নিউজ ডেস্ক : জঙ্গিবাদ রোধে বাংলাদেশের গোয়েন্দা পুলিশ মসজিদগুলোর কমিটির সদস্য ও ইমামদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করছে। পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে জঙ্গিবাদী তৎপরতায় ইসলাম ধর্মের ব্যবহার প্রতিরোধে এবং এর সম্পর্কে সঠিক বার্তা দিতে মসজিদভিত্তিক নানা ধরনের প্রচারণা কার্যক্রম ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।
সেই উদ্দেশ্যে আইজিপি সম্প্রতি দেশের ইমাম ও উলামাদের সঙ্গেও বসেছিলেন। কমলাপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব খাজা মোহাম্মদ আরিফ রহমান তাহেরি বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের কাছে দেশব্যাপী ইমাম ও মসজিদ কমিটির সদস্যদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। তারা ঢাকায় উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মসজিদগুলোর উপর কাজ করছেন।
তার মতে ‘দেশে লক্ষ লক্ষ মসজিদ রয়েছে যার মধ্যে কোন কোনটিতে আলেম-ওলামারাই উগ্রপন্থি মতাদর্শে বিশ্বাসী এবং তারা ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে থাকেন।’
বাংলাদেশে প্রায় তিন লাখের মতো মসজিদ রয়েছে। তাহেরি আরও জানান, তারা এখন বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে জঙ্গিবাদ-বিরোধী প্রচারণা চালানোর কাজ করছেন। বাংলাদেশে সমপ্রতি ক’জন ব্লগার হত্যা, শিয়া মসজিদ ও ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা, বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ড ও ক’জন খ্রিষ্টান পাদ্রীকে হুমকির ঘটনায় পুলিশ জঙ্গিবাদের সংশ্লিষ্টতার কথা বলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক সায়িদ আব্দুল্লাহ আল মাজিদ বলছেন, মসজিদে মানুষজনের যে ধরনের জমায়েত হয়, বিশেষ করে শুক্রবার তাদের সেখানে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়ে মসজিদ জঙ্গিবাদ রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
তার মতে শুধু মসজিদ নয় এই কার্যক্রম হওয়া উচিত মাদ্রাসা-ভিত্তিকও। তবে কাছাকাছি সময়ে পুলিশ জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সম্পৃক্ততার জন্য যাদের আটক করেছে তার বেশির ভাগই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র।
এই বিষয়টিতে মাজিদের মন্তব্য: ‘তারা তাদের ভোল পাল্টেছে। কারণ, ইসলামের পোশাকে জঙ্গি কার্যক্রম সাধারণ মানুষ পছন্দ করে না।’ বাংলাদেশে পুলিশ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্তরা ইদানীং তাদের কৌশল পরিবর্তন করছে এবং পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকার জন্য ছোট দলে কাজ করছে।
বাংলাদেশে ডিসেম্বরের শেষের দিকে পর পর দুটি অভিযানে পুলিশ চট্টগ্রামের হাটহাজারী এবং ঢাকার মিরপুরে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি স্নাইপার রাইফেল ও সেনাবাহিনীর পোশাক উদ্ধার করে। মিরপুরে উদ্ধার করা হয় গ্রেনেড, বিপুল পরিমাণ বোমা, বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও সুইসাইড ভেস্ট। সেখানে বোমা ও গ্রেনেড বানানোর একজন প্রশিক্ষকও ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইন ও সালিশ কেন্দ্রের জঙ্গিবাদ বিশেষজ্ঞ নুর খান লিটন বলেন, জঙ্গিবাদ রোধে শুধু মসজিদ-ভিত্তিক কার্যক্রম নিয়ে এগুনো সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।
তার মতে, ‘পুলিশ বা প্রশাসনকে যুক্ত করার আগে রাজনীতিবিদরা যদি ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে কাজ করতেন তাহলে ফল হতো। কারণ পুলিশকে ব্যবহার করলে মুসল্লিদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। জঙ্গিবাদ শুধু মসজিদকেন্দ্রিক বা নির্দিষ্ট কোনো বলয়ে সীমাবদ্ধ নয়। এটি সমাজের সব জায়গায় বিস্তৃত। তাই সমাজের সর্বস্তরেই প্রচারণা দরকার। শুধু মসজিদে কাজ করার মানে সমাজের একটি অংশকে আলাদা করে দেখা। তাতে এক ধরনের বৈষম্য তৈরি হতে পারে।’ -বিবিসি
১১ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি