বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২১, ০৭:০৬:৫১

পিকে হালদারকে একান্তে পেতে লড়াই ছিল নাহিদা ও অবন্তিকার!

পিকে হালদারকে একান্তে পেতে লড়াই ছিল নাহিদা ও অবন্তিকার!

নিউজ ডেস্ক : অবন্তিকা ও রুনাই। দেশের আর্থিক খাতের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারকারী প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদারের দুই বান্ধবী। হালদারকে কাছে পেতে মরিয়া ছিলেন এ দু'জন। নিজের রূপ, যৌবন দিয়ে কাছে টেনে রাখতে চাইতেন। এ নিয়ে এক ধরনের যুদ্ধ চলছিল অবন্তিকা বড়াল ও নাহিদা রুনাইয়ের মধ্যে। কিন্তু দু'জনকেই একান্তে চাইতেন পি কে হালদার। 

একজনের অজান্তে অন্যজনকে নিয়ে অন্তরঙ্গ সময় কাটাতেন। চলে যেতেন দেশের বাইরে। অবন্তিকা ও রুনাইকে আলাদা আলাদাভাবে সঙ্গে নিয়ে প্রায় ২৫ বার সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেছেন পি কে হালদার। অবন্তিকা আর রুনাই এতটাই ক্ষমতাধর হয়ে ওঠেন যে একজন চালাতেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, অন্যজন চালাতেন পিপলস লিজিং। এই দুজনের কথায় হতো লিজিং কম্পানি দুটির ঋণ বিতরণ। 

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় আদালতে দায় স্বীকার করে পি কে হালদারের অন্যতম সহযোগী পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দীর ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। গত সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলাম তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। রিমান্ড শেষে এদিন আসামি উজ্জ্বল কুমারকে আদালতে হাজির করলে তিনি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হন। 

এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন। আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। জবানবন্দিতে উজ্জ্বল কুমার নন্দী বলেন, 'পি কে হালদার বিভিন্ন সময় আমাকে বিভিন্ন দেশে প্রমোদ ভ্রমণে পাঠাতেন। তার সঙ্গে তিনবার মালয়েশিয়ায় গিয়েছি। আমার সঙ্গে অমিতাভ অধিকারী, রাজীব সোমও মালয়েশিয়ায় যায়। একবার যাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। প্রতিবারই ভ্রমণের সব খরচ দিয়েছেন পি কে হালদার।'

জবানবন্দিতে উজ্জ্বল বলেন, 'পি কে হালদারের টাকায় আমি সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে গিয়েছি তিনবার। এসব ভ্রমণে আমার সঙ্গী হতো রাজীব সোম, অমিতাভ অধিকারী এবং পি কে হালদারের বান্ধবী অবন্তিকা বড়াল। পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠ দুই বান্ধবী অবন্তিকা বড়াল ও নাহিদা রুনাই। এই দুজনের সঙ্গে তিনি পৃথকভাবে ২০ থেকে ২৫ বার সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেছেন। পি কে হালদারকে নিয়ে এই দুজনের ছিল ব্যাপক প্রতিযোগিতা। ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে রুনাই ও অবন্তিকার সঙ্গে পি কে হালদার আলাদা আলাদা সময় কাটাতেন। আমরা রুনাইকে বড় আপা আর অবন্তিকাকে ছোট আপা ডাকতাম। কারণ রুনাই চালাত ইন্টারন্যাশনাল লিজিং আর অবন্তিকা চালাত পিপলস লিজিং।'

উজ্জ্বল কুমার নন্দী বলেন, ''পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান হওয়ার মতো যোগ্যতা আমার নাই। কিন্তু পি কে হালদার আমাকে ওই চেয়ারে বসিয়ে পরোক্ষভাবে তিনি সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। আমার আগে চেয়ারম্যান ছিলেন ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেম। তিনি পদ ছাড়তে অস্বীকৃতি জানালে পি কে হালদার ব্যাংক চেকের মাধ্যমে তাকে ১২ কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করেন।''

১৫৮টি ফাইল গায়েব হওয়ার বিষয়ে উজ্জ্বল কুমার বলেন, ''আমি ২০১৫ সালের নভেম্বরে পিপলস লিজিংয়ে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাই। পি কে হালদারের কথামতো ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়, দিয়া শিপিং ও এমটিবি মেরিনকে ঋণ দিই। প্রকৃতপক্ষে দিয়া শিপিং নামের কোনো কম্পানি নেই। পরে জানতে পারি জমি আছে। ঋণের পুরো টাকাই এই দুই প্রতিষ্ঠানে না গিয়ে এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের বিভিন্ন ঋণ পরিশোধ হয়েছে। পরে জানতে পারি, ১৫৮টি ফাইল আমার সময়ে গায়েব হয়েছে। আমি আমার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি।''

জবানবন্দিতে তিনি আরো বলেন, ''পিপলস লিজিং অবসায়নের জন্য শুধু আমিসহ বর্তমান পর্ষদ দায়ী নয়। আগের পর্ষদও দায়ী। পিপলস লিজিং থেকে সাবেক চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেমসহ সাবেক পরিচালকরা বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন। ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ পর্যন্ত লিজ, ঋণ ও অ্যাডভান্স খাতে ফিন্যানশিয়াল স্টেটম্যান্টে ১১৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকার বেশি দেখানো হয়েছে। আর ভুয়া ও অস্তিত্বহীন লিজ ফাইন্যান্সের মাধ্যমে ১৯১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টার্ম লোন ২০৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা কম দেখানো হয়। 

এর মধ্যে ২৫ কোটি টাকার ট্রেজারি লোন আর্থিক বিবরণী থেকে মুছে ফেলা হয়। কল লোন ও ওভারড্রাফট ৭৪ কোটি টাকা কম দেখানো হয়। সামসুল আলামিন রিয়েল এস্টেটে পিপলস লিজিং থেকে আড়াই কোটি করে পাঁচ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে ট্রানজেকশন হলেও ওই ফাইল গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ডিপোজিট ও ধারের ওপর সুদ ১১১ কোটি টাকার বেশি দেখিয়ে নিজেরা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যানসহ পরিচালকরা। ফলে ওই সময় সম্পদ বেশি দেখানো হয় ৩০৯ কোটি টাকা আর দায় কম দেখানো হয় ৮৮৭ কোটি টাকা। এসব অপকর্ম ঢাকতে ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর অডিটের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নরসহ সিন্ডিকেটকে ছয় কোটি ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়া হয়।''

এসব বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন পি কে হালদারের সহযোগী পিপলস লিজিং'র চেয়ারম্যান উজ্জল কুমার নন্দী। সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে দেয়া তথ্য ও আদালতে দেয়া জবানবন্দি সূত্রে জানা গেছে দুই বান্ধবীর সঙ্গে পি কে হালদারের প্রেম-ভালোবাসা, অন্তরঙ্গতাসহ বেপরোয়া যৌন জীবন সম্পর্কে। বিপুল অবৈধ অর্থের মালিক পি কে হালদার অবাধে টাকা ব্যয় করতেন। যে কারণে তাকে শারীরিক-মানসিকভাবে সুখে রাখতে প্রতিযোগিতা থেকে এক ধরনের যুদ্ধে অবতীর্ণ হন অবন্তিকা ও রুনাই। সূত্র : কালেরকণ্ঠ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে