নিউজ ডেস্ক: করোনার ভয়াল ছোবলে নাকাল অবস্থায় ভারত। বাংলাদেশ এই অবস্থায় না গেলেও এখনই সতর্ক হওয়া জরুরি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে উল্টো। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গত কয়েক দিনে যেভাবে ঈদের কেনাকাটা করতে মানুষ ভিড় করছে, গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে পথে পথে ঢল নেমেছে লাখো মানুষের, তাতে আতঙ্কিত হয়ে বারবার সতর্কবার্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন সরকার ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
বেশি সতর্ক করা হচ্ছিল প্রতিবেশী ভারতে সংক্রমিত করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভেরিয়েন্টের বিষয়ে। বলা হচ্ছিল এই ভেরিয়েন্ট দেশে ঢুকলে বিপদ অনেক বেশি হবে। বলতে বলতেই ভারতীয় ভেরিয়েন্ট এরই মধ্যে ঢুকে পড়েছে দেশে। তাতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও বেড়ে গেছে। পরিস্থিতির মুখে যেকোনো সময় আবার মার্কেট ও দোকানপাট সব বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে বলে গতকাল সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একটি সূত্র জানিয়েছে। জাতীয় বিশেষজ্ঞ কমিটির নেতারাও সরকারকে এমন পরামর্শ দিতে যাচ্ছেন।
করোনার বিস্তার ঠেকাতে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনার ভিত্তিতে দেশে চলছে ‘লকডাউন’ পরিস্থিতি। জীবন-জীবিকার স্বার্থে শর্ত সাপেক্ষে কিছুটা শিথিল পদক্ষেপও রাখা হয়েছে। এক জেলা থেকে যাতে অন্য জেলায় সংক্রমণ ছড়াতে না পারে সে জন্য দূরপাল্লার জনবহুল যোগাযোগমাধ্যমগুলো বন্ধের নির্দেশনা রয়েছে। দেশের বাইরে থেকে দেশে সংক্রমণ ঠেকানোর লক্ষ্যে সীমান্ত বন্ধ করা হয়েছে। ব্যবসায়ী ও পরিবহন সেক্টরের দাবির মুখে মার্কেট-দোকানপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। চালু করা হয়েছে জেলা বা মহানগরীর ভেতরে গণপরিবহন। সব ক্ষেত্রে শর্ত রয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মানার। কিন্তু দৃশ্যত সব শর্ত ভেঙে ঈদের কেনাকাটায় যেমন মানুষের ঢল নেমেছে, ঢল নেমেছে ঢাকা থেকে গ্রামের উদ্দেশে মানুষের যাতায়াতেও।
তাতেও ক্ষান্ত হচ্ছেন না পরিবহন সেক্টরের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। রীতিমতো হুমকি-ধমকি দিয়ে বাকি সব পরিবহন চালুর জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। পরিস্থিতির মুখে একদিকে অসহায় হয়ে পড়েছেন দেশের স্বাস্থ্য প্রশাসন ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সবাই হতবাক মানুষের অসচেতন ও বেপরোয়া আচরণে। প্রতিদিন বারবার নানাভাবে সতর্ক করলেও কেউ যেন কথা কানে দিচ্ছে না। ফলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, জাতীয় বিশেষজ্ঞ কমিটি, সরকারি বেসরকারি পর্যায়ের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সবাই বলছেন সতর্ক না হলে ঈদের পরে চরম খারাপ পরিণতি ঘটতে পারে। আগের চেয়েও চূড়ায় উঠে যেতে পারে সংক্রমণ, লাফিয়ে উঠতে পারে মৃত্যু, যা সামাল দেওয়ার সক্ষমতা বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেরও নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। সংক্রমণ ঠেকাতে হলে মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া এবং টিকা দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। এর আগে গতকাল তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ভারত থেকে আসা মানুষের মধ্য থেকে আটজনের নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের মধ্যে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। তবে এর মধ্যে দুটিতে শতভাগ এবং বাকী চারটিতে ভারতীয় ভেরিয়েন্টের অংশ বিশেষ উপস্থিতি রয়েছে। আক্রান্তরা সবাই বেনাপোল দিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন, তারা সবাই বাংলাদেশি। তবে কিছুদিন আগে ভারত থেকে দেশে ঢুকে যারা হাসপাতাল থেকে পালিয়েছেলেন তাদের নমুনায় তা ধরা পড়েনি।