বুধবার, ৩১ মার্চ, ২০২১, ০৮:৫২:৩৯

পদত্যাগী সেই নেতার সঙ্গে বৈঠক শেষে যা বললেন হেফাজত নেতারা

পদত্যাগী সেই নেতার সঙ্গে বৈঠক শেষে যা বললেন হেফাজত নেতারা

নিউজ ডেস্ক: প্রায় ২ ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় হেফাজতের অনুরোধে নিজের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আমীর মাওলানা আবদুল আউয়াল। 

ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় হেফাজতের দুইজন যুগ্ম মহাসচিবের উপস্থিতিতে ওই বৈঠকে আব্দুল আওয়ালের মান-অভিমান ভাঙানো হয়েছে। 

বৈঠক শেষে হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আমীরে হেফাজত আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর নির্দেশে আমরা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল দেখা করতে এখানে এসেছি। কিছু ভুল বোঝাবুঝি ছিল আমরা তা মীমাংসা করেছি। আমাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুল আউয়াল হুজুর তার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন। 

এখন থেকে জেলা ও মহানগর নেতারা আগের মতোই একত্রে কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানিয়েছেন বিরোধ মীমাংসা করতে আসা কেন্দ্রীয় নেতারা।

এর আগে বুধবার বিকাল ৩টায় ডিআইটি মসজিদে আসেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব জুনায়েদ আল হাবিব ও মামুনুল হক। সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা মনির হোসাইন কাসেমী, ফজলুল করিম প্রমুখ। 

বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নেতারা নারায়ণগঞ্জের হেফাজত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে মহানগর ও জেলার নেতারা হরতালের দিনের পরিস্থিতি বর্ণনা করেন। 

শেষে কেন্দ্রীয় নেতারা এ সময়ে কোনো বিরোধ না ঘটিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান করেন।

বৈঠক শেষে মামুনুল হক ব্রিফিংয়ে বলেন, মাওলানা আবদুল আউয়াল আগের মতোই দায়িত্ব পালন করবেন। সব ধরনের মান-অভিমান সব ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবেই কাজ করবে।

এ সময় গাড়ি পোড়ানো ও সহিংসতার বিষয়ে তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম কোনো প্রকার সহিংসতায় বিশ্বাসী নয়। হেফাজত কোন ধরনের হামলা মারধর ভাংচুর করেনি। এটা বহিরাগত কেউ করেছে। এটা সাবোটাজ হতে পারে। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছি, মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছি। অনেক জায়গায় হেফাজতের দায়িত্বশীলদের রাজপথ থেকে উৎখাত করতে প্রশাসন উদ্যত হয়েছে। সেখান থেকে কোথাও কোথাও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তা হেফাজতের পক্ষ থেকে করা হয়নি। বি.বাড়িয়ায় পুলিশের গুলিতে যে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তার পরিপ্রেক্ষিতেই গ্রামবাসী ও মৃতের আত্মীয়স্বজনরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিল। সেটা থেকেই স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ সঞ্চার হয়ে থাকতে পারে। তার দায় হেফাজতের না।

সাংবাদিকদের ওপর হামলার ব্যাপারে তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে সবসময় ভালো সম্পর্ক রাখতে চায় এবং তা আছে। ব্যক্তি পর্যায়ে কেউ ভুল বুঝে কোন ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে তবে তার সাথে দায়িত্বশীলদের কোনো সম্পর্ক নেই। 

এ সময় বন্দুকের নলে, গায়ের জোরে জনগণের বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান না নেয়ার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ জানান আলোচিত এই হেফাজত নেতা।

এদিকে সোমবার বিকালে মহানগর হেফাজতের সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর বলেছিলেন, ‘আমরা কেন্দ্রে অভিযোগ করব এবং ঢাকা মহানগরে অভিযোগ দিয়েছি যে, এই সভাপতি আমাদের চলবে না। উনার অতীতের ইতিহাস এরকম। উনি যখন হার্ডলাইনে দেখে তখন ব্যাকফুটে চলে যায়। নারায়ণগঞ্জ জেলার আমীর আল্লামা আব্দুল আওয়াল সাহেব সকাল ১০টায় যে ঘোষণা দিয়েছিলেন ওই ঘোষণার সঙ্গে আমরা একমত ছিলাম না।’
 
ওই দিনই রাতে শবেবরাত উপলক্ষে ডিআইটি মসজিদে বয়ানকালে আবদুল আউয়াল বলেন, ‘২৮ মার্চ হরতালের দিন সকালে মসজিদে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, ডিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছুটে আসেন। তারা মসজিদের গেটের সামনে তিনটি কামান, সাজোয়া যান পুলিশের গাড়ি দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে।' 

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আমাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় মিছিল বের করতে চাইলে অ্যাকশনে যাবে। তাদের উপরের নির্দেশেনা রয়েছে। প্রয়োজনে গুলি করবে। তখন আমি সবার জানমালের স্বার্থে মসজিদের গেটের বাইরে যেতে বারণ করি। কারণ আমাদের তো অস্ত্র নাই। কিন্তু মহানগরের অতি উৎসাহী নেতারা মিছিল করতে চেয়েছিল। যদি সেদিন মিছিল করতে গিয়ে আমাদের ওপর গুলি ছোড়া হতো, কেউ লাশ হতো তখন তো এই আবদুল আউয়ালকে দোষারোপ করা হতো। মসজিদে গুলি ছুড়লে ঝাঁজরা হয়ে যেত। তখন আপনারাই বলতেন কেন লাশ হলো মানুষ। এ কেমন নেতৃত্ব। এসব নেতৃত্ব আমরা মানি না। তখন মেয়র আইভীসহ অনেকেই সুযোগ নিতেন আমাকে সরিয়ে দিতে। মামলা হয়েছে। যদি আমরা মিছিল করার চিন্ত করতাম তাহলে সব মামলার আসামি হতাম আমিসহ সবাই। 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে