বৃহস্পতিবার, ০৭ জানুয়ারী, ২০১৬, ০২:৩৮:৪৫

ইউপি নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সিদ্ধান্ত!

ইউপি নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সিদ্ধান্ত!

মাহমুদ আজহার : ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে (ইউপি) চেয়ারম্যান পদে গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন দেশের সর্ব-উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থানা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহাদাত হোসেন রঞ্জু। দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কুশলবিনিময় করছেন। গতকাল সন্ধ্যায় জানালেন, দলের হাইকমান্ড থেকে ইতিমধ্যেই তিনি প্রাথমিক সংকেত পেয়েছেন। খুব শিগগিরই সবুজ সংকেত পেয়ে ইউপি নির্বাচনে আটঘাট বেঁধেই মাঠে নামবেন। শুধু শাহাদাত হোসেন রঞ্জুই নন, তার মতো বিএনপির তৃণমূলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ধানের শীষ প্রতীকে লড়তে গণসংযোগ শুরু করেছেন। দলীয় প্রতীক পেতে কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, আগামী মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে সারা দেশে প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউপিতে ভোট করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পৌরসভার মতোই ইউপির চেয়ারম্যান পদে দলীয়ভাবে ভোট নেওয়া হবে। এতে ইসির নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা দলীয় প্রতীকে অংশ নিতে পারবেন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্দলীয় ব্যক্তিদের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকছে। বিএনপির সিনিয়র একাধিক নেতা জানান, ভোট ডাকাতির শঙ্কা সত্ত্বেও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে (ইউপি) লড়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ইউপি চেয়ারম্যান পদে সারা দেশে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা গ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে। পৌর নির্বাচনে অংশ নিতে গিয়ে ইউপি নিয়েও কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে খুব শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করবে বিএনপি। স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে অংশগ্রহণের নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা ইতিমধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনেই বিএনপি অংশ নেবে। অতীতেও নিয়েছে। আমরা জানি, এ সরকারের আমলে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তারপরও দেশের স্বার্থে গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্বাচনে অংশ নেব। এ সরকার যে বিনাভোটে নির্বাচিত, তা ইতিমধ্যে দেশ-বিদেশে প্রমাণ হয়ে গেছে। সর্বশেষ পৌর নির্বাচনেও নিজেদের আরও নগ্নভাবে প্রকাশ করেছে সরকার।’ সূত্রমতে, ইউপি চেয়ারম্যান পদে প্রত্যাশী বিএনপি নেতারা ঢাকায় বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের বাসায় বাসায় যাতায়াত শুরু করেছেন। পৌরসভা নির্বাচনে দলের প্রার্থী নির্বাচনের সময় অনেকেই দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে দেখা করে ইউপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। কেউ কেউ নেতাদের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। স্থানীয় বিএনপির মন জয় করার চেষ্টাও করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তবে পৌরসভার মতো প্রতিটি ইউপিতেই বিএনপির একাধিক প্রার্থী প্রচারণা চালাচ্ছেন। পৌরসভার মতো কেউ দলের মনোনয়ন না পেলে বিশাল একটি অংশ বিদ্রোহী হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মূল্যায়ন হলো, এ নির্বাচনে বিএনপির নৈতিক বিজয় হয়েছে। আওয়ামী লীগ হেরেছে। কারণ, যেভাবে ভোট ডাকাতি হয়েছে তা এদেশের সবাই দেখেছে। আন্তর্জাতিক মহলেরও নজর এড়ায়নি। আওয়ামী লীগের মতো একটি পুরনো দল এভাবে বারবার ভোট ডাকাতি করবে— তাতে সবাই আশাহত হয়েছে। তবে তরুণ প্রজন্মসহ সবাই এখন বুঝতে পারছে, আওয়ামী লীগের অধীনে আর কোনো দিন বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। সদ্য সমাপ্ত পৌর নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মো. শাহজাহান বলেন, ‘পৌর নির্বাচনে এ সরকার জনগণের সব আশা-আকাঙ্ক্ষা ধূলিস্যাৎ করে দিয়েছে। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আমরা গণতান্ত্রিক রাজনীতি করি। তাই ভোট কেন্দ্র ছিনতাই করে নিলেও সামনে ইউপিসহ স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সক্রিয় বিবেচনা রয়েছে। তবে এ নিয়ে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।’ বরিশাল জেলা উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, ‘সদ্য সমাপ্ত পৌর নির্বাচনে ভোট ডাকাতির দৃশ্য দেশ-বিদেশে সবাই দেখেছে। তারপরও দল ইউপি নির্বাচনে গেলে আমরা প্রস্তুত আছি। মোটামুটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি ৮০ ভাগ ইউপিতেই বিজয়ী হবে। কিন্তু এ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফলাফল যাই হোক, দলের হাইকমান্ড চাইলে ইউপি নির্বাচনে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত করব। বিডি প্রতিদিন ৭ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে