নিউজ ডেস্ক: সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে চলমান বিতর্কে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে হেফাজতে ইসলামের ভেতরে। একের পর এক ফোনালাপ ফাঁস, দ্বিতীয় স্ত্রীর বড় ছেলের অনলাইন বক্তব্যসহ নানা তথ্য বিশ্লেষণ করে সংগঠনটির ভেতরে বেশ জটিল পরিস্থিতির আভাস পাওয়া গেছে। অনেকের মতে, সার্বিক ঘটনায় ঘরে-বাইরে বেশ চাপের মুখে পড়েছেন মামুনুল হক।
এদিকে মামুনুল হককে এখনই বহিষ্কার করার মতো পরিস্থিতি তৈরি না হলেও তাঁর পদের ব্যাপারে ভবিষ্যতে কী করা উচিত, তা নিয়ে সংগঠনটির ভেতরে আলোচনা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংগঠনটির দুজন নেতা জানিয়েছেন, মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ যে হারে বাড়ছে, তা অব্যাহত থাকলে শেষ পর্যন্ত তাঁর পদ খোয়াও যেতে পারে।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের রিসোর্টে সংঘটিত ঘটনার সময় হেফাজতকর্মীরা তাঁর পক্ষে অবস্থান নিলেও একের পর এক ভিডিও এবং তথ্য ফাঁসের ঘটনায় কর্মীদের পাশাপাশি দলটির নেতারাও বিস্মিত ও চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। কারণ তাঁরা জানতেন না যে মামুনুল হক রিসোর্টে নাম লেখানোর সময় তথ্য গোপন করেছেন।
তা ছাড়া সরকারের সঙ্গে চরম বৈরী পরিস্থিতির মুখে এবং সারা দেশে অবনতিশীল কভিড পরিস্থিতির মধ্যে তিনি কিভাবে রিসোর্টে যেতে পারলেন, তা নিয়ে হেফাজতের বাইরে সমমনা ইসলামী দলগুলোর পাশাপাশি শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যেও প্রশ্ন উঠেছে। বলা হচ্ছে, মামুনুল হক শুধু হেফাজত নয়, ইসলামপন্থীদেরও সুনাম নষ্ট করেছেন। সর্বশেষ হেফাজতের ডাকা হরতালে নৈতিক সমর্থনদানকারী জামায়াত এবং বিএনপিও এ ঘটনায় হতবাক হয়েছে বলে জানা গেছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, গত শনিবার রিসোর্টে সংঘটিত ঘটনা নিয়ে গত সোমবার হেফাজতের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরী কমিটির বৈঠকে মামুনুল হকের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বৈঠকে উপস্থিত নেতারা একমত হয়ে তাঁকে বলেছেন, দেশজুড়ে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে তাঁর রিসোর্টে যাওয়া ঠিক হয়নি।
একটি সূত্র মতে, সোমবারের বৈঠকে রিসোর্টে নিয়ে যাওয়া নারী তাঁর বিবাহিত কি না, সে বিষয়েও ব্যাখ্যা চাওয়া হয় মামুনুল হকের কাছে। তিনি ওই নারীকে ‘বিবাহিত দ্বিতীয় স্ত্রী’ দাবি করলেও এ বিষয়ে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। বৈঠকে উপস্থিত কেন্দ্রীয় একজন নেতা বলেন, ‘কাগজপত্র কিভাবে দেখাবেন? কারণ দ্বিতীয় বিবাহ করতে হলে তো প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নিতে হয়। সেই কাগজপত্র তো নেই।’
জানতে চাইলে হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী কাছে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সিনিয়র এই সহসভাপতি বলেন, ‘আমি মনে করি, একজন লোক তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে রিসোর্টে যেতেই পারেন। কিন্তু সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে, আমরা তার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার চাই।’
দেশজুড়ে কভিড পরিস্থতির মধ্যে মামুনুল হকের রিসোর্টে যাওয়া ঠিক হয়েছে কি না—এই প্রশ্নে খেপে যান হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী। গতকাল কালের কণ্ঠ’র কাছে তিনি দাবি করেন, ‘এ ঘটনায় হেফাজতের সুনাম নষ্ট হয়নি। কারণ তিনি ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী বিয়ে করেছেন।’
তবে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতের শীর্ষ পর্যায়ের দুজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মামুনুল হক গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকবেন কি না, তা নিয়ে দলের মধ্যে নানা আলোচনা আছে। গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে তাঁকে বাদও দেওয়া হতে পারে।’
‘গণমাধ্যম এবং সরকারের চাপ ব্যালান্স করার জন্য এখন মামুনুল হকের পক্ষে কথা বলা হলেও তাঁকে নিয়ে যে হেফাজত বিপদে পড়েছে, এটি দলের সবাই বুঝতে পেরেছেন।’ বলেন সংগঠনটির আরেক নেতা।