৪ আসনের দিদারুল আলম, চট্টগ্রাম-৬ আসনের এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৫ আসনের এমপি অধ্যাপক ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী, পাবনা-৩ আসনের মকবুল হোসেন, ঠাকুরগাঁও-১ আসনের রমেশচন্দ্র সেন, নড়াইল-১ আসনের কবিরুল হক মুক্তি, দিনাজপুর-১ আসনের মনোরঞ্জন শীল গোপাল, দিনাজপুর-৬ আসনের শিবলী সাদিক, গাইবান্ধা-৪ আসনের আবুল কালাম আজাদ, সুনামগঞ্জ-৫ আসনের মুহিবুর রহমান মানিক, সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের হাসিবুর রহমান স্বপনসহ প্রায় ২০ এমপি। -বিডি প্রতিদিন
৪ জানুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪ডটকম/এসএস/এসবি
�