‘দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি ও সামর্থ্য নেই’
নিউজ ডেস্ক : ভূমিকম্পসহ যে কোনো ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি মোটেও যথেষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, বাংলাদেশে সাত বা সাড়ে সাত মাত্রার কোনো ভূমিকম্প হলে শুধু রাজধানীর ৪ লাখের ভবনের মধ্যে ২৫ ভাগ ভবন ধসে পড়বে বা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিপুল সংখ্যক মানুষ। কিন্তু এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার মতো পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ও সক্ষমতা আমাদের নেই।
সরকার কমপ্রিহেনসিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম (সিডিএমপি) প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে দুর্যোগ পরবর্তী উদ্ধার কাজ ও সচেতনতা তৈরির জন্য ৬২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করা একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। কিন্তু সর্বশেষ তথ্য বলছে, এখনও এই সংখ্যা অর্ধেকও হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সর্বশেষ সাভারে রানা প্লাজা উদ্ধার কাজে স্বেচ্ছাসেবকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
নগর পরিকল্পনাবিদ ও ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের ভিসি অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ৬ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে যে ধরনের ক্ষতি হওয়ার কথা সে অনুযায়ী কম হয়েছে। গতকালের যে কয়জন নিহত ও আহত হয়েছেন সবাই আতঙ্কিত হয়ে। এটা সচেতনার অভাবে। ভূমিকম্পের সময় কী করতে হবে সাধারণ মানুষকে সেটা জানানো হয়নি।
তিনি বলেন, ঢাকা শহর অপরিকল্পিত। কোনো পরিকল্পিত শহরে যদি ভূমিকম্প পরবর্তী করণীয় না জানে তাহলে ক্ষয়-ক্ষতি যা হওয়ার তাই হবে। এজন্য ভূমিকম্পের সময় হুড়োহুড়ি না করে ঘরে শক্ত কোনো জায়গায় অবস্থান নিতে হবে। এজন্য জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, গতকালের ভূমিকম্পে ভবন ধসে একজন লোক মারা যায়নি। এটা খুব ভালো খবর। যারা মারা গেছেন ভয়ে। এটা খুব আতঙ্কের বিষয়। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ভবন ধসের চেয়ে আতঙ্কিত হয়ে মারা যাওয়ার সংখ্যাই বেশি হবে। এজন্য ভূমিকম্প পরবর্তী করণীয় তা জানাতে হবে। এটা কেবল সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সম্ভব। মানুষ জানে না ভূমিকম্প হলে কী করতে হবে।
তিনি জানান, সরকারি প্রকল্প কমপ্রিহেনসিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম (সিডিএমপি) আওতায় যে কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবক আছে কেউ কি তাদের কথা শুনে। বরং মানুষ একটু ভূমিকম্পের আওয়াজ পেলেই হুড়োহুড়ি শুরু করে। এতে প্রাণহানি বেশি হয়। এজন্য জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। আর ভূমিকম্পের পরবর্তী প্রস্তুতি অনেক ঘাটতি আমাদের আছে। জরুরি ভিত্তিতে এই দুর্যোগ মোকাবিলা প্রস্তুতি পর্যাপ্ত করতে হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারি বলেন, বাংলাদেশে ভূমিকম্পসহ যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি তেমন নেই। গতকালের ৬ দশমিক ৭ স্কেলের ভূমিকম্পের ভালো একটা লক্ষণ বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এই মুহূর্তে বড় চ্যালেঞ্জ মানুষকে সচেতন করা। যেটা এখন পর্যন্ত করা যায়নি। বরং ভূমিকম্পের সময় আতঙ্ক তৈরি করে হুড়োহুড়ি করে মানুষ আহত বা নিহত হচ্ছে। প্রচারণার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে হবে।
তিনি বলেন, ৭ মাত্রার উপরে ভূমিকম্প হলে রাজধানীতে ২৫% বাসা বাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হবে। আর ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে ৪ লাখের বেশি বিল্ডিং আছে। সে হিসেবে ৬০ লাখের বেশি লোকের মতো ক্ষয়ক্ষতি হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজেস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরিন, বলেন, দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি মোটেও সন্তোষজনক নয়। তিনি বলেন, তিন বছর আগেও দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি খুব ভালো ছিল না। সরকারকে দুর্যোগ মোকাবিলায় বাজেট বাড়ানোর পাশাপাশি সারা দেশে স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করতে হবে। -মানবজমিন
৫ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি