শনিবার, ২৬ জুন, ২০২১, ১০:১২:২৬

করোনার ধা'ক্কা; বিচ্ছেদ বেড়েছে ১৭ ভাগ, ৭৫ শতাংশ ডিভোর্সই দিচ্ছেন নারীরা

করোনার ধা'ক্কা; বিচ্ছেদ বেড়েছে ১৭ ভাগ, ৭৫ শতাংশ ডিভোর্সই দিচ্ছেন নারীরা

ফাতিমা তুজ জোহরা: করোনার ধা'ক্কায় আয় সংকু'চিত হয়েছে বহু মানুষের। তবে সংক'টকালের এই অভিঘা'ত এখানেই থেমে নেই। অর্থনৈতিক দুর্দশা ভা'ঙন ধরাচ্ছে বহু সংসারেও। রাজধানী ঢাকায়ই দিনে ৩৮টি বিবাহবিচ্ছেদের ঘ'টনা ঘ'টছে। এ হিসাবে প্রতি ৩৮ মিনিটে একটি দাম্পত্যে দাঁড়ি পড়ছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর প্রতি মাসে ৯৯টি বিচ্ছে'দ বেড়েছে।

ঢাকার দুই সিটির তথ্য বলছে, ৭৫ শতাংশ ডিভোর্সই দিচ্ছেন নারী। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে চার হাজার ৫৬৫টি বিচ্ছেদের আবেদন জমা পড়েছে, অর্থাৎ প্রতি মাসে এক হাজার ১৪১টি। গত বছর এই সংখ্যা ছিল এক হাজার ৪২। এই হিসাবে চলতি বছর প্রতি মাসে বেড়েছে ৯৯টি বিচ্ছেদ। গত বছরও নারীদের তরফে ডিভোর্স বেশি দেওয়া হয়েছে, ৭০ শতাংশ।

করোনায় সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংক'টের পাশাপাশি মানসিক ও সামাজিক চাপের কারণে সৃষ্ট পারিবারিক কলহ ডিভোর্স বেড়ে যাওয়ার বড় কারণ বলে মনে করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। এ ছাড়া স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মতের অমিল, পারস্পরিক বো'ঝাপড়া না হওয়াও বড় কারণ। নারীদের পক্ষ থেকে বেশি ডিভোর্স দেওয়ার পেছনে করোনাকালে নারীর প্রতি সহিং'সতা বৃ'দ্ধিকেই প্রধানত দায়ী করছেন তাঁরা।

বিচ্ছেদের প্রবণতা শুধু ঢাকায়ই নয়, সারা দেশেই বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে ১৭ শতাংশ বিবাহবিচ্ছেদ বেড়েছে। মহামা'রিকালে এ সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশ'ঙ্কা করছেন।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের তথ্য বলছে, পুরুষরা বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে মূলত তাঁদের প্রতি স্ত্র্রীর স'ন্দেহপ্রবণতা, সংসারের প্রতি স্ত্র্রীর উদাসীনতা, বদমেজাজ, সন্তান না হওয়া ইত্যাদি তুলে ধরেছেন। নারীরা কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন পর'কীয়া প্রেম, যৌতু'কের জন্য নি'র্যাতন, মা'দকাস'ক্তি ইত্যাদি।

গত বছর দুই সিটিতে ১২ হাজার ৫১৩টি ডিভোর্সের ঘ'টনা ঘটেছে। এর মধ্যে আট হাজার ৪৮১টি আবেদন করেছিলেন নারী, বাকি চার হাজার ৩২টি বিচ্ছেদ চেয়েছিলেন পুরুষ।

ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের দপ্তরে তালাকের আবেদন নথিভুক্ত করা হয়। আবেদনের ৯০ দিনের মধ্যে দুই পক্ষ আপস অথবা প্রত্যাহার না করলে তালাক কার্যকর হয়ে যায়। দুই সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, বেশির ভাগ তালাক দিচ্ছেন নারীরা। দুই সিটিতেই ৭৫ শতাংশ তালাক নারীরা দিচ্ছেন। করোনার মধ্যে পারিবারিক বোঝাপড়া নিয়েই মূলত তালাকের ঘ'টনা বেশি ঘ'টছে। পাশাপাশি নারীরা এখন বেশি স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তাই তালাকের পর কিভাবে চলবেন, তা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে না। সমাজও এখন মেয়েদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা স্বাভাবিকভাবে দেখতে শুরু করেছে।

করোনাকালে বিচ্ছেদ হয়েছে ঢাকার বনানীর এক ব্যক্তির। নাম গোপন রাখার শর্তে গতকাল শুক্রবার তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী অনেক স'ন্দেহপ্রবণ ছিল। পাশাপাশি সম্পর্কের প্রতিও উদাসীন ছিল। এ ছাড়া সম্পর্কে তৃতীয় ব্যক্তি এলে তা ন'ষ্ট হয়ে যায়। তারা সহযোগিতার নামে নেতিবাচক মানসিকতার দিকে ঠে'লে দেয়।’ এর এক পর্যায়ে তাঁদের বিচ্ছে'দ হয়ে যায় বলে জানান তিনি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে তালাকের আবেদন করেছেন এক নারী। তিনি বলেন, ‘যৌতুকের টাকার জন্য দীর্ঘদিন স্বামী নি'র্যাতন করে আসছিল। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সহ্য করেছি। কিন্তু স্বামীর বাড়ির পরিবারের কারো সহযোগিতা পাইনি। উ'ল্টো স্বামীকে উসকে দিয়েছে। অনেকটা নিরুপায় হয়ে তালাকের সি'দ্ধান্ত নিয়েছি।’

একাধিক জ'রিপ ও স'মীক্ষায় দেখা যায়, করোনাকালে নারীদের ওপর নি'র্যাতনের মাত্রা বেড়েছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে অনেক নারী তালাকের দিকে ঝুঁ'কছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৭১ জন নারী স্বামী কর্তৃক হ'ত্যার শি'কার হয়েছেন। 

আসকের জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক নীনা গোস্বামী বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে আগে নারীরা জানতেনই না যে তাঁরা তালাক দিতে পারেন। মুখ বুজে নি'র্যাতন স'হ্য করতেন। আর করোনাকালে পারিবারিক সহিং'সতা অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি একটা ভুল ধারণা ছিল যে ডিভোর্স দিলে নারীরা মোহরানার টাকা পাবেন না। এখন এটা বেশির ভাগ নারীই জানেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, মেয়েদের শিক্ষার হার বেড়ে গেছে। পাশাপাশি পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বিরু'দ্ধে তারা প্রতি'বাদও করছে। স্বামী অথবা পরিবার কর্তৃক শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক নি'র্যাতনের বি'রুদ্ধে কথা বলছে। নারীর ক্ষমতায়নের দিকে জোর দেওয়া হয়েছে। ফলে একেবারে প্রান্তিক পর্যায়েও উপার্জনক্ষম নারী বাড়ছে। অর্থনৈতিক মুক্তি শুধু কারণ নয়, আদর্শিক চিন্তার পরিবর্তনও একটা বড় কারণ। এ জন্য নারীরা সাহস করে তালাক দিতে পারছে।-কালের কণ্ঠ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে