সোমবার, ২৩ আগস্ট, ২০২১, ০৭:২৯:৩৭

প্রতিদিন সকালে দেখবেন মা, বিকেলে বাবা, দুই সন্তান নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশ

প্রতিদিন সকালে দেখবেন মা, বিকেলে বাবা, দুই সন্তান নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশ

জাপানী মা ও বাংলাদেশী পিতার সেই দুই কন্যা সন্তানকে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তেজগাঁওয়ে ভি'কটি'ম সাপোর্ট সেন্টারে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেখানে ওই দুই শিশুর জন্য উন্নত পরিবেশের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত মা এবং বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পিতা কন্যা শিশু দুটির সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন বলে আদেশে বলা হয়েছে।

বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দিয়েছেন। আগামী ৩১ আগস্ট শিশু দুটিকে হাইকোর্টে হাজির করার নির্দেশনা থাকলেও রবিবার রাতে পিতার হেফাজত থেকে উদ্ধার করে ভি'কটি'ম সাপোর্ট সেন্টারে নেওয়ায় পিতার করা আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন আদালত। 

শিশু দুটির পিতার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ ও কাজী মারুফুল ইসলাম। মায়ের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির ও সাদ্দাম হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

এদিকে আদালতের বাইরে উভয়পক্ষের আইনজীবীকে বিষয়টির সন্তোষজনক সমাধানের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে আদালত বলেছেন, নাবালক বাচ্চাদের কল্যাণের কথা চিন্তা করে আপনারা ৩১ আগস্টের মধ্যে একটি সন্তোষজনক সমাধান করবেন বলে আশা করবো। আদালত বলেন, আপনারা ইচ্ছা করলে অনেক দুর যেতে পারবেন, দেশী-বিদেশী অনেক আইন ও নজির উপস্থাপন করতে পারবেন। 

তবে আমাদের চিন্তা একটাই, তা হলো বাচ্চাদের কথা। এখানে বাচ্চারাই সবচেয়ে বড় ভূক্তভোগী। আদালত বলেন, গ্রামে একটি কথা প্রচলন আছে, তাহলো পাটা-পুতার ঘষাঘষি। মরিচের জীবন শেষ। এখানে বাচ্চা দুটির অবস্থাও তাই।

এর আগে সকালে দুই শিশুকে সিআইডির হেফাজতে নেওয়ার কথা আদালতের নজরে আনেন পিতার আইনজীবী ফাওজিয়া করিম। এরপর দুপুরে বাচ্চা দুটিকে পিতার হেফাজতে দিতে আদালতের নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেন তিনি। এ আবেদনের ওপর বিকেলে দীর্ঘ শুনানি হয়। শুনানিতে ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বাচ্চা দুটিকে পিতার জিম্মায় তার বাসাতেই রাখার নিবেদন জানান। তিনি বলেন, মা চাইলে সেখানে একজন আইনজীবী বা তত্বাবধায়কের উপস্থিতিতে বাচ্চাদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। তিনি বলেন, ভি'কটিম সাপোর্ট সেন্টার কার্যত ডি'টে'নশন সেন্টার। ওটা শিশুদের জন্য সঠিক স্থান না। প্রয়োজন হলে সমাজ কল্যাণ কর্মকর্তা এ বাসাতেই থাকবেন। তিনি মায়ের পাসপোর্ট আদালতে জমা রাখার নির্দেশনা

চেয়ে আবেদন জানিয়ে বলেন, এই মা শিশু দুটিকে নিয়ে পা'লিয়ে যেতে পারে। তাই তার পাসপোর্ট আদালতের কাছে জমা রাখা দরকার।

এ আবেদনের বিরোধিতা করেন শিশির মনির। তিনি বলেন, শিশুদের জন্ম জাপানে। তারা সেখানেই বড় হয়েছে। সেখানের স্কুলে পড়াশুনা করেছে। তারা জাপানি পরিবেশে বড় হয়েছে। তাই তাদের আপাতত জাপানি দূতাবাসে রাখা যেতে পারে। সেখানে পিতা বাচ্চাদের সঙ্গে দেখা করবেন। তিনি বলেন, এই শিশু দুটি এই জাপানি নারীর গর্ভজাত। সাতসমুদ্দুর তেরো নদী পার হয়ে বাংলাদেশে এসেছে শুধুই সন্তানের টা'নে। মা শিশুদের নিয়ে পালিয়ে যাবে-এমন কথা পুরোপুরি ভুল। প্রয়োজন হলে মায়ের পাসপোর্ট জমা রাখা হোক।

ফাওজিয়া করিম ফিরোজ এর বিরোধিতা করে বলেন, শিশু দুটি বাংলাদেশী। তারা কেন অন্য দেশের দূতাবাসে থাকবে। দূতাবাসে দিলে তারা আমাদের কোনো কথাই শুনবে না।

এসময় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধিনে তৃতীয় কোনো উপযুক্ত স্থানে রাখার প্রস্তাব দেন। তবে এ প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেন ফাওজিয়া করিম।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে