শুক্রবার, ০৮ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৯:৫৭:১৪

‘বঙ্গবন্ধুর সেই উদ্যোগকেই সামনে এনেছেন খালেদা জিয়া’

 ‘বঙ্গবন্ধুর সেই উদ্যোগকেই সামনে এনেছেন খালেদা জিয়া’

ঢাকা : গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জাফরুল্লাহ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে মন্তব্যের জন্য খালেদা জিয়ার প্রশংসা করে বলেছেন, বিএনপি নেত্রী তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ‘বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগকেই’ সামনে এনেছেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাত্তরে নিহতের সংখ্যা বের করতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন দাবি করে তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী সেটিই সামনে এনেছেন। “সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে উনি শেখ মুজিবকেই উচ্চকিত করেছেন, এজন্য আপনাকে (খালেদা জিয়া) ধন্যবাদ।” শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন সেমিনার কক্ষে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন জাফরুল্লাহ। দলীয় বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড প্রচারে বিএনপির ‘দুর্বলতা’ ধরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি সংগঠন শক্তিশালী করতে খালেদাকে গুলশান ছেড়ে দেশজুড়ে সফর করার পরামর্শ দেন তিনি। খালেদার বক্তব্যের সমর্থনে জাফরুল্লাহ বলেন, “মুজিব ভাইয়ের (বঙ্গবন্ধু) বড় গুণ ছিল মহানুভবতা। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন- মুক্তিযুদ্ধে যারা মারা গেছেন, তাদের সঠিক তথ্যটা উপস্থাপন করা। “উনি ১৩ তারিখ দায়িত্বভার নেওয়ার পরে ড. সাত্তারকে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে কতজন মারা গেছেন, মুক্তিযুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা নিরূপনের জন্য কমিটি করেছিলেন। এখনও ড. সাত্তারের জুনিয়র আসাফুদ্দৌলা সাহেব জীবিত। উনি তো কমিটিতে ছিলেন, জানেন সেই কমিটিতে কী হয়েছে। উনার এটা দায়িত্ব জানানোর।” মুক্তিযুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা নির্ধারণে সে সময় আরেকটি কমিটি করা হয়েছিল দাবি করে তিনি বলেন, “শেখ মুজিবুর রহমান আরেকটা দ্বিতীয় মহান কাজ করেছিলেন, উনি তৎকালীন আইজি আবদুর রহীম সাহেবের নেতৃত্বে একটা ১০ জনের কমিটি করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধে হতাহতের সংখ্যাটা নিরূপনের জন্য- ইউনিয়ন থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত। এসব কথা (ইতিহাস) আমরা ভুলে গিয়েছিলাম।” একাত্তরে নিহতের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে দেওয়া বক্তব্যে খালেদা জিয়া আবারও সেই বিষয়টিকে সামনে এনেছেন বলে মনে করছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী, যিনি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল অবমাননার দায়ে সম্প্রতি শাস্তি পেয়েছেন। জাফরুল্লাহ বলেন, “খালেদা জিয়া সম্পূর্ণ সংকীর্ণতাকে পরিহার করে আমাদের বঙ্গবন্ধু, আমাদের প্রিয় মুজিব ভাইয়ের যে চিন্তা-চেতনা ছিল তাকে উনি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।” ‘আমার দেশ বন্ধ, মাহমুদুর রহমানের কারাবন্দিত্বের ১০০০ দিন’ শিরোনামের এই আলোচনা সভায় তার দৃষ্টিতে বিএনপি নেতৃত্বের সফলতা-ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। কোনো ‘ভালো’ পত্রিকা না থাকাই বিএনপির সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা বলে মনে করেন তিনি। জাফরুল্লাহ বলেন, “বিএনপির যারা আছেন, প্রতিবার বক্তৃতায় বলতে ভালোবাসেন, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী (খালেদা জিয়া), তার সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা- একটা ভালো পত্রিকা বের করেন নাই।” তিনি বলেন, “আজ সকালে উনার দিনকাল (দলীয় মুখপাত্র) পত্রিকা কে দেখেছেন, হাত উঠান। এই অনুষ্ঠানে ২০০ জন লোক আছেন, মাত্র দুই জন লোক হাত উঠিয়েছেন। আমি সকালে ১০টা পত্রিকা পড়ে এসেছি, আমি দিনকাল দেখিনি। সুতরাং এতো বড় দলের নিজেদের কথা বলার যদি একটা পত্রিকা না থাকে, সেখানে রাজনীতি গতি পায় না।” রসিকতার সুরে জাফরুল্লাহ বলেন, “বিএনপির ভালো পত্রিকা নেই বলে রাজনীতি গতি পাচ্ছে না, সেজন্য আমাদের মহাসচিব এখনো ভারপ্রাপ্তই আছেন। এই কারণে এই কথাগুলো বলছি, পত্রিকা থাকলে উনার কথা কে বলেছেন, মাহমুদুর রহমান বলেছেন, সত্যের পথ নির্দেশনা দিয়েছেন। “আমার একটা পরামর্শ থাকবে, উনারা (বিএনপি) এতো বড় একটা রাজনৈতিক দল, ৫০ কোটি টাকা খুঁজে পান না? তারা কি আমার দেশ বের করতে পারেন না?” ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম নির্বাচন বর্জন এবং সাম্প্রতিক পৌরসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিএনপি নেত্রীর সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। “উনি দেখিয়েছেন- এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে কী রকম নির্বাচন হবে। এ ব্যাপারে উনার সার্থকতা আছে।” তবে এখন সংলাপের কথা বলে খালেদা জিয়া সময়ক্ষেপণ করছেন বলে মনে করেন তিনি। পরিবর্তন আনতে খালেদা জিয়াকে জনগণের কাছে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে জাফরুল্লাহ বলেন, “আপনি নিজেকে গুলশানের ঘরে অন্তরীণ না রেখে বাংলাদেশ ভ্রমণে বেরিয়ে যান। তবেই দেখবেন দেশের পরিবর্তন কীভাবে আসে।” কারাবন্দি নেতাকর্মীদের স্বজনদের খোঁজ-খবর নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমার হিসাবে উনার (খালেদা) নৈতিক দায়িত্ব তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দেখা করা। তাতে কর্মীদের মনোবল ফিরে আসবে, উজ্জীবিত হবে।” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তব্য রাখেন। ৮ জানুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসএম/ডিআরএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে