বৃহস্পতিবার, ০৭ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৬:০২:০৯

বাংলাদেশসহ হিমালয় অঞ্চল বিপজ্জনক ঝুঁকিতে!

বাংলাদেশসহ হিমালয় অঞ্চল বিপজ্জনক ঝুঁকিতে!

তৌফিক মারুফ : গত বছর ২৫ এপ্রিল নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর ভূমিকম্পের ঝুঁকি পরিস্থিতি নিয়ে শুরু হয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক পর্যবেক্ষণ। বেড়ে যায় বিভিন্ন সংস্থার নানামুখী তৎপরতা। যার মধ্য দিয়ে সামনের দিনগুলোতে হিমালয় অঞ্চলভিত্তিক দেশগুলোর ওপর ভূমিকম্পের বিপদ আরো তীব্র হওয়ার আশঙ্কা বড় হয়ে দেখা দেয়। বিশেষ করে পূর্ব ভারত, নেপাল, চীন এ ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকলেও জাপান, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, আফগানিস্তান ও ভুটান বড় বিপদে—এমন ইঙ্গিত উঠে আসে। গ্লোবাল সিসমিক হেজার্ড অ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রামের ম্যাপের দিকে তাকালেও ভারত-হিমালয় ও বাংলাদেশের অংশবিশেষের পরিস্থিতিকে বিপজ্জনক হিসেবে লাল রঙে চিহ্নিত করা আছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পর্যায় থেকে বিশ্লেষণে ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকে বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী এলাকায় যেকোনো ভূমিকম্পের প্রভাব বাংলাদেশে সব সময়ই পড়বে বলে অনেকটাই নিশ্চিত করা হয়। এমনকি বাংলাদেশের ভেতরে ভূস্তরে থাকা ছোট-বড় মিলিয়ে ১৮টি ফাটল বা চ্যুতি নিয়ে শঙ্কিত বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে বড় পাঁচটি চ্যুতি থেকে উৎপত্তিকৃত ভূমিকম্পের মাত্রা রিখটার স্কেলে ৮ ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও বেশ জোরালো। এরই মধ্যে গতকাল বুধবার ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সভায় দুর্যোগ বিশেষজ্ঞরা ভারতসহ গোটা হিমালয় অঞ্চলের টেকটোনিক প্লেটের ফাটলগুলো থেকে রিখটার স্কেলে ৮.২ মাত্রা বা তারও বেশি মাত্রায় ভূমিকম্পের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, যা নিয়ে গতকালই টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ পেয়েছে। অবশ্য গত বছর নেপালে ভূমিকম্পের পর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আসা জাপানের ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ড. সুয়োমেতো নাকাসি কাঠমাণ্ডুতে বসে কালের কণ্ঠ’র কাছে শঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশ একটা সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশে যেসব সক্রিয় বিচ্যুতি বিদ্যমান সেগুলো বাদেই হিমালয় অঞ্চলের বিপজ্জনক বিচ্যুতিগুলো থেকে ভূমিকম্প হলে এর প্রভাব খুব সহজেই বাংলাদেশের ওপর পড়বে। আর বারবার এমন পরিস্থিতি হতে থাকলে ঝুঁকি আরো বহুগুণ বেড়ে যায়। এই জাপানি বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশের উদ্দেশে পরামর্শ দিয়ে তখন বলেন, বাংলাদেশের উচিত পারিপার্শ্বিক অবস্থা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিজেদের সুরক্ষায় কার্যকর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া। তাতে অন্তত পক্ষে ভূমিকম্পের সময় ও পরে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব হবে। জাপানের ওই বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দিয়ে বলেন, প্রস্তুতি হিসেবে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনাগুলো অপসারণ করা খুবই জরুরি। এ ছাড়া ঘনবসতিপূর্ণ নগরায়ণ প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। ভবন বা অবকাঠামোগুলোকে ভূমিকম্পের ন্যূনতম ৭-৮ মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে তৈরি করতে পারলেও অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচানো যাবে। এদিকে গত সোমবার ভারতের মণিপুরের ইমফলের ৫৫ কিলোমিটার গভীরে উৎপত্তিকৃত ভূমিকম্পের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ের অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, দেশের ভেতরেই এখন কমপক্ষে পাঁচটি বড় ঝুঁকিপূর্ণ সক্রিয় চ্যুতি রয়েছে। এর সঙ্গে আরো ১৩টি ছোট ফাটল রয়েছে। এর মধ্যে আগে থেকেই ডাউকি ও মধুপুর নিয়ে ব্যাপক আশঙ্কা ছিল। আর আশপাশে বারবার ভূমিকম্পের ফলে বাংলাদেশে যেভাবে কম্পন উপলব্ধি হচ্ছে তাতে পরিস্থিতি আরো বেশি উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। কারণ বারবার এমন ঝাঁকুনিতে বাংলাদেশের ভূস্তরের প্লেটগুলোর গতি-প্রকৃতি আরো নাজুক ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। যুক্তরাজ্যের ভূবিজ্ঞানবিষয়ক অধ্যাপক ডেভিড রথারি সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, হিমালয়ের পর্বতগুলো ভারতীয় প্লেটের ওপর প্রবলভাবে ধাক্কা খাচ্ছে। যেখানে দুই থেকে তিনটি বড় ধরনের চ্যুতি রয়েছে। আর কিছু মৃদুগতিতে সঞ্চরণশীল চ্যুতিও রয়েছে। এসব কারণে এ এলাকায় বেশি ভূমিকম্প হচ্ছে।’ একই সূত্রের আরেক বিশ্লেষণে বলা হয়, মধ্য এশীয় টেকটোনিক প্লেটের (ভূত্বকের বিশাল খণ্ড) নিচ দিয়ে ভারতীয় প্লেটগুলো অতি ধীরে ধীরে ঢুকে যাওয়ার ফলে হিমালয় অঞ্চলের পর্বতগুলোর তৈরি। প্রতিবছর দুই ইঞ্চি করে এই প্লেট দুটি পরস্পরের দিকে সরে আসছে। এর ফলে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়। আর বারবারই এ অঞ্চলে ভূমিকম্প হতে থাকে। এর মধ্যে যেগুলোর মাত্রা বেশি আর গভীরতা কম সেগুলোতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতিও বেশি। ১৯৩৪ সালে বিহারে ৮ দশমিক ১ এবং ২০০৫ সালে কাশ্মীরে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার দুটি ভূমিকম্পে এক লাখেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, বাংলাদেশ লাগোয়া যেকোনো এলাকায় আবার কোনো কম গভীরতায় বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর বাংলাদেশের ভেতরে সক্রিয় থাকা কোনো চ্যুতি থেকে এমন ধরনের কোনো ভূমিকম্পের উৎপত্তি হলে তা হবে খুবই বিপজ্জনক।-কালেরকণ্ঠ ৭ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে