সংলাপের আশা করা যেতেই পারে
বিশেষ প্রতিনিধি : আওয়ামী লীগ ও বিএনপি রাজধানীতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করায় জনমনে স্বস্তি ফিরেছে। দুই দলেরই শীর্ষ পর্যায় থেকে ইতিবাচক রাজনীতির ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে এবং সংলাপের আহ্বান জানানো হয়েছে। এটাকে সুলক্ষণ হিসেবে দেখছেন রাজনীতির বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে, ইতিবাচক এ ধারা থেকেই সংলাপের পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে।
একই দিনে দুটি দলের সমাবেশে নেতাদের শান্ত, সংযত বক্তব্যের মধ্যে ইতিবাচকতার, সমঝোতার, শান্তিপূর্ণ রাজনীতির ইঙ্গিত রয়েছে বলেও অনেকে মনে করছেন।
প্রসঙ্গত, গত ৫ জানুয়ারি মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি রাজধানীতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে। জনমনে আতঙ্ক ছিল; শেষ পর্যন্ত সংঘাতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। দল দুটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বক্তব্য মানুষকে স্বস্তি দিয়েছে।
বিএনপির জনসভায় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। আওয়ামী লীগের জনসভায় সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ইতিবাচক রাজনীতির ধারাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান।
অনেকের মতে, এ ঘটনায় বড় দুটি দলের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা কিছুটা হলেও দূর হয়েছে। কেউ কেউ আশাবাদী হয়ে বলছেন, এর সূত্র ধরে সংলাপের পথ তৈরি হতে পারে।
শত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ মনে করেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্যের মধ্যে সংলাপের বীজ নিহিত আছে। এর পথ ধরে সংলাপের ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে পারে। তিনি বলেন, অনেক দিন সংঘাতের পর দুই দলই হয়তো বুঝতে পেরেছে, আর কত! তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করেছে বলেই মনে হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য বলেন, বড় দুটি দলের একই জায়গায় জনসভার অনুমতি চেয়ে পরে মত বদল করার ঘটনা খুবই ভালো লক্ষণ। তাদের বক্তব্যেও মনে হয় এক ধরনের যোগসূত্র আছে। অর্থাৎ এটি এমনি এমনি হয়নি। নিশ্চয়ই ভালো কিছুর সূত্রপাত এটি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান মনে করেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই দিনে নগরীতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করায় জনগণের মন থেকে কিছুটা হলেও টেনশন কমেছে। এটি তাদের শুভবুদ্ধির পরিচয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুই দল যদি এই স্বস্তির আবহ ধরে রাখতে পারে, তাহলে এর সূত্র ধরেই সংলাপের পথ বেরিয়ে আসতে পারে। তাঁর মতে, রাজনীতি ও গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের জন্য সংলাপ জরুরি। সংসদ, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসনসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের ওপর জনগণের আস্থা নেই। সংলাপের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা ফেরানো সম্ভব নয়।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের মতে, সমাবেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের নেতাদের ভাষা সংযত ছিল। এটি বড় ঘটনা। এর মধ্যে যোগসূত্র আছে কি না আরো কিছুদিন তাঁদের অবস্থান না দেখে তা বলা যাবে না। তার মতে, একদিনের বক্তব্য থেকে উপসংহার টানা মুশকিল। তবে এ ধারা অব্যাহত থাকলে সংলাপ বা আলাপ-আলোচনার পথ সৃষ্টি হতে পারে।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আগের ৫ জানুয়ারির মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি বলেই মানুষের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে কিছুটা আশাবাদ সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শাহীদুজ্জামান বলেন, গত ৫ জানুয়ারি হচ্ছে দুই দলের জন্য ভুলশুদ্ধি। দুই দলেরই শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। একটি বিষয় বুঝতে হবে, বাংলাদেশে এই দুই দলকেই হয় বিরোধী দলে বা সরকারে থাকতে হবে। এখনকার অবস্থা ভারসাম্যহীন। যতই বিদেশি মদদে কেউ ক্ষমতায় থাকুক না কেন, দেশে গণতন্ত্র কার্যকর নেই। এখন যাদের বিরোধী দল বলা হয়, তারা তো পারলে হাসিনার পা ধরে ঝুলে থাকতে চায়—শুধু মন্ত্রিত্বের জন্য। কার্যকর বিরোধী দল না থাকলে সরকারও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। তিনি বলেন, দুই দলের ৫ জানুয়ারির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেশের রাজনীতির জন্য অবশ্যই ইতিবাচক।
প্রবীণ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক ইতিবাচক বক্তব্য দিয়েছেন। বিএনপি নেত্রীও কিছু ইতিবাচক কথা বলেছেন। এখন বিএনপিকে তার রাজনৈতিক দর্শন পরিবর্তন করতে হবে। সংবিধানের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে হবে। এগুলো হলে ইতিবাচক ধারা রাজনীতিতে ফিরে আসতে পারে।
এ প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সংলাপ বা সমঝোতার ব্যাপারে আগাম খবর তার কাছে নেই। তবে দুই দলের একই দিনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ অবশ্যই ইতিবাচক ঘটনা। তার মতে, সরকারের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় হলে অবশ্যই এর সূত্র ধরে সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে পারে। বিএনপি সব সময় সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের কথা বলে আসছে। -কালেরকণ্ঠ
৭ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি