ছাত্র সংঘ থেকে যেভাবে জামায়াতের আমীর হলেন নিজামী
নিউজ ডেস্ক : মতিউর রহমান নিজামীর শিক্ষা জীবনের বড় অংশই কেটেছে মাদ্রাসায়। শুরুতে বাংলা মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েছিলেন বছর খানেক।
এরপর থেকে স্নাতক পর্যন্তই তিনি মাদ্রাসায় পড়েছেন।ষাট এর দশকের শেষে কামিল পাশের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেন।
মি: নিজামীর ছেলে নকিবুর রহমান জানিয়েছেন, তাঁর বাবার শৈশব-কৈশোর কেটেছে পাবনার সাথিয়ায়।
তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর পাবনার সাথিয়ার সাধারণ মানুষ দীর্ঘ সময় তাদের এলাকায় মতিউর রহমান নিজামীকে দেখেননি।
জেনারেল এরশাদের সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময় জামায়াতে ইসলামী সাথিয়াসহ পাবনা অঞ্চলে আবারও সংগঠনকে শক্তিশালী করার চেষ্টা চালায়।
এরই মধ্যে মি: নিজামী জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল হলেও সাথিয়া-বেড়া এলাকায় মাঠপর্যায়ে তাঁর সরাসরি কর্মকাণ্ড শুরু হয় এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ।
সাথিয়ায় যে ইউনিয়নে তাঁর বাড়ি , সেই ধোপাদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন আহমেদ খান বলছিলেন,তিনি নিজেও সেই নির্বাচনকে ঘিরেই জানতে পারেন মি: নিজামী সম্পর্কে।
৯১ সালে মি: নিজামী সাথিয়া এবং বেড়া এলাকা নিয়ে পাবনা-১ আসনে সংসদসদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর ২০০১ সালে জামায়াত বিএনপির সাথে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করলে একই আসনে নির্বাচনে জয়ী হয়ে সেই জোট সরকারে মি: নিজামী প্রথমে কৃষি এবং পরে শিল্প মন্ত্রী হয়েছিলেন।
তিনি ষাটের দশকে মাদ্রাসার ছাত্র থাকার সময়ই জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন।
৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মি: নিজামী ছাত্র সংঘের সভাপতি ছিলেন। নকিবুর রহমান বলেছেন, তাঁর বাবা ধাপে ধাপে মুল দল জামায়াতের আমীর হয়েছেন।
গোলাম আযম জামায়াতের আমীরের পদ থেকে অবসর নেয়ার পর ২০০০ সালে ঐ পদে আসেন মতিউর রহমান নিজামী। সেই থেকে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি জামায়াতের আমীর হিসেবে রয়েছেন।
তাঁর বিরুদ্ধে বিচারে বড় অভিযোগ এসেছে, ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছাত্র সংঘের নেতা হিসেবে আল বদর বাহিনী গঠন করেছিলেন।
আল বদর বাহিনীর বিরুদ্ধেই বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ গুরুতর মানবতাবিরোধী অপরাধগুলো সংঘটিত করার অভিযোগ রয়েছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলনকারী সংগঠন ৭১ এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা শাহরিয়ার কবিরের বক্তব্য হচ্ছে, ৯০ এর দশকের শুরুতে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গণআদালত করে গোলাম আযমের প্রতীকী বিচারের পর মি: নিজামীসহ শীর্ষ পর্যায়ের ষোলোজনের বিরুদ্ধে তারা তদন্ত কমিশন করেছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে জামায়াত এবং ছাত্র-সংঘের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অনেকে দেশ ছেড়ে পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মতিউর রহমান নিজামীও ছিলেন।
তাঁর পরিবার দাবি করেছে, মি: নিজামী ৭৩ সালে গোপনে দেশে ফিরে রাজশাহী অঞ্চলে আত্মগোপনে ছিলেন।
স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াত নতুনভাবে সাংগঠনিক যে ভিত্তি দাঁড় করিয়েছে, সেজন্য মি:নিজামীর অবদানকে গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। যেমনটা বলছিলেন জামায়াতের সমমনা ইসলামী চিন্তাবিদ শাহ আব্দুল হান্নান।
মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে ৭১এর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রম চলেছে ২০১২ সাল থেকে।
অন্যদিকে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিগত জোট সরকারের সময় মি: নিজামী শিল্প মন্ত্রী থাকার সময় সরকারি সার কারখানার জেটিতে দশ ট্রাক পরিমাণ অস্ত্র আটকের যে ঘটনা ঘটেছিল, সেই মামলায় বিচারিক আদালত তাঁর ফাঁসির আদেশ দেয়। সূত্র : বিবিসি বাংলা
৬ জানুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসএম/ডিআরএ
�