 
                                        
                                        
                                       
                                        
                                             
                                                                                    
নিউজ ডেস্ক: রাজধানী ঢাকার হাসপাতালগুলোতে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রর (আইসিইউ) প্রবল সংকটের মধ্যে সাধারণ শয্যা পেতেও হিমশিম খাচ্ছে রোগীরা। একাধিক সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, গত কয়েকদিন আগেও যেখানে তারা কোভিড ইউনিট বন্ধ করার বা বেড কমানোর চিন্তা করেছিলেন সেখানে এখন বেড বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। তারপরও রোগীদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে নিয়মিত।
রোগী সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতিকে দ্বিতীয় ঢেউ নয়, দ্বিতীয় সুনামির সঙ্গে তুলনা করে চিকিৎসকরা বলছেন, সরকারি ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়ে কোনওভাবেই এ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। অভিযোগের সুরে তারা বললেন, বইমেলা-শপিংমল-বিনোদনকেন্দ্র-সিনেমা হল খোলা রেখে মানুষকে ঘরে রাখা সম্ভব নয়। লকডাউন লাগবেই।
এদিকে প্রতিদিনিই রেকর্ড ভাঙছে করোনা। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত পাঁচ হাজার ৩৫৮ জন। ৩০ মার্চ শনাক্ত পাঁচ হাজার ৪২ জন। তার আগের দিন পাঁচ হাজার ১৮১ জন। টানা তিন দিন রোগী শনাক্ত হচ্ছে পাঁচ হাজারের বেশি।
২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৫২ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এটাও গত সাত মাসে সর্বোচ্চ। এর আগে গতবছরের ২৬ আগস্ট ৫৪ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল অধিদফতর। ৩০ মার্চ মারা গেছেন ৪৫ জন। তার আগের দিনও ৪৫ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল অধিদফতর।
তারা বলছেন, গত বছর ১৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী মারা যাওয়ার পর ঢাকা ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছিল। অথচ এখন যে হারে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে তা নিয়ে কেউ গা করছে না। আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের জন্য কাড়াকাড়ি থাকলেও এখন স্বাস্থ্যবিধির প্রতিও মানুষ উদাসীন। তাই মানুষকে বাধ্য করতে হবে। চিকিৎসকরা বলছেন, সংক্রমণ কমিয়ে আনতে আগের চেয়ে কঠোর লকডাউনের বিকল্প নেই।
করোনার এই ঊর্ধ্বগতিকে সুনামির সঙ্গে তুলনা করে প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘করোনা সুনামির তীব্রতায় ছড়াচ্ছে। সামনে মহাদুর্যোগ।’ যে পদক্ষেপগুলো নেওয়ার প্রয়োজন ছিল ১৯ মার্চ, সেগুলো নেওয়া হলো ২৮ মার্চ। ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, আমরা করোনার গতির চেয়ে ১০ দিন পিছিয়ে আছি।
সরকারি, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ব্যবসায়িক সভাসমাবেশ নিষিদ্ধ করা, সব মেলা, বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ রাখা। বিয়ে, জন্মদিন স্থগিত করা, রাত নয়টা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত কারফিউ জারি। অনলাইনে অফিস চালানো, বিভিন্ন এলাকাকে রেডজোন ঘোষণা করে লকডাউন করা, স্বাস্থ্য রেড অ্যালার্ট জারি করা, স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মাঠে নামানো এবং স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গকারীকে কঠোর শাস্তি দেওয়া এবং সকল গণপরীক্ষা স্থগিত করা অত্যন্ত জরুরি বলে জানিয়েছেন তিনি।
১৮ দফা নির্দেশনা নতুন কিছু নয়। আগের নির্দেশনাকে ডান-বাম করা হয়েছে মাত্র। এমন মন্তব্য করেছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা. রিদওয়ানুর রহমান।
‘যেটা দেখছি সেটা টিপ অব দ্য আইস বার্গ। কারণ জনসংখ্যার অনুপাতে যেখানে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ লাখ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল, সেখানে হচ্ছে মাত্র ২৮ হাজার। প্রকৃত চিত্রটা তাই আড়ালেই রয়ে গেছে।’
ডা. রিদওয়ানুর রহমান বলেন, হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড এবং অক্সিজেন ও হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা দেওয়া হয় এমন বেড একটাও খালি নেই। হাসপাতালের ওপর চাপ বাড়াতে না চাইলে সংক্রমণ কমাতে হবে। নয়তো অনেকে বিনাচিকিৎসায় মারা যাবে। কিছু রোগীকে যদি বাঁচাতে চাই, তবে নতুন আক্রান্ত কমাতে হবে।
তার মতে, লকডাউন ও টেস্টের সংখ্যা বাড়িয়ে আক্রান্তদের আইসোলেশনে রাখতে পারলেই হাসপাতালে রোগীর চাপ কমানো যাবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সালও বলেন, এখন কিছু করতে হবে। ১৮ দফা নির্দেশনা কেবল একটা রূপরেখা। এখানে প্রায় ১০টি মন্ত্রণালয় জড়িত। এর বাস্তবায়নেও ১০ মন্ত্রণালয়কে পদক্ষেপ নিতে হবে। কঠোর হতে হবে সবাইকে।
দুদিন আগে স্বাস্থ্য অধিদফতর সংক্রমণের উচ্চঝুঁকির তালিকাতে ২৯ জেলার কথা জানায়। আজ জানিয়েছে ৩১ জেলার কথা। ওইসব জেলায় মানুষের চলাচল বন্ধ করতে হবে বলে মনে করেন আবু জামিল ফয়সাল।
জনস্বাস্থ্যবিদ চিন্ময় দাস বলেন, করোনা রোগীর স্রোত যে হারে বাড়ছে তাতে এই মুহূর্তে কমপক্ষে দুই সপ্তাহের কঠোর লকডাউনের বিকল্প নেই। যত দেরি করবো, ততোই ক্ষতি হবে। চিন্ময় দাস বলেন, আমরা জানি না এই ভাইরাস আমাদের এখানে রূপান্তরিত হয়ে এত বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে গেল কিনা। এখন সংক্রমণ প্রতিরোধ করা ছাড়া উপায় নেই।