রবিবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৩:৫৮:১৯

‘খ’ তফসিলের অর্পিত সম্পত্তির নামজারি বন্ধ

‘খ’ তফসিলের অর্পিত সম্পত্তির নামজারি বন্ধ

আপেল মাহমুদ : কয়েক দফায় সময় বাড়ানোর পরও ‘খ’ তফসিলের অর্পিত সম্পত্তির বেশির ভাগের নামজারি সম্পন্ন হয়নি। সর্বশেষ গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছিল।

এখন পর্যন্ত মাত্র ৪০ শতাংশের নামজারি হয়েছে; বাকি ৬০ শতাংশের মালিকানার যথাযথ প্রমাণ না থাকায় নামজারি হয়নি, খাজনা পরিশোধও হয়নি। ফলে ‘খ’ তফসিলের অর্পিত সম্পত্তির মালিকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তাদের কেউ কেউ সম্পত্তি খাস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

ঢাকা জেলা প্রশাসন ‘খ’ তফসিলের অর্পিত সম্পত্তির নামজারি সাময়িকভাবে বন্ধ থাকার কথা নিশ্চিত করেছে। এ জেলায় এ শ্রেণির ৭০ শতাংশ জমির নামজারি হয়েছে।

ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘ভূমি মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ ধরনের সম্পত্তির নামজারি চলমান ছিল। এরপর আর পরিপত্র জারি না হওয়ায় তা বন্ধ রাখা হয়েছে। শিগগির ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে নতুন পরিপত্র জারি হবে। সে অনুযায়ী আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুরসহ কয়েকটি জেলার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, হঠাৎ ‘খ’ তালিকার (তফসিলের) অর্পিত সম্পত্তির নামজারি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক ভূমি মালিক বিপাকে পড়েছেন।

তাদের অভিযোগ, পৈতৃক বা কেনা সম্পত্তি অন্যায়ভাবে ‘খ’ তালিকাভুক্ত করে এত দিন হয়রানি করা হয়েছে। বর্তমান সরকার সেসব সম্পত্তি প্রকৃত মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিলেও হঠাৎ নামজারি বন্ধ করে দেওয়ায় তারা বিপাকে পড়েছেন। সময় বাড়ানো না হলে তাঁদের সর্বস্ব খোয়া যাবে। জালিয়াতচক্র এগুলো হাতিয়ে নেবে।

ঢাকা শহরের কয়েকটি ভূমি অফিসে গিয়ে জানা গেছে, তারা এখন ‘খ’ তালিকার অর্পিত সম্পত্তির নামজারি করছে না। নতুন করে সময় না বাড়ানো হলে এবং নামজারির নির্দেশনা না দেওয়া হলে এ কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

মতিঝিল রাজস্ব সার্কেলের এসি ল্যান্ড রকিবুল আলম খান বলেন, ২০১৪ সালের ৭ জুলাই পরিপত্র জারি করে ভূমি মন্ত্রণালয়ের আইন অধিশাখা-৪ ‘খ’ তফসিলের অর্পিত সম্পত্তির নামজারির সময় ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ায়। এরপর আর সময় বাড়ানো হয়নি বলে নামজারির আবেদনপত্র গ্রহণ করা হচ্ছে না। নতুন পরিপত্র জারি হলে আবার কার্যক্রম চালানো হবে।

ডেমরা ভূমি অফিসে কথা হয় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আবদুল মালেকের সঙ্গে। তিনি বলেন, “প্রায় পাঁচ বছর পর দেশে ফিরে জানতে পারি, ‘খ’ তালিকার অর্পিত সম্পত্তির নামজারির সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে। এখন প্রায় এক বিঘা সম্পত্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি চিন্তিত।

মূলত এ জমির নামজারি করানোর জন্যই দেশে এসেছি। আমি একা নই, আরো অনেকের এ ধরনের সম্পত্তি রয়েছে। নামজারি করা না গেলে শুধু মালিকদের হয়রানি হবে না, ভূমি-বিরোধও বাড়বে।’

সূত্র জানায়, ভূমি মন্ত্রণালয় বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। এ নিয়ে জরুরি সভাও হয়েছে। আবার সময় বাড়ানো হবে কি না, হলে কত দিনের জন্য—এসব নিয়ে আলোচনা চলছে। সংশ্লিষ্ট নথি ভূমিসচিবের টেবিলে রয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই পরিপত্র জারির বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে।

একাধিক কর্মকর্তা সময়সীমা বাড়ানোর বদলে সাধারণ পরিপত্র জারির পক্ষে মত দিয়েছেন। এটা হলে যত দিন নামজারি শেষ না হবে তত দিন ওই পরিপত্রের কার্যকারিতা থাকবে। কারণ এসব সম্পত্তি সরকার ছেড়ে দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন তহশিলদার বলেন, ‘খ’ তালিকার অর্পিত সম্পত্তির মধ্যে যেগুলোর নামজারি এখনো হয়নি সেগুলোর বেশির ভাগে ঝামেলা রয়েছে। কাগজপত্র ঠিক নেই, অনেকে জাল দলিল দিয়ে নামজারি করানোর চেষ্টা করছে। সরকার এসব সম্পত্তি খাস ঘোষণা করে হাজার হাজার কোটি টাকার জমি রক্ষা করতে পারে।

অন্যদিকে সরকার খাস ঘোষণা করলে হাজার হাজার মামলা হবে বলে কেউ কেউ ধারণা করছে। এসব জমির দখল নিয়ে রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটতে পারে, সামাজিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।

সূত্রাপুরের বাসিন্দা হরলাল ঘোষ বলেন, সরকার ‘খ’ তালিকার অর্পিত সম্পত্তি ছেড়ে দেওয়ায় ভূমিবিরোধ অনেক কমে গেছে। নামজারি বন্ধ করে খাস ঘোষণা করা হলে আবার অশান্তি শুরু হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (দ্বিতীয় সংশোধনী) আইন জারির পর সরকার ‘খ’ তালিকাভুক্ত অর্পিত সম্পত্তি প্রকৃত মালিকদের কাছে ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। ওই আইনে বলা হয়েছে, যথাসময়ে নামজারি করে খাজনা পরিশোধ না করলে সম্পত্তি সরকারের এক নম্বর খতিয়ানভুক্ত করে খাস ঘোষণা করা হবে। -কালেরকণ্ঠ
১০ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে