মঙ্গলবার, ২৯ জুন, ২০২১, ১২:৪৮:৫১

বেঁচে ফেরাদের মুখে ভয়াবহতার বর্ণনা

বেঁচে ফেরাদের মুখে ভয়াবহতার বর্ণনা

মরিয়ম চম্পা: হঠাৎ বিক'ট শব্দ। আগুনের কু'ণ্ড'লী এসে গায়ে পড়ে। মুহূর্তেই মনে হলো আ'গ্নেয়গি'রির মধ্যে ডু'বে গেছি। প্রবল বে'গে রাস্তার ঠিক মাঝখানে পড়ে যাই। এরপর আর কিছু মনে নেই। পরক্ষণে হাসপাতালের বিছানায় যখন হুঁ'শ ফিরে আসে, বেঁ'চে আছি-এটা বিশ্বাসই হচ্ছিল না। মগবাজারের বি'স্ফো'রণের ঘ'টনায় বেঁ'চে ফে'রা এস এম কামাল হোসেন তার অভি'জ্ঞতার কথা ব'র্ণনা করেন। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও।

স্থানীয় একটি কলেজে শিক্ষকতা করতেন। কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের সঙ্গে ঝা'মেলার কারণে পরবর্তীতে চাকরি ছে'ড়ে টিউশনি শুরু করেন। রাজধানীর শাহজাহানপুরের মেয়ে সানোয়ারা সানুর সঙ্গে সাত বছর আগে বিয়ে হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অ'নু'সারে মগবাজার থেকে চশমা নিয়ে ফেরার পথে দু'র্ঘ'টনার শি'কার হন তিনি। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর বেডে ভর্তি আছেন। 

আহ'ত কামাল হোসেন বলেন, মগবাজারে অবস্থিত আমেরিকান চক্ষু হাসপাতালে চোখের ডাক্তার দেখিয়ে একটি চশমার অ'র্ডার দেই। চশমা আনতে ঘ'টনার দিন বিকালে মগবাজারের উদ্দেশ্যে শাহজাহানপুর থেকে আয়াত পরিবহনে উঠি। গাড়ি হাসপাতাল থেকে কিছুটা দূরে না'মিয়ে দেয়। এ সময় পায়ে হেঁটে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মগবাজারের ওয়্যারলেস গেট এলাকায় ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ব্র্যা'ন্ড আড়ংয়ের শোরুম লা'গোয়া ভবনের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। 

বি'স্ফো'রণের সময় আমি তখন ওই ভবনের ঠিক সামনে ছিলাম। হ'ঠাৎ দেখি বিক'ট শব্দে একটি আগুনের কু'ণ্ডলী আমাকে ঘি'রে ফে'লেছে। মনে হচ্ছিল কেউ আমাকে খুব জো'রে একটি ধা'ক্কা দেয়। তখন আগুনের গো'লার মধ্যে পড়ে যাই। এরপর কী হয়েছে বলতে পারি না। তিনি বলেন, কাঁচের টু'করোতে ক'ণ্ঠনা'লী, মুখসহ শরীরের বিভি'ন্ন অংশ কে'টে এবং পু'ড়ে গেছে। ডান হাতের কবজি ভে'ঙে গেছে। সঙ্গে নগদ ২০ হাজার টাকা, প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র, দামি মুঠোফোনসহ অনেক কিছু ছিল। যা পরবর্তীতে খুঁ'জে পাওয়া যায়নি। 

কামালের স্ত্রী সানোয়ারা সানু বলেন, আমাদের দা'ম্পত্য জীবনে কোনো ছেলেমেয়ে নেই। বাবার পক্ষ থেকে আমরা দুটো ফ্ল্যাট পেয়েছি। সন্তানের জন্য অনেকদিন ধ'রে আমরা বিভিন্ন চিকিৎসকের শ'রণাপ'ন্ন হয়েছি। রে'গুলার চে'কআপ এবং ফ্ল্যাটের সং'স্কার কাজ করাতে ঢাকায় আসি। গ্রামে নিজেদের মাছের খামার, কৃষিসহ বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে। এখন তাকে সুস্থ অবস্থায় বাসায় নিয়ে যেতে পারাটাই বড় একটি চ্যা'লে'ঞ্জ।   

এদিকে শেখ হাসিনা বা'র্ন ও প্লা'স্টিক সা'র্জা'রি ইনস্টি'টিউটের অষ্টম তলার ৮০১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা নি'চ্ছেন গণমাধ্যমকর্মী জাফর আহমেদ এবং বি'স্ফো'রণে ক্ষ'তিগ্র'স্ত একটি বাসের সুপারভাইজার কালু। জাফর আহমেদ বলেন, গলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আ'ঘা'তপ্রাপ্ত হয়েছি। ভা'ঙা কাঁচের টু'করায় ক'ণ্ঠনালী কে'টে গেছে। দক্ষিণ কমলাপুরের বাসা থেকে সন্ধ্যায় এক পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে আগোরার উদ্দেশ্যে বের হন তিনি। ভবনের রাস্তার সামনে দিয়ে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছিলেন। 

তিনি বলেন, সামনে এগিয়ে যাচ্ছি এ সময় হঠাৎ কান ফা'টানো বিক'ট শব্দ। দাঁ'ড়ানো অবস্থা থেকে মাথা ঘু'রে মাটিতে পড়ে যাই। এ সময় চারদিক থেকে ভা'ঙা কাঁচের টু'করো বৃষ্টির মতো গায়ে প'ড়ছে। সঙ্গে আগুনের তা'প। চারদিক সব অ'ন্ধকা'র হয়ে যায়। মনের শ'ক্তিতে ভ'র করে উঠে দাঁড়ালাম। কিছুদূর গিয়ে আবার মাথা ঘু'রে পড়ে গেলাম। পরবর্তীতে পথচারীরা উ'দ্ধা'র করে স্থানীয় আদ্‌-দ্বীন হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ইসলামিয়া হাসপাতাল পরবর্তীতে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করে। তিনি বলেন, নিজেও বুঝতে পারছি না কীভাবে বেঁ'চে আছি। মনে হয় ঘ'টনাস্থ'ল থেকে দূরে ছিলাম। যে জন্য বেঁ'চে গেছি।   

এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বা'র্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. তানভীর আহমেদ বলেন, ১৭ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। তাদের মধ্যে বর্তমানে মোট পাঁচ জন রোগী ভর্তি আছেন। দু’জন আ'ইসি'ইউতে ভর্তি রয়েছেন। তাদের শরীরের ৯০ ভাগ পু'ড়ে গেছে। একজন এইচ'ডিইউ এবং অপর দু’জন ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। আইসি'ইউ এবং এইচ'ডিইউতে ভর্তি থাকা তিনজনের অবস্থা সবচেয়ে ঝুঁ'কিপূর্ণ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফাঁ'ড়ির উপ-পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, মগবাজারের ঘ'টনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে আহত মোট ৪০ জন চিকিৎসা নিতে আসেন। তাদের মধ্যে চারজন বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। সূত্র: মানবজমিন 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে