শনিবার, ১০ জুলাই, ২০২১, ০৯:১৭:০৩

স্বপ্ন পূরণে ঢাকা এসে ছাই রিমা, সেই ছাই হাতরাচ্ছে পরিবার

স্বপ্ন পূরণে ঢাকা এসে ছাই রিমা, সেই ছাই হাতরাচ্ছে পরিবার

নরসিংদীর শিবপুরের উত্তর সাধারচর এলাকার মেয়ে রিমা আক্তার (২৩)। বাবা জসিম উদ্দিন কয়েকবার স্ট্রোক করে প্রায় ১০ বছর ধরে প্যারালাইজড অবস্থায় শয্যাসায়ী। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে রিমা তৃতীয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী জুয়েলের ইচ্ছায় নরসিংদী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইন ফুডস ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স সম্পন্ন করেন। কিন্তু পরিবারের আর্থিক টানাপোড়নের কারণে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার হওয়া স্বপ্ন যখন বাঁধাগ্রস্ত হয় তখনই চাকরি নেন রিমা। 

তারপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি কোর্সে। এরইমধ্যে কয়েকটা কম্পানি চাকরি বদল করে সর্বশেষ গত ২৪ মার্চ এ্যাসিস্ট্যান্ড সুপারভাইজার (চকলেট লাইন) হিসেবে যোগ দেন হাসেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ কম্পানিতে। সেখানেই তার স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়।

গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতার কর্ণগোপ এলাকায় সজিব গ্রুপের মালিকানাধীন হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ছয়তলা কারখানা ভবনে ভয়াবয় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। সেই ভবনের চারতলায় ছিলেন রিমা আক্তার।

আজ শনিবার তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে স্বজনদের আহাজারি। বাড়ি ভর্তি লোকজন। তার মৃত্যুর ঘটনায় বাড়ি ও এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মেয়ে হারানোর শোকে প্রলাপ বকছেন মা জোসনা বেগম। স্বজনদের ও অন্য সন্তানদের জড়িয়ে কাঁদছেন আর মেয়ের কথা বলছেন।

নিহত রিমার বড় বোন ঝিনুক আক্তার বলেন, বোনটি আমার লেখাপড়ার জন্য প্রতিনিয়ত নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে। একটু বাড়তি আয়ের আশায় বিভিন্ন কম্পানিতে চাকরি বদল করে সর্বশেষ হাসেম ফুডস লিমিটেডে চাকুরি নেয় শুধুমাত্র নিজের পড়াশুনা চালিয়ে যেতে।

তিনি আরো বলেন, আমার সঙ্গে বৃহস্পতিবার সর্বশেষ দুপুরে কথা হয়েছিল। তার ডিউটি মনে হয় কারখানার দোতলায় ছিল। দুপুর দুইটার পর তাকে চারতলায় অন্য সেকশনে কাজের জন্য ডেকে পাঠায়। এরইমধ্যে বিকেলে আগুন লেগে যায়। তার এক বন্ধু রাকিবের মাধ্যমে জানতে পারলাম, সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সে ফোনে কথা বলতে পেরেছে। তখন ওই ভবনের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা গেইটে তালাবদ্ধ করে রেখেছিল। তারা তালা খুলে দেওয়ার জন্য আকুতি জানিয়েছিল। কিন্তু কাজ হয়নি। পুড়ে মরতে হয়েছে। 

রাত ৮টা ২০ মিনিট পর্যন্ত তাঁর মোবাইলের ইমো অন দেখাচ্ছিল। তারপর আর কিছু নেই। সবশেষ হয়ে গেছে বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ঝিনুক।

রিমার বড় ভাই জুয়েল মিয়া জানান, রিমার লাশ সনাক্ত হয়নি। পুড়ে সব কয়লা হয়ে গেছে। লাশ ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ টেস্টের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে। লাশ পেতে নাকি এক মাস সময় লাগতে পারে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে