নিউজ ডেস্ক : আসমার মন সায় দিচ্ছে না ভারত যাওয়ার। বাংলাদেশের রংপুরে বড় হয়েছে। পিতা-মাতা আত্মীয়স্বজন সবাই থাকেন রংপুরেই। কিন্তু তার বিয়ে হয়েছে ছিটমহলে। তার স্বামী ভারতে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন চিরদিনের। এ বন্ধনের টানে স্বামীর সঙ্গে তাকেও ভারত যেতে হচ্ছে। হতে হয়েছে ভারতের বাসিন্দা।
দাসিয়ারছড়া ছিটের নিজ টিনের ঘরের দাওয়ায় বসে দুই বছরের শিশুকন্যাকে খাওয়াচ্ছিলেন আসমা বেগম। তার কাছে প্রশ্ন ছিল কেন তিনি ভারত যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আসমার সোজা উত্তর, সংসার টেকাতে হলেতো ভারত যেতেই হবে। এ সময় আসমার চোখের কোনে জমাট বাঁধে পানি। গাল বেয়ে দু’ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। বুঝা যাচ্ছে আসমার মনে বইছে স্বজনদের ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট।
এ কষ্ট তাকে চিরজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। তারপরও আসমা খুশি তাদের আর ছিটের বাসিন্দা বলে অবহেলিত হতে হবে না। তাদের এখন নিজস্ব পরিচয় হয়েছে। বুক ভরে বলতে পারবে আমরা ভারতের নাগরিক। এই দাসিয়ারছড়া ছিটের প্রায় বার হাজার অধিবাসীর মধ্যে যে ২৮৪ জন মানুষ ভারতে চলে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন আসমার পরিবারটিও তার মধ্যে একটি।
বিবিসি জানিয়েছে, বাংলাদেশের রংপুরে জন্ম, বেড়ে ওঠা এখানেই আসমার। বিবাহসূত্রে তিনি ছিটমহলের বাসিন্দা। বাবা-মা, আত্মীয় পরিজন সবাই থাকেন রংপুরে। ছিটমহল বিনিময়ের সুযোগে কিছু সুবিধা পাবার আশায় স্বামী ভারতে চলে যেতে আগ্রহী। তাই জরিপের সময় তিনি অপশন দিয়েছেন সেটাই। আর স্বামীর ইচ্ছেতে আসমাকেও একই অপশন দিতে হয়েছে। অদূরেই স্বামী গৃহস্থালি কাজ করছিল।
তার স্বামীর কাছে প্রশ্ন, আপনার স্ত্রীর কথাবার্তাতে মনে হচ্ছে না তিনি ভারতে যেতে আগ্রহী? স্বামীর সোজা জবাব, তাকে তো বলেছি, তার অন্যরকম ইচ্ছে থাকলে অপশন দিতে পারে। আমি তো জোর করিনি তাকে। শুক্রবার মধ্যরাতে বাংলাদেশ ও ভারতের ১৬২টি ছিটমহল মূল ভূখণ্ডের অংশ হয়ে গেছে। এর আগেই শেষ হওয়া জরিপে বাসিন্দাদের সুযোগ দেয়া হয়েছিল ইচ্ছেমত নাগরিকত্ব বেছে নেয়ার।
জানা গেছে বাংলাদেশ থেকে যেসব মানুষ ভারতে যাবে, তাদের জন্য বাসস্থান, নগদ অর্থ ও কর্মসংস্থান দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সেদেশের সরকারের। আসমা বেগমের স্বামী জানিয়েছেন, যে কোন মুহূর্তে ভারতে পাড়ি জমানোর জন্য প্রস্তুত তারা। দাসিয়ারছড়া এখন কুড়িগ্রাম উপজেলার ফুলবাড়ি উপজেলার অংশ।
সেখানকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন মাহমুদ বিবিসিকে বলেন, যারা ভারতে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে, তাদের সেদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া এখনও শুরু করার নির্দেশনা আসেনি। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে আসমা বেগমদের মতো কেউ যদি ভারত ভ্রমণ করতে চান তাদের জন্য বিশেষ ‘ভ্রমণ পাশ’ দেয়া হবে বলেও জানান ইউএনও।