বুধবার, ০৭ এপ্রিল, ২০২১, ০৭:৫৮:১৫

হেফাজত ইসলামকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় পুলিশের উপস্থিতিতেই ঢাবি ছাত্রলীগ নেতাকে লাঞ্ছিত করল মামুনুলের অনুসারীরা!

হেফাজত ইসলামকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় পুলিশের উপস্থিতিতেই ঢাবি ছাত্রলীগ নেতাকে লাঞ্ছিত করল মামুনুলের অনুসারীরা!

নিউজ ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা আফজাল খান হেফাজত ইসলামকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় পুলিশের উপস্থিতিতেই তাকে লাঞ্ছিত করে মামুনুলের অনুসারীরা। সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের জয়শ্রী বাজারে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। আফজাল খান (২৪) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক।

তিনি উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামে আয়ুব খানের ছেলে। এছাড়াও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী।

এ ঘটনার জন্য দায়ী করে ধর্মপাশা এসআই জহুরুল ইসলাম ও এএসআই আনোয়ার হোসেনকে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপারের নির্দশে রাতেই প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ছাত্রলীগ নেতা আফজাল গত ২৯ মার্চ দুপুরে তার ফেসবুকে হেফাজতে ইসলামের সহিংসতার ছবি দিয়ে একটি পোস্ট দেন। ঘণ্টা তিনেক পর তিনি ওই স্ট্যাটাসটি শুধু নিজে দেখতে পাওয়ার মতো (অনলি মি) ব্যবস্থা করেন। কিন্তু স্থানীয় কিছু যুবক এর স্ক্রিনশট নিয়ে রাখেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই ছাত্রলীগ নেতা নিজের গ্রাম মহেশপুর থেকে জয়শ্রী বাজারে আসেন। তখন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলমের ছেলে আল মুজাহিদ  ৩৫-৪০ জনকে নিয়ে কেন ওই পোস্ট দিয়েছেন, তার ব্যাখ্যা জানতে চান ওই ছাত্রলীগ নেতার কাছে। আফজাল তখন উপস্থিত লোকজনকে বলেন, তিনি হেফাজতে ইসলামকে ব্যঙ্গ করে কোনো পোস্ট দেননি। তবে হেফাজতের আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কাজের প্রতিবাদে পোস্ট দিয়েছেন।

এ নিয়ে আফজাল ও মুজাহিদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে মুজাহিদ ওই ছাত্রলীগ নেতার শার্টের কলার ধরে টানাহেঁচড়া শুরু করেন। আফজালের কয়েকজন বন্ধু ও স্থানীয় কয়েকজন তাঁকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু মুজাহিদের পক্ষের লোকজন বেশি হওয়ায় তাঁরা আফজালকে জয়শ্রী বাজারে থাকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আটক করে রাখেন। দলীয় কার্যালয়ের আশপাশে কয়েক শ মানুষ অবস্থান নেয়।

খবর পেয়ে ধর্মপাশা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জহিরুল ইসলাম ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতা আফজালের বিপক্ষে জড়ো হওয়া মানুষকে শান্ত করে উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে সেখানে উপস্থিত হন ধর্মপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।

ছাত্রলীগ নেতা আফজাল খানের ভাষ্য, ওসির নির্দেশে তাঁকে হাতকড়া পরানো হয় এবং উপস্থিত লোকজনের কাছে তাকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়। এরপর তাঁকে ধর্মপাশা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর বিস্তারিত পরিচয় পেয়ে পুলিশ পথেই তাঁর হাতকড়া খুলে দেয়। পরে থানায় পুরো ঘটনার বিবরণ সাদা কাগজে লিখে তাতে স্বাক্ষর করে তিনি থানা থেকে ছাড়া পান। 

আফজাল খান বলেন, 'ধর্মপাশা থানার পুলিশ আমাকে অন্যায়ভাবে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেছে। এ ঘটনায় আমি আইনগত ব্যবস্থা নেব।' অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আল মুজাহিদ দাবি করেন, ‘হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে স্ট্যাটাস দেওয়ার ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছি। ছাত্রলীগ নেতা তখন ইসলাম ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। হেফাজতকে নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ায় ও ধর্ম নিয়ে মন্তব্য করায় থানা-পুলিশকে ঘটনাটি জানিয়ে স্থানীয় লোকজন তাঁকে দলীয় কার্যালয়ে আটকে রাখেন। এর চেয়ে বেশি কিছু হয়নি।’

এ ঘটনায় রাতেই ধরমপাশা থানার এসআই জহিরুল ইসলাম ও এএসআই আনোয়ার হোসেনকে প্রত্যাহার করে সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়েছে।

ধর্মপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'এ ঘটনার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমাদের থানার এসআই জহিরুল ইসলাম ও এএসআই আনোয়ার হোসেনকে সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। আমি পরিস্থিতি শান্ত করে ওই ছাত্রলীগ নেতাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করেছি এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবন্দের উপস্থিতিতেই ওই নেতা থানা থেকে ছাড়া পেয়েছেন।' তবে ওই ছাত্রলীগ নেতাকে হাতকড়া পরানো হয়নি বলে দাবি করেন ওসি।-কালের কণ্ঠ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে